নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়গপুর শহরের নতুন এলাকায় করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলল এবার। এই প্রথম তালবাগিচার দীনেশ নগর এলাকায় ২ যুবক আক্রান্ত হয়েছেন বলে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। শনিবার জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট মোতাবেক জানা গিয়েছে খড়গপুর পুরসভা এলাকায় মোট ৬ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে যার মধ্যে ২ জনই তালবাগিচা দীনেশ নগর এলাকার যা পুরসভার ৩৩নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে।
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে দীনেশ নগর এলাকায় আক্রান্ত ৩২ ও ২৩ বছরের দুই যুবক সম্পর্কে মামা ভাগ্না। বাড়ি একই পাড়ার মধ্যে কিছুটা দুরত্বে। ৩২ বছরের মামা পেশায় সবজি বিক্রেতা। তালবাগিচা বাজারে সবজি বিক্রি করেন। গোলবাজার থেকে পাইকারি দরে সবজি কিনতেন। গত শনিবার শেষ সবজি কিনে এনেছিলেন। ওই দিন একটি কোল্ড ড্রিংকস খাবার পরই হঠাৎ কাঁপিয়ে জ্বর আসে। এরপর স্থানীয় ওষুধ দোকান থেকে ওষুধ খান , জ্বর ভাল হয়ে যায় একদিনের মধ্যেই। দিদি বাড়িতে যাতায়ত করেছেন এবং ভাগ্নার সঙ্গে মেলামেশাও করেছেন। বুধবার ২৩ বছরের ভাগ্নারও জ্বর আসে। ভাগ্নার কথাতেই ২ জন খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে যান চিকিৎসা করাতে। শনিবার ২জনেরই পজিটিভ আসে। যদিও দুজনের কারুরই এখন জ্বর বা অন্য কোনও সমস্যা নেই। এদের দুজনেরই কেউ বাইরে যাননি। সম্ভবত গোলবাজার থেকেই এক যুবক আক্রান্ত হওয়ার পরই অন্যজন আক্রান্ত হয়েছেন।
উলেখ্য খড়গপুর শহরে প্রথম করোনা আক্রান্ত ধরা পড়েছিল এপ্রিলের মাঝামাঝি। দিল্লি এবং রাজস্থান থেকে নিজেদের বাহিনীর জন্য অস্ত্র আনতে গিয়েছিল আর পি এফ বাহিনীর একটি দল। ১৪এপ্রিল স্পেশাল ট্রেনে ফিরেছিলেন খড়গপুর শহরে। এরপর একে একে খড়গপুরের বিভিন্ন এলাকায় করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলতে শুরু করে। কিছুদিন আগে করোনা সংক্রমনের আওতায় চলে আসে ৩৪নম্বর ওয়ার্ডের হিজলি কো-অপারেটিভ সোসাইটি এলাকা। তারপরেও খড়গপুর শহরের একেবারে প্রান্তিক দক্ষিন এলাকা তালবাগিচা, দীনেশ নগর, রবীন্দ্রপল্লী এলাকায় করোনা অনুপ্রবেশ ঘটেনি। ব্যতিক্রম হল শনিবার। শনিবারের রিপোর্টে দেখা গেল সেখানেও ঢুকে পড়ল করোনা।
শনিবার খড়গপুরের আক্রান্তর তালিকায় থাকা ঝাপেটাপুরের ৫১ বছরের এক মহিলা রয়েছেন। ওই মহিলার স্বামী কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন। স্বামীকে দেখতে গিয়েই তিনি আক্রান্ত হয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
এদিনের তালিকায় নিউ সেটেলমেন্ট এলাকার ৫২ বছরের এক মহিলা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। এই মহিলা টিবি আক্রান্ত হয়ে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিন চার দিন আগে জ্বর আসায় তার নমুনা সংগ্ৰহ করা হয় যা পজিটিভ এসেছে এদিন। এদিনই ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাসপল্লী এলাকায় আরেক ৪৮ বছরের মহিলা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও ওই মহিলার বিস্তারিত তথ্য পুলিশের কাছে এসে পৌঁছায়নি।
আশ্চর্য জনক ভাবেই খড়গপুর শহরের আরও দুজন ব্যক্তির পজিটিভ পাওয়া গেছে দাসপুরে নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে। খড়গপুরের খরিদা মিলন মন্দির এলাকার দুই ব্যক্তি সম্পর্কে ভগ্নিপতি ও শ্যালক। এঁরা এঁদের এক আত্মীয়া যিনি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন ছিলেন তাঁকে তাঁর শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে দিতে দাসপুরে গেছিলেন। ওই গ্রামের বাসিন্দারা মহিলার করোনা পরীক্ষা করাতে বললে তাঁরা মহিলাকে নিয়ে দাসপুর হাসপাতালে যান। সেখানে তিনজনই নমুনা প্রদান করেন। শুক্রবার মহিলার নেগেটিভ আসলেও দুই ব্যক্তির পজিটিভ আসে। দুই ব্যক্তি ওই দিনই খড়গপুর ফিরে এসেছিলেন। মনে করা হচ্ছে খড়গপুরেই আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁরা। কারন এর বাইরে এরা কোথাও যাননি। সম্পর্কে ভগ্নিপতি হন যে ব্যক্তি তিনি একজন সেনা জওয়ান। লকডাউনের আগেই কাশ্মীর থেকে এসে আর ফিরতে পারেননি। সব মিলিয়ে গত ২দিনে খড়গপুরে ৭ জন নতুন আক্রান্ত মিলল আর সব মিলিয়ে ৮ই আগস্ট অবধি শুধু খড়গপুর শহরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৮ জনে।
খড়গপুর শহর বাদ দিয়ে এদিন খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নমুনা দিয়েছিলেন এবং পজিটিভ এসেছেন এমন তিনজনের সন্ধান মিলেছে যাঁর মধ্যে সালুয়ায় ইএফআর সেকেন্ড ব্যাটেলিয়ানের এক জওয়ানের ১ বছরের শিশুকন্যা রয়েছে। করোনা আক্রান্ত ওই জওয়ান বর্তমানে শালবনী করোনা হাসপাতালে ভর্তি। এছাড়াও ওই এলাকারই তেলিখানার এক ৩৫ বছরের মহিলা রয়েছেন। পাশাপাশি টাটা মেটালিকস এলাকায় ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতে আসা ১৪ জন শ্রমিকের করোনা পরীক্ষা হলে পিংলা থানার চকচন্ডী গ্রামের এক ৪৬ বছরের ব্যক্তির করোনা ধরা পড়েছে।