নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তের সংখ্যায় এই প্রথম খড়গপুর শহরকে ছাড়িয়ে গেল মেদিনীপুর শহর। ঠিক এমনটাই হয়েছিল ২০২১ আগস্ট মাসে। সে বছর অনেক পরে করোনা সংক্রমন শুরু হয়েছিল মেদিনীপুর শহরে কিন্তু আগস্ট মাস থেকে সেই সংক্রমন ছাড়িয়ে যায় খড়গপুর সহ অন্য সব জায়গাকেই। ২২ এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুরের দৈনিক সংক্রমন এক লাফে অনেকটা নেমে ১২১ হয়েছিল। এর মধ্যে খড়গপুরে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ জন এবং মেদিনীপুরে ৩৮। আগের দিনই জেলায় মোট আক্রান্ত ২৩৬ জনের মধ্যে ৪৫ জন ছিল খড়গপুর ও ৪৫ জন ছিল মেদিনীপুর শহরের। এদিনের রিপোর্ট মোতাবেক আরটি/পিসিআর ৫৫, আ্যন্টিজেন ৪২ এবং ট্রুনাট ২৪ জনকে পজিটিভ চিহ্নিত করেছে।
মেদিনীপুর শহরের জেলা আদালতের আবাসনের ২বাসিন্দা আক্রান্ত হয়েছেন যাঁদের মধ্যে রয়েছেন ৬৪ বছরের বৃদ্ধ ও ৩২ বছরের মহিলা। মেদিনীপুর হাসপাতালের মহিলা, পুরুষ এবং সারি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ও স্বাস্থ্যকর্মী সহ ৬ জনের দেহে করোনার লক্ষণ পাওয়া গেছে। শহর মানচিত্রে এদিন সর্বাধিক সংক্রমন নজরে এসেছে বিধাননগর এবং শরৎপল্লী থেকে। দু’জায়গাতেই চারজন করে আক্রান্ত। বিধাননগরে একই পরিবারের ৪৫ বছরের পুরুষ এবং ৬৩ ও ২৫ বছরের মহিলা আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে রাঙামাটিতে ২জন, পালবাড়ি, হবিবপুর, স্টেশনরোড, তাঁতিগেড়িয়া, কর্নেলগোলা ও ধর্মাতে ১জন করে। শহরের সুনির্দিষ্ট ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি এমন ১১ জন আক্রান্ত। শহর ঘেঁষে কালগাঙ, শিরোমনি এবং খয়েরউল্লাচকে ১জন করে আক্রান্ত হয়েছেন।
খড়গপুর শহরে রেল কর্মচারী অথবা তাঁদের পরিজন মিলিয়ে ৮ জন আক্রান্ত। শহরের সর্বাধিক সংক্রমনের খবর পাওয়া গেছে ইন্দা এলাকা থেকে। ইন্দা, সারদাপল্লী, বিদ্যসাগরপুর মিলিয়ে আক্রান্ত ৫জন। মথুরাকাটিতে ৩ জন আক্রান্ত, নিমপুরা, হিজলী রেলকোয়ার্টার, প্রেমবাজার, ঝাপেটাপুর এলাকায় ২জন করে আক্রান্ত। মিরপুর সিংপাড়া, মালঞ্চ, তালবাগিচা, বারবেটিয়া, ছোটট্যাংরা, পূর্ব রাজগ্রাম এলাকায় ১জন করে আক্রান্ত। খড়গপুরের ঠিকানায় আরও ৩জন আক্রান্ত।
শহর লাগোয়া গোকুলপুর, সালুয়াতে ১জন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে খড়গপুর শহরে লাগাতার সংক্রমনের মুখে ফের নতুন করে বিএনআর মাঠে সবজি বাজার চালু করেছে পুলিশ। করোনার প্রথম পর্যায়ে বাড়াবাড়ির মুখে গোলবাজার থেকে এই সবজি বাজার তুলে আনা হয়েছিল। পরে ফের দোকান উঠে যায় গোলবাজারে। এদিকে নির্বাচনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল এই মাঠ।স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল সেই জনসভার পরেও মাঠ খুলে না দেওয়ায় মানুষকে দেড় কিলোমিটার ঘুরে বাজার যেতে হচ্ছিল। শুক্রবার ফের সেই মাঠে বাজার বসানোয় স্বস্তি পেয়েছেন শহরবাসী।
এদিন গড়বেতার গড়বেতা, রসকুন্ডু, নোহারি, লাপুরিয়া ও নয়াবসত থেকে সংক্রমনের খবর পাওয়া গেছে। শালবনীর বাঁকিবাঁধ ও দেবগ্রামে আক্রান্ত ১ জন করে। ডেবরা থানার শ্যামচক, মলিঘাটি ও ডেবরা সদরে মোট ৪জন আক্রান্ত। দাসপুর থানার জোত ঘনশ্যাম, বৈষ্ণবপুর শঙ্করপুর, পার্বতীপুর, কলাইকুন্ডু, আলিপুর কুশপাতা, গাদিপুর ফতেপুর, নিমতলায় আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। ঘাটালের রানিচক, শ্রীরামপুর, কুশমান, লক্ষণপুর ও খড়ারে একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন। চন্দ্রকোনার খিরা ঘোলাডাঙায় ১জন আক্রান্ত হয়েছেন। আনন্দপুর থানার মাজুরডিহাতে আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে।
এদিন খড়গপুর মহকুমার মোহনপুর, বেলদা, কেশিয়াড়ী থেকে বড়সড় সংক্রমনের খবর এসেছে। মোট ১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন এই এলাকায়। মোহনপুর বাগদা এলাকার গোমুন্ডায় আক্রান্ত ৪৭ বছরের পুরুষ, জামুয়াতে ১৮ বছরের তরুণী, সাউটিয়া এলাকায় ৩৮ ও ৪০ বছরের ২যুবক এবং বর্ষাপুর জেনকাপুরে ৩৯ বছরের যুবক। বেলদার সাবড়ায় ১৯ বছরের যুবতী, ঠাকুরচকে ৬০ বছরের বৃদ্ধ, বাখরাবাদে ৫২ বছরের পুরুষ, খালিনায় ১৮ বছরের তরুণী এবং দেউলিতে একই পরিবারের ৪০ ও ৩২ বছরের দম্পতির সাথে আক্রান্ত তাঁদের ৮ বছরের শিশুপুত্র। আহারমুন্ডায় আক্রান্ত ৩৬ বছরের যুবক। কেশিয়াড়ীর লালুয়া কানপুরে ৫২ বছরের পুরুষ, লালুয়াতে একই পরিবারের ৫৯ বছরের বৃদ্ধ ও ৭০ বছরের বৃদ্ধা আক্রান্ত। হাসিমপুর এবং দাদরাতে ২৯ এবং ২২বছরের দুই যুবক আক্রান্ত। দাঁতনের উত্তর রায়বাড়েও ৪২ বছরের এক পুরুষ ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ছবি: বিভূ কানুনগো