নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা এক করে দিয়েছে সবাইকে, আমির থেকে ফকির টান টান শুয়ে থাকে খড়গপুর স্টেশনের দক্ষিনপ্রান্তে বোগদা ছাড়িয়ে বন্দুকখানার ফুটপাতে। রেলের সদ্য বানানো কংক্রিট আর গ্রানাইট ঘষা অ্যাডিশনাল এস.পির বাংলো লাগোয়া উঁচু ফুটপাতই এখন ঠিকানা সবার। ঝড়বৃষ্টি হলে সামনের যাত্রী প্রতীক্ষালয়, গুঁজোগুঁজি করে সেখানেই ঠাঁই। নাই নাই করে প্রায় সত্তর থেকে আশি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত জনতা কার্ফ্যু আর তারপরেই প্রথম দফার লকডাউনে থমকে যাওয়া ট্রেন থেকে নেমে পড়ে আটকে যেতে হয়েছিল ওঁদের। কেউ কটক, কেউ আরও দক্ষিনে কেউবা আবার রায়পুর ছত্তিশগড় যাওয়ার পথে আটকে পড়েছিলেন। লকডাউন বেড়েছে আরেকদফা তাই বাড়ি ফেরা হয়নি। দিনের বেলা সংখ্যাটা আরও বেড়ে যায়, ভবঘুরে, ভিখিরি এমন কি খিদের জ্বালায় মানসিক ভারসাম্যহীনেরও চোখ থাকে খাবারের দিকে। তাই তারাও জুটে যায়। সংখ্যাটা তখন ২০০ছুঁই ছুঁই।
ঠিকানাটা এখন অনেকেরই জানা। আরপিএফ কিংবা রেলপুলিশ, স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন, ক্লাব কেউ না কেউ প্রতিদিনই দিনের খাবার আর রাতের মুড়ি জোগান দিয়ে যায়। প্রশাসনেরও নজরে আছে জায়গাটা। যাঁরা সাহায্য করতে চান, প্রশাসনকে জানান, প্রশাসন তারই কাউকে না কাউকে বরাদ্দ করে এখানে। ভাত, ডাল, আলু সয়াবিন, সবজি যার যেমন ক্ষমতা। শনিবার সেই প্রশাসন মারফৎই খবর পেয়ে এঁদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলেন খড়গপুরের ব্যবসায়ী উজ্জ্বল সেনগুপ্ত। ভাত, ডাল, সবজি তো ছিলই সংগে ডিমের কষা। ক্যাটারার দিয়ে রান্না করিয়ে উজ্জ্বল, তাঁর প্রধান সহায়ক বুবুন মুখার্জী ও তাঁদের সহকারীরা খাবার পরিবেশন করেন প্রায় ২০০ জনকে। ডিমের ঝোলে মুখের স্বাদ বদলে খুশি সব্বাই।
উজ্জ্বল অবশ্য এই প্রথম নয়, লকডাউন হওয়ার পর থেকেই নানা ভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন মানু্ষের পাশে দাঁড়ানোর। আর তাঁর উদ্যোগ নেওয়ার ধরনও আলাদা। নিজে ইন্দা এলাকায় থাকেন যার আশেপাশে অনেকগুলি ওয়ার্ড। প্রতিটি ওয়ার্ডের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও দলমত নির্বিশেষে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক কর্মীদের নিজ নিজ এলাকার জন্য কুপন দিয়ে দিয়েছেন ৫০ থেকে ১০০টি করে। তাঁরা নিজেদের এলাকায় প্রয়োজন অনুসারে দুঃস্থ পরিবার গুলিকে সেই কুপন বিলি করেছেন। তারপর সেই কুপন নিয়ে তাঁদের হাতে ৫কেজি চাল, ৫০০গ্রাম ডাল, ২কেজি আলু, পেঁয়াজ, তেল, সাবান, নুন ইত্যাদি তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৮০০টি দুঃস্থ পরিবারকে এভাবেই সাহায্য করেছেন উজ্জ্বল সেনগুপ্ত। পাশে পেয়েছেন সহধর্মিনী চৈতালীকে। লকডাউন কবে কাটবে কেউ জানেনা, কতদিন লাগবে সব কিছু স্বাভাবিক হতে। ততদিন উজ্জ্বল চৈতালিদের ভরসায় এই শহরের দুঃস্থ অথবা বিপর্যস্ত পরিবারগুলি।