Homeএখন খবরখড়গপুর ছেড়ে ডি.জি যাওয়ার পরই কন্টেনমেন্ট জোন মুক্ত হল বিধায়কের অফিস, শহরে...

খড়গপুর ছেড়ে ডি.জি যাওয়ার পরই কন্টেনমেন্ট জোন মুক্ত হল বিধায়কের অফিস, শহরে করোনা রাজনীতি ফের তুঙ্গে

বিশেষ সংবাদদাতা: কন্টেনমেন্ট জোনে কড়া ভাবে পালন করতে হবে লকডাউনের নিয়মাবলী এমনটাই বৃহস্পতিবার বলে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল শ্রী বীরেন্দ্র। শুক্রবার সেই কড়াকড়ি দেখল শহর। শুক্রবার সকালেই শহরের উত্তর প্রান্তে নিউ টাউন এলাকা পুরোপুরি ঘিরে দিয়েছে পুলিশ। ছোট বড় মিলিয়ে ৫টি ফ্ল্যাট ও কিছু বাড়ি সহ প্রায় ১০০টি পরিবার নিউটাউনে কন্টেনমেন্ট জোনের আওতায় চলে এসেছে। নিয়ম অনুযায়ী আগামী ৭ দিন এই পরিবার গুলি জোনের বাইরে যেতে পারবেননা।

মঙ্গলবার রাতে শহরে একই সাথে ৭ জনের পজিটিভ আসার পর বুধবার রাতে মহকুমা শাসকের নিজের হাতে তৈরি করা খড়গপুর শহরের ১২টি কন্টেনমেন্ট জোন চূড়ান্ত হয়ে যায়। মহকুমা শাসকের তৈরি করা এই জোনের তালিকায় ২০ নম্বর ওয়ার্ড অর্থাৎ ওল্ড সেটেলমেন্ট এলাকাও চলে আসে। এখানেই বিধায়ক প্রদীপ সরকারের দলীয় কার্যালয়। কাছাকাছি রেলের আবাসনে ভাড়া থাকেন একটি পরিবার। বিধায়কের কার্যালয়ের সামনেই ওই পরিবারের কর্তা বিরিয়ানী বিক্রি করেন। কিছুদিন আগেই পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কানপুর গিয়েছিলেন তাঁরা। ফিরে এসে সামান্য অসুবিধা বোধ করায় সোয়াব পরীক্ষা হয় পরিবারের কর্তা ও স্ত্রী কন্যার। মা ও মেয়ের পজিটিভ ফল আসে।

স্বাভাবিক ভাবেই মহকুমা শাসকের তালিকায় চলে এসেছিল ওই এলাকা। পুলিশ গোলবাজার হয়ে গিরিময়দান যাওয়ার ওই রাস্তায় গার্ড রেল ফেলে কন্টেনমেন্ট জোন করে দেয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে শহর ছেড়েছেন ডিজি। রাত কেটেছে। শুক্রবার শহরের নিউটাউন এলাকায় কড়া করে কন্টেনমেন্ট জোন করা হয়েছে। রাস্তা ঘিরে দেওয়া গেটের মুখে বসানো হয়েছে পুলিশ। কষ্ট হলেও মানুষ খুশি হয়েছেন পুলিশের কড়াকড়িতে। জানা গেছে নিউটাউনের ফ্ল্যাটে থাকা এক মহিলা কলকাতায় কেমো থেরাপি নিতে গিয়ে করোনা টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন। ফলে পুলিশ এলাকা ঘিরে দিয়ে কন্টেনমেন্ট জোন করে দিয়েছে।

যদিও বিস্ময় অপেক্ষা করেছে তারপরেই। নিউটাউনে যখন কন্টেনমেন্ট জোনের কড়াকড়ি তখন বিধায়কের অফিস এলাকা কন্টেনমেন্ট জোন থেকে বাদ পড়ে গেছে। রাস্তা থেকে গার্ডরেল সরে গেছে। ডিজি খড়গপুর ছেড়ে যাওয়ার ৮ ঘন্টার মধ্যেই বিধায়কের অফিস এলাকা কন্টেনমেন্ট জোনের বাইরে চলে গেছে। মহকুমা শাসকের দেওয়া তালিকা থেকে ৪টি জোন বাদ পড়ে গেছে। জেলায় গিয়ে তালিকা ফিরে এসেছে ৯টি জোন হয়ে। বিধায়ক তথা প্রাক্তন পুর প্রধান প্রদীপ সরকারের পাশাপাশি, প্রাক্তন উপপ্রধান এবং সদ্য করোনাজয়ী সেক হানিফের বাড়ি লাগোয়া ৪নম্বর ওয়ার্ডের ২টি কন্টেনমেন্ট জোনও বাদ পড়ে যায়।

করোনা নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে এমন অভিযোগ বিরোধীরা করেই ছিলেন। শুক্রবারের ঘটনায় তাই সুর চড়িয়েছেন বিজেপির রাজ্য নেতা তথা খড়গপুর শহরের বাসিন্দা তুষার মুখার্জী। তিনি বলেছেন, “আমরা আগেই বলেছি করোনার মত অতিমারি নিয়ে ছেলেখেলা করছে সরকার। বিধায়ক দলীয় অফিসে বসবেন, তাঁর কর্মীরা সেখানে যাতায়ত করবে তাই কন্টেনমেন্ট জোন তুলে দেওয়া দরকার ছিল। আর বলা বাহুল্য করোনা তো এরাই ছড়াচ্ছেন। এতদিন মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়িয়েছেন তৃনমূল নেতারা এবার অফিস খুলে করোনা ছড়াবেন।”
প্রদীপ সরকার বলেছেন, ” ঘরে বসে বাতেলা বাজি করছে বিজেপি আর আমরা পথে নেমে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এ ছাড়া বিজেপি আর কী করতে পারে।” সুত্রের খবর নিজের দলীয় কার্যালয়কে কন্টেনমেন্ট জোনের বাইরে নিয়ে যাওয়ার একজন অতিরিক্ত জেলাশাসককে অনুরোধ করেছিলেন প্রদীপ। নিয়ম অনুযায়ী আক্রান্তর বাড়ি থেকে অন্ততঃ ১০০মিটার দূরত্ব রাখতেই হবে কন্টেনমেন্ট জোনের পরিসর। ফলে আক্রান্তের বাড়ি থেকে কিছুতেই বাদ দেওয়া যায়না প্রদীপ সরকারের অফিসকে। কন্টেনমেন্ট জোন করতে গেলেই তার আওতায় সরকারের অফিস চলে আসে তাই কন্টেনমেন্ট জোনটাই বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে।

প্রদীপ সরকার বলেছেন, ” কন্টেনমেন্ট জোন প্রশাসন করে, তারাই করেছেন। এখানে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। তারা কি কি করেছেন আমার জানা নেই। প্রশাসন যা ভাল বুঝেছে তাই করেছে। এরমধ্যে কোনও অনুরোধ উপরোধের বালাই নেই।”
খড়গপুর মহকুমা শাসক বৈভব চৌধুরী বলেছেন, “আমাদের তালিকায় এলাকাটা ছিল ঠিকই কিন্তু জেলাই তালিকা চূড়ান্ত করে। তাই ওরা রিভিউ করে যা মনে করেছেন সেই ভাবে তালিকা পরিমার্জিত করেছেন।” বৃহস্পতিবার খড়গপুর মিউনিসিপ্যাল মিটিং হলে পুলিশের পদাধিকারীদের সঙ্গে আলোচনার পর পুলিশের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করে এক অধিকারিকের কাছে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন ,এত ভাল কাজ করছে পুলিশ তবুও করোনা বাড়ছে! সেই আধিকারিক বলেছিলেন, ওই আর কি! এটাই বোধহয় সেই “ওই আর কি।”

এদিকে ঘটনা জানার পর নিউটাউনের বাসিন্দাদের বক্তব্য, এই এলাকার যে মহিলার করোনা পজিটিভ হয়েছেন তিনি কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় প্রথম পরীক্ষায় পজিটিভ হননি। ভর্তি থাকার পর কয়েকদিন পরে দ্বিতীয় পরীক্ষায় পজিটিভ হন। এর অর্থ তিনি কলকাতাতেই পজিটিভ হয়েছেন। তিনি এখনও বাড়ি আসেননি। এরপরও যদি তাঁদের কন্টেনমেন্ট জোনে রাখা হয় তবে
কানপুর থেকে ফিরে এলাকায় ৫দিন ঘোরার পর বিধায়কের অফিসের পাশে থাকা ব্যক্তিরা পজিটিভ হওয়ার পর সেই এলাকা কন্টেনমেন্ট হবেনা কেন? উত্তর একটাই, ওই আর কি!

RELATED ARTICLES

Most Popular