নিজস্ব সংবাদদাতা: যেন শ্রীনু নাইডুর ভূত জেগে উঠেছে শহরে! বছরের প্রথম দিনই গুলিবিদ্ধ হয়ে এক যুবকের মৃত্যু দিয়ে শুরু হয়েছিল খড়গপুর শহরের অপরাধের ক্যালেন্ডার যার চূড়ান্ত আরেক রুপ দেখা গেল ২৭শে জুলাই মঙ্গলবার, শহরের সবচেয়ে বড় বাজার গোলবাজারে, গুলি চালিয়ে ব্যাংকের টাকা লুটের চেষ্টায়। গুলিতে দুই নিরাপত্তারক্ষী সামান্য আহত হলেও টাকা লুট করতে পারেনি দুষ্কৃতিরা। কিন্তু একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে গেছে যে খড়গপুর শহরে ফের জাঁকিয়ে বসেছে মাফিয়া রাজ যা উস্কে দিয়েছে ১১বছর আগের ঠিক একই কায়দায় ব্যাঙ্কের টাকা লুটের স্মৃতি।
সেবার কিন্তু সফল হয়েছিল খড়গপুরের প্রয়াত মাফিয়া শ্রীনু নাইডু। সেই প্রথম খড়গপুরে মাঝ রাস্তায় ব্যাঙ্কের টাকা লুটের ‘অপরাধ’ আমদানি! ২০১৭ য়ের গোড়ায় শ্রীনু নাইডু খুন হলেও যে তার সাকরেদরা খড়গপুরের অপরাধের বাজার থেকে সরে যায়নি তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। গতমাসের ২৮ তারিখ (28june) শহরের জিনতালাবে দু’দল অপরাধীর মধ্যে লড়াই ও গুলি চালানোর ঘটনায় রামবাবুর পাশাপাশি শ্রীনুর কাছে হাত পাকানো ছেলেরাও ছিল। প্রশ্ন হল তাদেরই কেউ কেউ কী যুক্ত হয়েছিল মঙ্গলবার সকালে গোলবাজারে ATM মেশিনে টাকা ভরতে যাওয়া গাড়ি লুট করার চেষ্টায়?
২০১০ সালে বিগবাজার থেকে টাকা নিয়ে মালঞ্চর এক্সিস ব্যাঙ্কে যাওয়ার পথে শহরের প্রিন্টিং প্রেস এলাকায় গাড়িতে হামলা চালিয়ে নিখুঁত অপারেশন করে টাকা লুট করে নিয়ে গেছিল অভিযুক্ত শ্রীনুর দলবল। মঙ্গলবার ফের ব্যাঙ্কের টাকা লুট করার চেষ্টা সেই স্মৃতিকেই উসকে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে সেদিনের সেই অপারেশনের কেউ কী যুক্ত ছিল মঙ্গলবার, গোলবাজারের অপারেশনে।
এদিকে এই ঘটনার সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত রয়েছে খড়গপুর শহরের দেবলপুর এলাকার সন্তোষ সোনকার এমনটা মনে করছে পুলিশ । পুলিশের পাক্কা দাবি, সন্তোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই উঠে আসবে মঙ্গলবার গোলবাজারের ঘটনার অনেক কিছুই। সমস্ত দিক নিশ্চিত হওয়ার পরই মাত্র কয়েকঘন্টার মধ্যেই দেবলপুরে হানা দিয়েছিল পুলিশ। যদিও সন্তোষের ভাই সক্রিয় তৃনমুল কর্মী সুনীল ওরফে বাচ্চা ও তার দলবলের কৌশলী বাধায় ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। রীতিমত নিগৃহীত হয়ে ফিরতে হয়েছে পুলিশকে।
খড়গপুর শহরের একাংশ তৃনমুল নেতা দাঁড়িয়েছে সুনীলের বকলমে সন্তোষের পক্ষেই। পুলিশকে তল্লাশির ‘নিয়ম’ শিখিয়েছেন তাঁরা। ঠিক যেমনটা এক সময় শ্রীনু নাইডু তৃনমূলের দোকান খুলে বসেছিল। যদিও ‘সন্তোষকে ধরবই’ প্রতিজ্ঞায় অনড় পুলিশও। মঙ্গলবার ভাইয়ের কৌশলে বাড়ি থেকে সরে পড়তে পারলেও শহর ছাড়তে পারেনি সন্তোষ। অন্ততঃ সেরকমই মনে করছে পুলিশ। খড়গপুর যাতে না ছাড়তে পারে সেভাবেই জাল বিছিয়েছে পুলিশ। আ্যক্টিভ করা হয়েছে সমস্ত সোর্স আর শহরের সমস্ত পয়েন্টকে।
বুধবার শহরের কিছু জায়গায় নাকা করা হয়েছে। বাদ যায়নি গোলবাজারও। নম্বর প্লেট হীন কিংবা কাগজপত্র হীন কয়েকটি বাইক আটক করা হয়েছে। বাইকে করেই এসেছিল অপরাধীরা। শহরের বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। আর পরপর ৪টা গুলি চালানোর দাবির প্রেক্ষিতে প্রাথমিক অনুমান পাতি কান্ট্রিমেড নয়, ইম্প্রোভাইজ এমনকি অটোমেটিক আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করতে পারে দুষ্কৃতিরা।