নিজস্ব সংবাদদাতা: দু’পক্ষের মধ্যেই সাজ সাজ ভাবটা ছিল যা শেষ অবধি রণক্ষেত্র হয়ে ফেটেই পড়ল খড়গপুর শহরের তালবাগিচা রথতলা এলাকায়। টানা প্রায় ২ঘন্টার ক্লাইম্যাক্স শেষে এখান থেকেই গ্রেপ্তার হলেন ৩০জন। ব্যাপক সংঘর্ষের আবহে পুলিশের বিরুদ্ধে বেধড়ক লাঠি চালানোর অভিযোগ উঠল এখানে অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে লাঠি চার্জের কথা অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করা হল যে স্থানীয় মানুষের একটি অংশ ইট পাটকেল ছুঁড়েছে পুলিশের ওপর যার পরিনততে খড়গপুর এসডিপিও সহ দুই পুলিশ আধিকারিক চোট পেয়েছেন। অন্যদিকে বিজেপির পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হল যে পুলিশ বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে নির্বিচারে মারধর করেছে, বাদ পড়েনি মহিলারাও।
বুধবার অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষ্যে ভূমি পূজন অনুষ্ঠানের আঁচ এভাবেই পড়ল খড়গপুর শহরে। এদিন গোটা শহর জুড়ে পুলিশ তৎপর হয়ে উঠেছিল লকডাউন বলবৎ করার জন্য যদিও বড় দুটি ঘটনা ঘটেছে মালঞ্চ প্রজাপতি ঘর সংলগ্ন সঙ্কট মোচন হনুমান মন্দির ও তালবাগিচা রথতলার জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন হনুমান মন্দিরে। এদিন সঙ্কট মোচন মন্দিরে পুজো করতে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতা অভিষেক আগরওয়াল। তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মীও ছিলেন। পুলিশের দাবি অনুযায়ী অভিষেককে বাইরে আসতে বলা হলেও অভিষেক বাইরে আসেননি। এরপরই এসডিপিও নিজে জুতো খুলে মন্দিরে প্রবেশ করেন এবং অভিষেক সহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের বাসে তুলে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অভিষেকের বক্তব্য, ‘আমি হনুমান চল্লিশা পাঠ করছিলাম। পুলিশ মন্দিরের ভেতর থেকে আমাকে গ্রেপ্তার করে।’
দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে বড় ঘটনা রথতলায়। এখানকার হনুমান মন্দিরে পুজা করছিলেন বেশ কয়েকজন। পুলিশ এখানেও মন্দিরের ভেতরে ঢুকে কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করে বাসে তুলে নিয়ে আসে। পুলিশের বক্তব্য অভিযুক্তদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে মূল গাড়ি বেরিয়ে গেছিল। এই সময় সি.আই খড়গপুর ও আরও এক পুলিশ আধিকারিকের গাড়ি ঘটনাস্থলে থেকে যায়। তাঁদের গাড়ি আটকে দেয় কিছু বিজেপি নেতা ও স্থানীয় মানুষের একাংশ। তাঁরা দাবি করতে থাকেন গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের না ছাড়লে তারাও অফিসারদের গাড়ি ছাড়বেন না। কয়েকশ জনতা ঘিরে ধরে পুলিশের দুটি গাড়িকে। অনেকেই বসে পড়ে গাড়ির সামনে। এসডিপিও খড়গপুর সুকোমল কান্তি দাস জানান, ‘আধিকারিকদের গাড়ি আটকে রেখেছে খবর পেয়ে ফের ফিরে যাই আমি। গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যখন গাড়ি থেকে নামছিলাম তখনই ইট ছুটে আসে আমাদের লক্ষ্য করে। আমি এবং আমার এক সহকর্মী আহত হই। এরপরেও আলোচনার চেষ্টা চালিয়েছি কিন্তু তারপরেও জনতা কথা না শোনায় আধিকারিকদের মুক্ত করতে মৃদু বল প্রয়োগ করতে হয়েছে আমাদের।’
জানা গেছে মহিলার সংখ্যা বেশি থাকায় পুলিশকে প্রথমে একটু বিপাকে পড়তে হয়। এরপরই খড়গপুর কন্ট্রোল থেকে অতিরিক্ত মহিলা বাহিনী চেয়ে পাঠানো হয়। সেই বাহিনী গিয়ে পৌঁছানোর পরই লাঠি চার্জ শুরু করে পুলিশ। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে উদ্ধার করা হয় আটকে পড়া আধিকারিকদের। বিজেপি নেতা তুষার মুখার্জী অভিযোগ করেছেন বাড়ি বাড়ি ঢুকে মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে পিটিয়েছে পুলিশ। যদিও লাঠি চালানোর কথা অস্বীকার করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ।
বুধবার সারা জেলা জুড়েই পুলিশ সক্রিয় থাকলেও নজির বিহীন ভাবেই খড়গপুরে পুলিশের সক্রিয়তা সব চেয়ে বেশি নজরে পড়েছে। লকডাউন ভাঙা ও অন্যান্য কারনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৫৮ জন আর শুধু খড়গপুরেই গ্রেপ্তার ১১০! যার মধ্যে আবার খড়গপুর টাউন থানাতেই ৮০ জন।
মঙ্গলবার পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারংবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে কোনও অবস্থাতেই বুধবার কোথাও কোনও জমায়েত করতে দেওয়া হবেনা। অন্যদিকে বিজেপির পক্ষে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল সর্বশক্তি দিয়ে রাম এবং হনুমান মন্দিরে পূজা করবেন তাঁরা। মঙ্গলবার পুলিশের পক্ষ থেকে খড়গপুর শহরের সমস্ত মন্দির কমিটিকে অনুরোধ জানানো হয় সংগঠিত ভাবে যেন কোনও পুজার আয়োজন না করা হয়। অন্যদিকে বিজেপির হুঁশিয়ারি ছিল পূজা তারা করবেনই। চাপান উতোর এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে রাতেই রামমন্দির কর্তৃপক্ষর অধিকাংশই ইস্তফা দিয়ে বসেন।
৫ আগস্ট পুলিশ আর বিজেপির এই দড়ি টানাটানিতে নিশ্চিত ভাবেই বিপদে পড়েছে তৃনমূল কারন পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ডিভিডেন্ড হয়ে জমা হয়েছে বিজেপির ঘরেই। বিজেপির রাজ্য সাধারন সম্পদক তুষার মুখার্জী বলেছেন, আমরা এতদিন পুলিশকে সহায়তাই করে এসেছি। আমাদের অবরোধ ধরনা ইত্যাদি কর্মসূচি থাকলে পুলিশ ১০মিনিট অবরোধ করতে বললে আমরা তাই করেছি কিন্ত আজ যখন পুলিশ দায়িত্ব নিয়েছে তৃণমূলের এজেন্ডা মেনে রামের পুজা না হতে দেওয়ার তখন আমাদেরও দায় থাকলনা পুলিশকে সহযোগিতা করার। আমরা এবার রাস্তায় নামছি, দেখি পুলিশ কতজনকে গ্রেপ্তার করতে পারে।” মুখার্জী জানিয়েছেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পরামর্শের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা। তারপরই খড়গপুরে আলাদা করে রাস্তায় নামবে দল।
অন্যদিকে শহরের বিধায়ক প্রদীপ সরকার মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন বিজেপি যদি মন্দিরে পুজা করতে যায় তাহলে তিনিও রাম বন্দনায় অংশ নেবেন কোনও মন্দিরে গিয়ে। যদিও এদিন কোথাও পুজা দেখা যায়নি তাঁকে।