নিজস্ব সংবাদদাতা: শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিত্ব সহ সমস্ত পদ ছাড়ার কয়েকঘন্টার মধ্যেই নিজের ফেসবুকের ওয়াল ভরিয়ে দিয়েছেন তাঁর আর নিজের ছবিতে। বুঝিয়ে দিয়েছেন সঙ্গে আছি আর ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য,উচ্চ যেথা শির।” তাহলে কি দল ছাড়ছেন? জিজ্ঞাসা করতেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন যেন। বললেন, ‘দল ছাড়ছি কিনা সেটা পরের কথা আগে এই কথাটা শোনো। আমাদের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, চার বছর যার পেছনে ঘুরে কোনও মতে দলে এনেছি, আমি মরণাপন্ন জেনেও বেঁচে আছি না মরে আছি খোঁজ নেয়নি।”
সদ্য কোভিড আক্রমন প্রতিহত করে ফিরে আসা খড়্গপুরের ৭২বছরের প্রবীণ তৃনমূল নেতা জহরলাল পাল এভাবেই ভেতরে জমে থাকা ক্ষোভ উগরে দিলেন শুভেন্দুর মন্ত্রী সহ সমস্ত সরকারি পদ থেকে অবসর নেওয়ার ৬ ঘন্টার মধ্যে। বললেন, “১৯৯৭ থেকে মমতা ব্যানার্জীর সাথে আর ১৯৯৮ থেকে তৃণমূলে। আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে সিপিএম, রক্তাক্ত হয়েছে আমার ছেলে। খড়গপুরের আর কোনও নেতার পরিবারে রক্ত ঝরেনি। আর সেদিন যারা দলে এসেছে তারা বলে বিধায়ক না হলে পরিবারের কাছে কী জবাব দেব? শুধু আমাকে পুরসভার চেয়ারম্যান থেকে আটকানোর জন্য অন্য প্রার্থী দিয়ে পুরবোর্ড হাতছাড়া করে।”
ক্ষুব্ধ এই নেতা বলেন, ” আমি দলের একনিষ্ট হিসাবে অপেক্ষা করি দল ব্যবস্থা নেবে কিন্তু দল ব্যবস্থা নেয়না। উপ নির্বাচনে কে প্রার্থী হবে? সবাই নিজের নামই প্রস্তাব করে কিন্তু আমি প্রদীপ সরকারের নাম প্রস্তাব করি। তার ইলেকশন এজেন্ট হিসাবে কাজ করি, জিতিয়ে আনতে লড়াই করি। এর আগের বার রমাপ্রসাদ তেওয়ারিকে প্রার্থী করেন মমতা। খড়গপুরের নেতারা তাঁকে মেনে নেয়না। তাঁকে পার্টি অফিসে ঢুকতে দেয়না, তাঁর জামা ছিঁড়ে দেয়। শুধু দল বলেছে তাই আমি লড়ে যাই, আমার ছেলে লড়ে যায়না। আমরা বলি দল ঠিক দেখবে কিন্তু দল দেখেনা।”
পাল বলেন “আমি অবিভক্ত জেলায় দল করেছি ৫৪টি ব্লক জুড়ে। জঙ্গলমহল থেকে সর্বত্র দল যেমন বলেছে জি জান দিয়ে খেটেছি আর এখন ৮ নম্বর, ১২নম্বরে আমার নাম। এই সম্মান আমার প্রাপ্য ছিল কী? হ্যাঁ, আমি শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে পোষ্ট করেছি। ওই মানুষটা আমাকে বাঁচিয়েছে, আমার প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে কোভিড আক্রান্ত হওয়ার সময়। তাই বলব শুভেন্দু যা করেছেন ঠিক করেছেন। আমি শুভেন্দু অধিকারীকে সঠিক বলেই মনে করি।”
খড়গপুর পুরসভার এই প্রাক্তন পুরপ্রধান জানিয়েছেন, ‘মমতা ব্যানার্জী তাঁর বইতে তাঁর রাজনৈতিক সহযোগী হিসাবে মেদিনীপুরের যে দুজনের নাম করেছেন তাঁর একজন আমি আর অন্যজন দীনেন রায়। অথচ জেলার প্রধান সহ যাঁরা এই সেদিন দলে এল তাঁরা একটুও সম্মান দেবেননা। দলে কী পেলাম না পেলাম পরের কথা একটু সম্মান পাবনা?’ পাল জানিয়েছেন, এখুনি বলছিনা দল ছাড়ছি কিনা। এতদিন এসব সয়েও দলে আছি। বাকিটা সময় বলবে।’ বলাবাহুল্য বিদ্রোহ শুরু হয়ে গেল খড়গপুর তথা পশ্চিম মেদিনীপুরে। আর সেই বিদ্রোহের মুখে দাঁড়িয়ে তৃনমূল দলটা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই দেখার সময় চলে এল।