নিজস্ব সংবাদদাতা: পরিশেষে গ্রেপ্তার করা হল খড়গপুর গ্রামীন থানার অন্তর্গত গোপালী এলাকার রেশন ডিলার সমরেশ ভঞ্জ। সরকারের দেওয়া সাধারণ মানুষের জন্য বরাদ্দ খাদ্য সামগ্রীর পরিবর্তে নিম্নমানের সামগ্রী বন্টনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ভঞ্জকে এমনটাই জানিয়েছে খড়গপুর গ্রামীন থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে নিম্নমানের খাদ্য সামগ্রী বন্টনের অভিযোগে জনবিক্ষোভের মুখে বুধবার থেকেই আত্ম গোপন করেছিলেন ভঞ্জ। এরপরই তাঁকে ধরার জন্য তল্লাশিতে নামে পুলিশ। শুক্রবার নির্দিষ্ট সূত্রে ভঞ্জের অবস্থান জানার পরই হানা দিয়ে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
শনিবার ধৃত রেশন দোকান মালিককে আদালতে হাজির করার পর আরও জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্য উদ্ধারের বিচারকের কাছে নিজেদের হেফাজত প্রার্থনা করে পুলিশ। পুলিশের সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে তিনদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। এরই পাশাপাশি বেআইনি এই কাজের বিরুদ্ধে রেশন দোকান মালিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ দফতর। প্রাথমিক ভাবে তাঁর লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়েছে। আগেই সিল করে দেওয়া হয়েছিল দোকানটি। খড়গপুর মহকুমা খাদ্য ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রক অভিজিৎ বেজ বলেন “আপাতত এই রেশন দোকান মালিকের লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়েছে। তারসাথে বিভাগীয় কিছু প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
এদিকে এই রেশন দোকানের আওতায় থাকা প্রায় ১৪ হাজার গ্ৰাহকেরা যাতে কোনো সমস্যা না হয় রেশন সামগ্ৰী পেতে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে প্রাথমিক ভাবে গোপালী এলাকার চার থেকে পাঁচটি রেশন দোকানে গ্ৰাহকদের বিভক্ত করে দিয়ে রেশন সামগ্ৰী বন্টন ব্যবস্থা করা হবে। আগামী কয়েকদিন মাইক প্রচার করে গ্রাহকদের নির্দিষ্ট রেশন দোকানের নাম জানিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি সিল করে দেওয়া ওই রেশন দোকানের সামনে নামের তালিকা টাঙিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে কারা কোন রেশন দোকানের আওতায় রেশন সংগ্ৰহ করতে পারবেন।
উল্লেখ্য বুধবার, ২রা জুন, গোপালীর ওই রেশন দোকান থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ নিম্নমানের আটা দেওয়া হচ্ছে এই অভিযোগ তুলে উত্তাল হয়ে উঠেছিল এলাকা। ক্ষুব্ধ জনতা ও রেশন গ্রাহকরা গোপালীতে খড়গপুর-কেশিয়াড়ি রাজ্য সড়কে আটা ফেলে দিয়ে তুমুল বিক্ষোভ দেখান। খবর পেয়ে খড়গপুর গ্ৰামীণ থানার পুলিশ ও খাদ্য দফতরের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বিক্ষুব্ধ জনতাকে আশ্বাস দেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার। তারপরই পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে খাদ্য দপ্তর আধিকারিকরা তল্লাশি চালান রেশন দোকান মালিক সমরেশ ভঞ্জ তাঁর গোপালী ও পাশে ঘাঘরা এলাকায় চারটি গুদামে। আর সেখানেই ধরা পড়ে থরে থরে সাজিয়ে রাখা নতুন আটার প্যাকেট। বোঝা যায় খোলা বাজারে পাচার করার উদ্দেশ্যে নিয়েই নতুন আটার বদলে পুরনো মেয়াদ উত্তীর্ণ নিম্নমানের আটা গ্রাহকদের বন্টন করা হচ্ছিল।
সেই দিনই গুদাম চারটিতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আর বুধবার রাতেই খড়গপুর খাদ্য দপ্তরের এক আধিকারিক সমরেশ ভঞ্জের বিরুদ্ধে খড়গপুর গ্রামীন থানায় অভিযোগ দায়ের করে বলেন যে মেয়াদ উত্তীর্ণ নিম্নমানের আটা বন্টন করা ও হিসাব বহির্ভূত রেশন সামগ্ৰী গুদামে বেআইনিভাবে মজুত করার। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই খড়গপুর গ্ৰামীণ থানার পুলিশ একটি মামলা দায়ের করে এবং গ্রেপ্তার করে ভঞ্জ কে।
কয়েকদিন আগেই খড়গপুর শহরের একটি গুদাম থেকে চাল, গম, আটা সহ প্রচুর রেশন সামগ্রী উদ্ধার করে পুলিশ এবং খাদ্য দপ্তর। ২জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। তখুনি খড়গপুর মহকুমা শাসক আজমল হুসেন জানিয়েছিলেন, “এখানেই থেমে থাকবেনা প্রশাসন। কোন পথে কাদের কাছ থেকে সরকারের দেওয়া রেশন সামগ্রী খোলা বাজারে আসছে তার গোড়া অবধি পৌঁছানো হবে। সে ব্যক্তি যতই ক্ষমতাবান হোন না কেন রেহাই পাবেননা।” সমরেশ ভঞ্জের গ্রেপ্তার প্রশাসনের সেই তৎপরতাকেই তুলে ধরল। লকডাউন চলাকালীন রেশন দ্রব্যের কালো বাজারি রুখতে প্রশাসনের এই ভূমিকায় খুশি খড়গপুরের মানুষ।