নিজস্ব সংবাদদাতা: মঙ্গলবার থেকেই খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে মৃদু সংক্রমন যুক্ত অথবা উপসর্গ হীন করোনা আক্রান্তদের জন্য সেফ হোম খুলে দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। অনেকদিন ধরেই ভাবনাটা ছিল কিন্তু বিভিন্ন কারনে তা কার্যকর করা যাচ্ছিলনা। কিন্তু খড়গপুর জুড়ে যেভাবে সংক্রমন বাড়ছিল তাতে আর কোনোও ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি জেলা। এরপর মঙ্গলবারই পাকাপাকি ভাবে চালু করে দেওয়া হচ্ছে এই সেফ হোম।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে উপসর্গহীন এবং উপসর্গ যুক্ত করোনা রোগিরা একসাথে থাকায় চাপ বাড়ছিল শালবনী হাসপাতালে। ফলে জরুরি ভিত্তিতে ভর্তি করা দরকার এমন রোগিকে পরিষেবা দিতে অসুবিধা হচ্ছিল। সেই জন্য উপসর্গ হীন ও মৃদু উপসর্গ যুক্ত রোগিদের জন্য পৃথক হাসপাতাল দরকার হয়ে পড়ছিল। ইতিমধ্যে মেদিনীপুরের তাঁতিগেড়িয়াতে এবং তার আগে ডেবরাতে দুটি সেফ হোম খোলা হয়ে গেছে। এরপর ঘাটাল ও খড়গপুরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।
মঙ্গলবার সেই খড়গপুর খুলে দেওয়া হবে। ৫০ শয্যার এই সেফ হোমে মহিলা ও পুরুষদের জন্য ২৫টি করে শয্যা থাকছে। অক্সিমিটার, অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকছে। আপাতত ৮ জন চিকিৎসক থাকবেন এই সেফ হোমের রোগিদের দেখাশোনা করার জন্য। মহকুমার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ডেপুটেশনে কাজ করবেন এই চিকিৎসকরা। পর্যাপ্ত নার্সও বরাদ্দ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখার্জী।
জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, “এই ধরনের উপসর্গ হীন রোগিদের আমরা ঘরে থাকতেই পরামর্শ দিচ্ছি কিন্তু ঘরে থাকার পর্যাপ্ত পরিবেশ না থাকলে তাঁদের নিয়ে আসা হবে এই সেফ হোম কে। কিছু কিছু জায়গায় রোগিদের বাড়িতে থাকতেও সমস্যা হয় তাঁদেরও এখানে সরিয়ে আনা হবে। ইতিমধ্যেই ডেবরা কাজ শুরু হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যেই নারায়নগড়েও একটি সেফ হোম খোলা হবে। খড়গপুরে আরও একটি জায়গা দেখে রেখেছি আমরা।”
উল্লেখ্য শুধু মাত্র খড়গপুর শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ২৫০ছাড়িয়েছে যারমধ্যে সক্রিয় করোনা রোগির সংখ্যা প্রায় ৫০জন। এছাড়াও খড়গপুর গ্রামীন, কেশিয়াড়ি, নারায়নগড়, দাঁতনকে, বেলদা, মোহনপুর আপাতত এই সেফ হোমের ওপর নির্ভরশীল। নারায়নগড় চালু হয়ে গেলে চাপ কমবে এই সেফ হোমটির। প্রশাসনের লক্ষ্য ধিরে ধিরে শুধু মাত্র শহরের রোগিদের জন্য সেফ হোমটি নিশ্চিত হয়ে যাক তাহলে সুবিধা হয়। কারন প্রতিদিনই শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
এদিকে ১৫ই আগষ্ট নমুনা সংগ্ৰহ না হওয়ায় ১৬তারিখ কোনও রিপোর্ট ছিলনা খড়গপুরের। ১৭ তারিখের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে গত কয়েকদিনের তুলনায় শহরে সংক্রামিতের সংখ্যা কিছুটা কম। এদিন রেলের কাছ থেকে প্রাপ্ত নমুনা থেকে ৭জনের এবং খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের পাঠানো নমুনা থেকে ৫ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। রেল যোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ৫৯ বছরের কর্মী রয়েছেন যিনি দেবলপুরের বাসিন্দা। কদিন ধরে ইনি খাবারের স্বাদ পাচ্ছিলেন না বলেই জানা গেছে। এছাড়া সুভাসপল্লী এলাকায় আক্রান্ত মা ও ছেলে আক্রান্ত হয়েছেন পরিবারের কর্তা রেলকর্মীর কাছ থেকে। বাকি চারজন রেল কোয়ার্টারের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা যারা পরিবারের কোনো না কোনো আক্রান্তের সংস্পর্ষে এসে নিজেরা আক্রান্ত হয়েছেন।
খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের তালিকায় থাকা ৫জনের মধ্যে ২জন খড়গপুর গ্রামীন ও ডেবরা এলাকার বাসিন্দা। বাকি ৩জনের মধ্যে আক্রান্ত দম্পত্তি দেবলপুর ও অন্য এক যুবকের বাড়ি শ্রীকৃষ্ণপুর এলাকায়। বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই আক্রান্তরা প্রায় উপসর্গহীন। রেল এলাকার বাইরে যে আক্রান্তরা রয়েছেন তাঁদের দিয়েই মঙ্গলবার চিকিৎসা চালু হতে চলেছে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের সেফ হোমের।