নিজস্ব সংবাদদাতা: সময়টা সময়ে থাকলে কারুরই বাড়ি থাকার নয়। খড়গপুর পৌরসভার ২৩নম্বর ওয়ার্ডের ইন্দা এলাকার বাসিন্দা সাধন চন্দ্র গুড়িয়াকে দৌড়াতে হয় সরকারি কাজে। পাঁশকুড়া কলেজের আংশিক সময়ের অধ্যাপিকা সোমা ঘোড়াই গুড়িয়া, দিন কেটে যায় খড়গপুর-পাঁশকুড়া করতেই আর মেয়ে সৌপ্তিকা থাকেন ব্যাঙ্গালুরুতে, চারুকলা নিয়ে পড়াশুনা। লকডাউন কাছে এনে দিয়েছে সবাইকে, এখন অন্তত অবসর কিন্তু অবসরটাকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিলেন সৌপ্তিকাই। মায়ের কাছে আবদার করলেন মাস্ক বানিয়ে দেওয়া হবে তাঁদের যাঁদের মাস্ক কেনার ক্ষমতা নেই।
সোমা জানালেন, ” মেয়ের ভাবনাতেই ভাবা। একসময় নিজের হাতে নিজেদের পরার মত জামা কাপড় বানানোর সখ ছিল তাই বাড়িতে একটা সেলাই মেশিন ছিল। কাজে লেগে গেল সেটা। কাপড়ের অভাবও হলনা। স্বামী সরকারের যে দপ্তরে কাজ করেন সেখান থেকে বছরে কয়েকবার জামা কাপড় মেলে। কিছু ব্যবহার হয় কিছু থেকে যায়। সেগুলিকেই কাজে লাগানো গেল আর ডিজাইনটা করে দিল মেয়েই। সব মিলিয়ে শ খানেক বানিয়ে ফেলা গেছে।” সাদা ধবধবে কাপড়ের মাস্ক গুলো নজর কাড়বে সবারই। সাদা করার কারন যাতে খুব সহজেই চিহ্নিত করে ফেলা যায় ময়লা। সব মিলিয়ে পুরো ভাবনাতেই স্বাস্থ্য সচেনতার মুন্সিয়ানা ধরা পড়েছে।
বানানো তো হল কিন্তু দেওয়া হবে কাদের? সাধন চন্দ্র বললেন, ” প্রথম থেকেই লক্ষ্য ছিল যাঁদের কেনার ক্ষমতা নেই তাঁদেরই দেওয়া হবে এই মাস্ক। কিন্তু অত মানুষ কোথায় পাব? দায়িত্ব নিলেন আমাদের কাউন্সিলর শ্রীমতি অপর্না ঘোষ। তাঁর উদ্যোগেই মাস্ক গুলো বিলি হয়েছে ইন্দা বাজারে মানে বর্তমান ইন্দা বয়েজ স্কুলের মাঠে যাঁরা সবজি মাছ ইত্যাদি বিক্রি করেন, যে সমস্ত পরিচারিকা এখনও মানু্ষের বাড়িতে কাজ করছেন এরকমই মানুষদের।আমরা খুব খুশি এমন কাজ করতে পেরে। অপর্না ম্যাডাম আমাদের স্বপ্নটাকে বাস্তবায়িত করেছেন। ” কাউন্সিলর অপর্না ঘোষ জানালেন, ” ভাবনাটাই অন্যরকম তাইনা ? আমরা সবাই তো ঘরেই আছি। অনেকেই বসে আছি কিন্তু এভাবে ভাবছি কই? না , আমার কোনও কৃতিত্ব নেই এখানে। আমি ওঁদের বানানো মাস্ক কিছু দুঃস্থ মানু্ষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি মাত্র।”
সৌপ্তিকা জানালেন, ”সময়টা ক্রুশিয়াল। আইসিএমআর, হু বলছে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। কিন্তু সবাই মাস্ক পাবেন কী করে ? আমরা সব দায় সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে ঘরে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে যাব ? নাকি নিজেরাও কিছু করব? তাই এমনটা ভাবলাম। যদি এরকমই আরও কয়েকজন মিলে করি তাহলে অনেক সমস্যাই মিটে যায় তাইনা ?”
এমন অভাবনীয় ভাবনা খুশি করেছে ইন্দার বাসিন্দাদের। স্থানীয় গৃহবধূ কেকা সাহা জানালেন, ” গুড়িয়া পরিবার শুধু দুঃস্থদের সহায়তা করেননি , স্বস্তি দিয়েছেন এই বাজারে বাজার করতে আসেন এমন শতশত পরিবারকেও। কারন বিক্রেতারা মাস্ক ব্যবহার না করলে আমরা যারা বাজার করি আমাদেরও সংক্রমনের ভয়টা থেকেই যায়। সবার বাড়িতেই শিশু কিংবা বয়স্ক মানুষ রয়েছেন। এদিকে বাধ্য হয়ে বাজারেও যেতে হচ্ছে। ক্রেতা আর বিক্রেতা দুপক্ষই মাস্ক পরায় নিরাপদ দুজনই। এখন নিশ্চিন্তে বাজার করছি সবাই। শুধু বাড়িতে এসে হাত ধুয়ে ফেললেই হল। ”