নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজ্যের জল সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মানস ভূইঁয়ার সবুজ সংকেত পেয়েই সক্রিয় হয়ে উঠল পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ। খড়গপুর ও মেদিনীপুর সদর এলাকার কংসাবতী নদীর দুই তীরে বে আইনি বালি খাদানগুলিতে ব্যাপক অভিযান চালালো পুলিশ এবং ভূমি রাজস্ব দপ্তরের কর্তারা। আর সেই অভিযান থেকে একাধিক জেসিপি ও বালি তোলার মেশিন ছাড়াও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ১৬টি বালি বোঝাই ট্রাক্টর ও লরি। ঘটনায় এখনও অবধি ২জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ৯জনকে। পরে গ্রেপ্তারের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে শনিবার সবচেয়ে বৃহত্তম পুলিশ অভিযান হয়েছে খড়গপুর লোকাল বা গ্রামীন থানার অন্তর্গত কংসাবতী বা কাঁসাই নদীর দক্ষিণ প্রান্ত মহেশপুর সংলগ্ন গুমরিয়া পালের চরে। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন স্বয়ং খড়গপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বা SDPO দীপক সরকার। খড়গপুর গ্রামীণ থানার আধিকারিক ও বাহিনী ছাড়াও নিকটবর্তী দুটি ফাঁড়ি থেকেও পুলিশ কর্মীরা এই অভিযানে সামিল হয়েছিলেন। প্রায় একই সময়ে এই অভিযান শুরু করেছিল খড়গপুর গ্রামীন থানা এবং মেদিনীপুর সদর ব্লকের গুড়গুড়িপাল থানা। কাঁসাই নদীর উত্তর তীরবর্তী চাঁদড়া মনিদহ সন্নিহিত এলাকায় অভিযান চালায় গুড়গুড়ি পাল থানার পুলিশ। এখানে নেতৃত্ব দেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অম্লান কুসুম ঘোষ। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘিরে ফেলা হয় খড়গপুর ও গুড়গুড়িপালের অধীন কাঁসাই তীরবর্তী এলাকা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে রীতিমত অঙ্ক কষেই এগিয়েছিল পুলিশ। বেআইনি খাদান সংলগ্ন প্রতিটি রাস্তা ঘিরে ফেলেছিল পুলিশ যাতে কোনও ভাবেই না পালাতে পারে কেউ। অন্যদিকে অভিযান শুরুর আগে পর্যন্ত আধিকারিকরা ছাড়া কাউকেই জানতে দেওয়া হয়নি, ঠিক কী হতে চলেছে এবং কোথায় হতে চলেছে। শুক্রবার রাতেই জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা অভিযানের ছক কষে জানিয়ে দেন সংশ্লিষ্ট থানার আধিকারিকদের। অভিযানের পথেই তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান SDPO, DSP রা। এরপর ভোরেই সাত সকালেই পৌছে ঘিরে ফেলা হয় এলাকা।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মেদিনীপুরের গুড়গুড়িপাল এলাকা থেকে ১টি বালি তোলার মেশিন, একটি জেসিপি ছাড়াও ৭টি বালি বোঝাই ট্রাক্টর ইত্যাদি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২জনকে। অন্যদিকে খড়গপুর গুমরিয়াপাল এলাকা থেকে ১টি বালি তোলার মেশিন ও জেসিপি ছাড়াও ৯টি বালি বোঝাই গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ৯জনকে। এঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখান থেকেও গ্রেপ্তার হবেন একাধিক ব্যক্তি।
উল্লেখ্য জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পরই সবংয়ের বিধায়ক মানস ভূইঁয়া কয়েকদিন আগেই এই বেআইনি বালি কারবার বন্ধ করার জন্য একটি মিটিং করেছিলেন পুলিশ ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর সহ কয়েকজন আধিকারিককে নিয়ে। সেখানেই এই বেআইনি কারবার রুখতে একটি কমিটিও তৈরি করে দেন তিনি। জানিয়ে দেন প্রতি ১৫দিন অন্তর এই কমিটি বসে পর্যালোচনা করবেন যে গত ১৫দিনে বেআইনি বালি উত্তোলন রুখতে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন তাঁরা। মন্ত্রী জানিয়েছিলেন বেআইনি বালি উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনই সরকার প্রচুর রাজস্ব ক্ষতি করছে। সেই কমিটি কাজ শুরু করার ৫দিনের মাথাতেই এই বড়সড় অভিযান হল।