নিজস্ব সংবাদদাতা: ফের শিরোনামে সিপিএম, শিরোনামে রেড ভলেন্টিয়ার দল। করোনা আতঙ্কে গ্রামের শ্মশান না মেলায় গ্রামের বৃদ্ধের দেহ সৎকারের জন্য নিজের জমি দিলেন এক সিপিএম সদস্য আর দেহ পোড়াতে গ্রামবাসীরা নারাজ হওয়ায় সৎকারের কাজে এগিয়ে এলেন রেড ভলেন্টিয়ার সদস্যরাই এগিয়ে এলেন সৎকারের কাজে। ঘটনাটি ঘটেছে খড়গপুর শহর লাগোয়া গোপালী গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন খড়গপুর গ্রামীন থানার অন্তর্গত পশ্চিম পাথরি গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে মৃত বৃদ্ধের নাম হরিপদ চৌধুরী। ৮১ বছরের ওই বৃদ্ধ জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল তাঁর। এরপর সোমবার মৃত্যু হয় তাঁর।
হরিপদ চৌধুরী পশ্চিম পাথরি গ্রামে মেয়ের বাড়িতেই থাকতেন। কয়েকবছর আগে মৃত্যু হয় মেয়ের। মেয়ের মৃত্যুর পর নাতি কৃষ্ণ চৌধুরী ও নাতবৌ দেখাশুনা করত তাঁর। খুবই অনটনে চলে সংসার। কৃষ্ণ দিনমজুরি করেই সংসার চালান কিন্তু লকডাউনের বাজারে সেই কাজও বন্ধ হওয়ায় পরিস্থিতি সঙ্গীন। হরিপদ বাবুর বয়স্কজনিত সমস্যাতো ছিলই তার সঙ্গে যুক্ত হয় জ্বর। কয়েকদিন ধরেই জ্বর ছিল, দোকানে বলে ওষুধ কিনে নিয়ে এসে দিচ্ছিল কৃষ্ণ। তার মধ্যেই মৃত্যু হয় হরিপদবাবুর। দাদুর মৃত্যুর পরই গ্রামবাসীদের জানান কৃষ্ণ। কিন্তু কয়েকদিন জ্বরে ভুগছিলেন বৃদ্ধ। তাঁর করোনা পরীক্ষা হয়নি তাই গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয় তাঁর করোনায় মৃত্যু হয়েছে। তাই গ্রামবাসীরা সৎকার করতে রাজি হননি।
পরিবারের বক্তব্য কয়েকজন গ্রামবাসী এও জানিয়ে দেয় যে, যেহেতু বৃদ্ধের জ্বর নিয়ে মৃত্যু হয়েছে তাই তাঁর করোনাও হয়ে থাকতে পারে তাই গ্রামের শ্মশানেও তাঁর মৃতদেহ দাহ করা যাবেনা। বাড়িতে মৃতদেহ নিয়ে অত্যান্তরে পড়েন কৃষ্ণ। এরপরে তিনি বিষয়টা জানান স্থানীয় সিপিএম নেতাদের। সিপিএমের গোপালী এরিয়া কমিটি তাঁদের রেড ভলেন্টিয়ারদের দায়িত্ব দেন মৃতদেহ সৎকারের জন্য। রেড ভলেন্টিয়ারের সদস্য উত্তম নাগ, প্রতীক সরকার, নগেন্দ্রনাথ মান্না, শুভম রায়, আশিষ বাগরা প্রমুখরা এগিয়ে আসেন হরিপদ চৌধুরীর দেহ সৎকারের জন্য। কিন্তু সমস্যা দাঁড়ায় মৃতদেহ সৎকার করা হবে কোথায় তাই নিয়ে।
একদিকে যেমন গ্রাম্য শ্মশান ব্যবহারে বাধা অন্যদিকে তেমন গরিব কৃষ্ণর নিজের কোনও জমি নেই। এই অবস্থায় ফের এক সমস্যার উদ্ভব হয়। এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন স্থানীয় এক সিপিএম সদস্য সান্টু রঞ্জন দে। জঙ্গল ঘেরা গ্রাম পশ্চিম পাথরি। মাঝে মধ্যে উঁচু হয়ে থাকা ডাহি জমি। সেরকমই কিছুটা জমির মালিক শান্তিবাবু। শান্তিবাবু সেই জমির অংশেই হরিপদ চৌধুরীর মৃতদেহ দাহ করার অনুমতি দেন। পরমাত্মীয়র মতই বৃদ্ধের দেহ বাড়ি থেকে চৌদোলায় কাঁধে বয়ে শান্তিবাবুর জমিতে এনে পোড়ানো হয়। গোপালী রেড ভলেন্টিয়ার সদস্য উত্তম নাগ জানিয়েছেন, ‘দেখুন বিষয়টি কাউকে দোষারোপ করার নয়। ওনার যেহেতু করোনা পরীক্ষা হয়নি তাই সন্দেহ কারও হতেই পারে। কিন্তু গ্রামের মানুষ পোড়ানোর কাঠ কেটে দিয়েছেন। তাঁরা পোড়াতে না হাত লাগলেও সাহায্য করেছেন। আমরা যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করে পিপিই কিটস পরেই ওনার দেহ দাহ করেছি। আমাদের চেয়েও বড় ভূমিকা শান্তি বাবুর যিনি তাঁর জমি দিয়েছেন পোড়ানোর জন্য।”
কৃষ্ণ জানিয়েছেন, “একটা সঙ্কটই বোধহয় জানিয়ে দেয় কে আসল বন্ধু। আমার দাদুর সৎকার করে রেড ভলেন্টিয়াররা আমাদের আত্মীয় হয়ে গেলেন সারাজীবনের জন্য। এই করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনে ওঁরা মানুষের হয়ে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন কিন্তু মৃত্যুর পরেও যে ওঁরা সেই কাজ করবেন ভাবতেই পারিনি। ওনারা না থাকলে আমার দাদু মৃতের সম্মান নিয়ে সদগতি প্রাপ্ত হতে পারতেন না। না, আমি ওঁদের ধন্যবাদ বা নমস্কার জানাবোনা,জানাবো লালসেলাম। বিশ্বাস করুন এই প্রথম আমি আন্তরিক ভাবে লালসেলাম শব্দের অর্থ জানলাম।”