নিজস্ব সংবাদদাতা: শহরের ভেতরে এখনও থেকে যাওয়া একমাত্র গ্রামীন হাট জমে উঠল পৌষ সংক্রান্তির আগে। বুধবার সংক্রান্তি, মকর পরব। পিঠে পুলি আর টুসুর উৎসব। সেই পিঠে পুলি বানানোর সরঞ্জাম যেমন মাটির হাঁড়ি, সরা, পিঠের ছাঁচ আর টুসু লক্ষী কেনার জন্য উপচে পড়ল ট্যাংরা হাট। খড়গপুর শহরের ১২নম্বর ওয়ার্ড তথা নিমপুরা-আরামবাটি এলাকায় অবস্থিত এই হাটের বয়স প্রায় শত বছর। আদি হাট ছিল খড়গপুর শহরের ২৯নম্বর ওয়ার্ডে ঝুলি লাগোয়া ছোট ট্যংরা এলাকায়। রেল কোম্পানি শহরে মাদ্রাজ গামী রেল লাইন পাতার পর স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় ট্যাংরা নাম নিয়েই হাট উঠে গেল আরামবাটি এলাকায়।
সেই থেকে চলে আসছে হাট। সপ্তাহে ২দিন, বৃহস্পতি আর রবিবার। তবে রবিবারের হাটই জমজমাট। এক সময় গরুর হাট বসত এই হাটের মধ্যেই। আশে পাশের ৫০-৬০ কিলোমিটার জুড়ে চাষিরা আসতেন গরু কেনাবেচা করতে। প্রায় এক যুগ হল গরুর চলে গেছে ৬নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ফলে হাটের গরিমা কিছুটা কমেছে কিন্তু ভিড় কমেনি। বিশেষ করে অঘ্রান-পৌষে ধান কাটার পর পরই জমে ওঠে হাট।
ফি সপ্তাহে শীতের সবজি আসে মানিকপাড়া, খালশিউলি, বড়কলা থেকে। মনোহরি থেকে কাটা কাপড়ের দোকান, হাঁস মুরগি ফলফুলের চারা বীজ কী পাওয়া যায়না এই হাটে? গুড়ের গেঁজা তোলা মিষ্টি, কুরকুটের ডিম, মাছ ধরার সরঞ্জাম, বাঁশ আর বেতের ধামা কুলো ঝুড়ি, চটের বস্তা, টর্চ আর গ্যাস লাইটার সারানো, তলার হারিয়ে যাওয়া চাবি বানিয়ে দেওয়া, আয়ুর্বেদিক জড়িবুটি, লাল হলুদ সবুজ রঙের জলের শরবত, নিম্বু পানি, বুড়ো আঙুলের চাপে খুলে দেওয়া সোডার বোতল, লুপ্তপ্রায় কাঠি আইসক্রিম, চুলের কাঁটা, ফিতে, আলতা আর ঝুটো মোতির গহনার অঢেল সম্ভার।
খড়গপুর শহরের অনেকেই অবশ্য এই হাটের কথা জানেনই না কিন্তু এই হাটের কথা জানে ডিমহুলি, চামরুসাই, খেলাড়, বনপাটনা, বেনাপুর, সাঁকোয়া, বাড়গোকুলপুর, তেমাথানি, সবং কিংবা পশ্চিমের ধারেন্দা, কলাইকুন্ডা, ক্ষেমশুলি, বালিভাষা। ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের মানুষ এখনো সাইকেল চালিয়ে কিংবা পায়ে হেঁটে হাটে আসে। এই মরশুমে পিঠেপুলি কিংবা মকর ছাড়াও হাটের অন্যতম আকর্ষণ হল মোরগলড়াই। ফি রোববার প্রায় আড়াইশো মোরগ আশে এখানকার ধুলাট বা লড়াইয়ের মাঠে। দুই মোরগের লড়াই কে ঘিরে জমজমাট বেটিং বা জুয়ার আসর। হাজার থেকে লক্ষ টাকা ওড়ে মোরগ লড়াইয়ের মাঠে।
হাটে ঢোকার মুখে দক্ষিনে আলাদা করে বসে হাঁড়িয়া আর মহুলের হাট। যাওয়া আসার পথে সুরা রসিকদের ভিড়, হৈ হট্টগোল। সব মিলিয়ে কয়েকটা গ্রাম পড়ে থাকে ট্যাংরার হাটে, শহর থেকে দুরে নয়, শহরের ভেতরে। তবে সব কিছুকেই ছাপিয়ে যায় সংক্রান্তির আগের রবিবার। নতুন শাড়ি কিংবা ফ্রক পরে গৃহবধূ কিংবা কিশোরী, তরুণীরা দল বেঁধে আসেন দূর দুরান্তের গ্রাম থেকে। দিনভর বাজার করার শেষে দর দাম করে টুসু লক্ষীকে মাথায় করে গান করতে করতে গ্রামে ফেরেন। তারপর দিনের হৈ চৈ সাঙ্গ করে রাতে একা পড়ে খড়গপুর শহরের মধ্যে থাকা এই অঞ্চলের একমাত্র হাট।