নিজস্ব সংবাদদাতা: দিনভর ব্যাপক বৃষ্টির মধ্যেও লক ডাউনের প্রথম দিনে বাইরে বের হওয়ার উৎসাহে ভাটা পড়েনি মানুষের। বাচ্চার জন্য দুধ কিংবা মায়ের জন্য ওষুধ অথবা অন্য কোনও অজুহাতে বেপরোয়া কিছু মানুষকে বাইরে বের হতে দেখা গেছে জেলার বিভিন্ন জায়গাতে। বৃষ্টি একটু কমলেই বাইক কিংবা স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে অনেকেই ঠিক যেমনটা বিরোধী দল বনধ ডাকলে সেই বনধ মানছে না বোঝাতে কেউ কেউ রাস্তায় নেমে পড়েন। পুলিশের ঘোষনা ছিল, উপযুক্ত কারন ছাড়া কেউ বাইরে বের হলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। তাই লকডাউন ভেঙে বাইরে মানুষের দল পুলিশের কাছে বিশ্বাস যোগ্য মনে হতে পারে এমন কারন সাজানোর চেষ্টা করে গেছে। কোনও টা পুলিশ মেনেছে আবার কোনটা মানেনি কিন্তু পুলিশের সহমর্মিতা আদায় করে নিয়েছে যে যুক্তি তা’হল, “বিশ্বাস করুন, আজই যে লকডাউন মনেই ছিলনা। আমি মনে করেছি ২১ আর ২২তারিখ। এতবার ডেট চেঞ্জ হয়েছে যে সব গুলিয়ে গেছে।” পুলিশের ব্যাটন পিঠে পড়তে গিয়েও পড়লনা এবার। থমকে গেলেন পুলিশ আধিকারিক স্বয়ং!
বৃহস্পতিবার ৪৮ ঘন্টা লকডাউনের প্রথম দিনেই খড়গপুর শহরের গোলবাজারে এমনই ঘটনার স্বাক্ষী রইল পুলিশ। শহরের বিভিন্ন জায়গার মত এদিন গোলবাজার ভাণ্ডারীচকেও মোতায়েন ছিলেন পুলিশ কর্মীরা। বৃষ্টির সময় দোকানের শেডের তলায় আবার বৃষ্টি কমলে রাস্তায় এসে দাঁড়াচ্ছিলেন। লকডাউনের মধ্যেও যে সমস্ত মানুষ রাস্তায় বেরিয়েছিলেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন। যথাযোগ্য কারন না দেখাতে পারলে আটক কিংবা গ্রেপ্তার করা হচ্ছিল। এই সময় রয়েল এনফিল্ড বাইক নিয়ে আসা এক যুবককে আটকায় পুলিশ। ওই যুবক ছোট ট্যাংরা থেকে আসছিল বলে জানায়।
কেন সে লক ডাউনে বাইরে বেরিয়েছে জানতে চাইলে যুবক আকাশ থেকে পড়ে। সে জানায় যে তাঁর ধারনা ছিল ২১ এবং ২২ তারিখ লক ডাউন। পুলিশকে সে জানায় এতবার লকডাউনের ডেট চেঞ্জ হয়েছে যে, সে ভুলেই গেছে আসল তারিখ। পুলিশ তাকে প্রশ্ন করে গতকাল রাস্তায় মাইক প্রচার করে জানিয়েছিল সে শোনেনি? উত্তরে যুবক জানায় তার বাড়ি গলির ভেতরে যেখানে কোনও দিন কোনও প্রচার গাড়ি ঢোকেনা। পুলিশ পাল্টা প্রশ্ন করে বাড়ি থেকে বেরুনোর পর সে দেখেনি যে দোকান পাট বন্ধ রয়েছে? যুবক উত্তর দেয় এমনিতেই এখন কখন দোকান খোলা আর কখন বন্ধ বোঝার উপায় নেই তার ওপর আজ বৃহস্পতিবার, শহরের বেশিরভাগ দোকান পাট বন্ধ থাকে ফলে সে বুঝতে পারেনি।
যুবকটি বিষয়টি নিয়ে খামোকা জল ঘোলা করছে ধরে নিয়েই এক পুলিশ আধিকারিক তার পিঠে লাঠি মারতে যাবেন এমন সময় মরিয়া হয়ে যুবক চেঁচিয়ে উঠে বলে, বিশ্বাস করুন স্যার প্রথম দিকে দিন গুলো মনে রেখেছিলাম কিন্তু ডেট এতবার চেঞ্জ হয়েছে যে আর মনে রাখার চেষ্টাই করিনি। এই তো সেদিন আবার দিন বদলালেন আপনারা। এতবার চেঞ্জ হলে মনে থাকে?” পুলিশের লাঠি পড়ল বটে কিন্তু আস্তে। অতি দ্রুত যুবককে এলাকা ছাড়তে বলে পুলিশ। যুবক ফিরে যায় নিজের বাড়ির দিকে।
ঘটনা হচ্ছে এটাই যে প্রথম দু’দফার ঘোষনায় ২০ এবং ২১শে আগষ্ট রাজ্যে লকডাউন ঘোষনা করা হয়নি। গত ২৮ শে জুলাই নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে আগস্ট মাসে পূর্ণ লকডাউন’এর দিনক্ষণ জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও এই দিনক্ষণ ঠিক করার ক্ষেত্রেও বেশ কয়েকবার বদল আনতে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। রাজ্য সরকারের তরফে প্রথমে আগস্ট মাসের ২, ৫, ৮, ৯, ১৬, ১৭, ২২, ২৩, ২৯, ৩০ তারিখে পূর্ণ লকডাউনের ঘোষণা করা হয়েছিল। যদিও ২২ আগস্ট গণেশ চতুর্থী এবং ৩০ আগস্ট মহরম পড়ায় ঘন্টাখানেক পরেই বিভিন্ন জাতীর ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কথা ভেবে পূর্ব ঘোষিত দিনগুলি বদলে দেওয়া হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয়বার দিনক্ষণ বদল করে ৫, ৮, ১৬, ১৭, ২৩, ২৪ এবং ৩১ তারিখ রাজ্যে পূর্ণ লকডাউনের ঘোষণা করা হয়েছিল।
কিন্তু দিন দুয়েক যেতে না যেতেই নানা পার্বনের কথা উল্লেখ করে ফের বিভিন্ন মহল থেকে লকডাউনের দিন বদলের আবেদন এলে চলতি মাসের প্রথম দিকে তৃতীয়বারের জন্য লকডাউনের দিন বদল করা হয়৷ সে সময় নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলা হয়েছিল, ৫ ও ৮ অগস্ট পূর্ব ঘোষণা মতোই লকডাউন থাকবে। তবে ১৬, ১৭, ২৩, ২৪ তারিখের পরিবর্তে ২০, ২১, ২৭, ২৮ এবং ৩১ তারিখ লকডাউন থাকবে।
কিন্তু এর মধ্যেই ২৮ শে আগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস। অভিযোগ সে কথা মাথায় রেখে গত সপ্তাহে ফের চতুর্থবারের জন্য লকডাউনের দিন বদল করে ২৮ শে আগস্ট লকডাউন বাতিল করা হয়। যদিও রাজ্য সরকার ওই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন টানা সরকারি ছুটি হয়ে যাচ্ছিল বলেই দিনটা বাতিল করা হয়েছে।
এদিন লকডাউন অমান্য করায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মোট ১৮৩ জন কে গ্রেপ্তার করা হয় যার মধ্যে শুধু খড়গপুরেই ৮৫ জন রয়েছেন। খড়গপুর ২০টি বাইক বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।