নিজস্ব সংবাদদাতা: খোদ বাঘের ঘরেই এবার ঘোগের সন্ধান মিলল। খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের এক ঠিকা কর্মী যে কিনা আবার রোগীদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খাবার সংগ্ৰহ করত তারই করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। ২২মে জ্বর আর গলার সমস্যা হয়েছিল ওই ১৭ বছর পেরিয়ে আসা কিশোরের। ২৩ তারিখ তার নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়। ১ তারিখ রাতেই তার করোনা পজিটিভ ফল এসেছে ।যদিও তারই মধ্যে সে কাজ চালিয়ে গেছে। ফলে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে নার্স ও চিকিৎসাকর্মীদের মধ্যে।
খবর পাওয়ার পরই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের কিচেন। আপাতত রোগীদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছেনা বলেই জানিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রান্না ও খাবার পরিবেশনের সঙ্গে যুক্ত ১৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। তাঁদের নমুনা সংগ্ৰহ করা হচ্ছে।
জানা গেছে আক্রান্ত কিশোরের বাড়ি খড়গপুর ১ ব্লকের লছমাপুরে। তার বাবা খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার প্রশান্ত ঘোষের(ঠিকাদারি স্ত্রীর নামে) অধীনে রান্না ও খাবার সংগ্রহের কাজ করে। ওই ব্যক্তি অসুস্থ থাকায় তার ছেলে কাজ করত। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন খড়গপুর স্টেশনে আসার পর থেকেই বেশ কয়েকবার শ্রমিকদের খাবার ইত্যাদি সরবারহ করার জন্য ওই তরুণ গেছিল। সম্ভবত সেখানেই আক্রান্ত হয়।
হাসপাতালের কর্মীদের অভিযোগ ২২তারিখ জ্বর ও কাশির উপসর্গ থাকাতে সে প্রশান্ত ঘোষকে ছুটি চায় কিন্তু ঘোষ থাকে ছুটি না দিয়ে হালকা কাজ বরাদ্দ করে। যদিও ঘোষ জানাচ্ছে ২৩তারিখ নমুনা সংগ্রহের পরই তিনি তাকে বাড়ি চলে যেতে বলেছিলেন। হাসপাতালের কর্মীরা ঘোষের এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন ২৩তারিখের পরেও কাজ চালিয়ে গেছে ওই তরুন। হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসা কর্মীদের একটা অংশের দাবি, আক্রান্ত অবস্থায় ওই তরুন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খাবার সরবরাহ করেছে রোগীদের। হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে হাত রেখেছে এবং সব চেয়ে বড় কথা নার্সদের আবাসনের ওপরের একটি অংশে ওই তরুন থাকত। সেই সিঁড়ি দিয়ে সে ওঠা নামা করেছে। ফলে নার্স ও চিকিৎসাকর্মীদেরও করোনা টেস্ট করানো উচিৎ।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশ চন্দ্র বেরা জানিয়েছেন, “আপাতত ওই আক্রান্তের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্ষে এসেছেন এমন ১৬ জনের পরীক্ষা করানো হচ্ছে। প্ৰয়োজনে আরও ২০জনের পরীক্ষা করাতে হতে পারে।”
হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখার্জি বলেন, ” কিচেনটি সিল করে দেওয়া হয়েছে। আপাতত রোগীদের বাড়ি থেকেই খাবার আনতে বলা হয়েছে। পুরো হাসপাতাল স্যানিটাইজ করা হচ্ছে।” যদিও প্রশ্ন উঠছে যে রোগীদের খাবার সরবরাহ করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বাড়ি চলে গেছেন অথবা অনেকেই আছেন তাঁদের কী হবে?
জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, “কারও উপসর্গ দেখা দিলে তিনি হাসপাতালে জানালে তাঁর পরীক্ষা করা হবে। এখন সাধারন ভাবে উপসর্গ না দেখা দিলে পরীক্ষা করার নিয়ম নেই। কারন কাতারে কাতারে পরিযায়ী শ্রমিক ঢুকছে এবং তাঁদের সবারই করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফলে চাপ রয়েছে।” গোটা ঘটনায় চাপা উত্তেজনা ও উদ্বেগ রয়েছে শহরেও। আউটডোর কিংবা সুলভমূল্যের ওষুধ কিনতে যান অনেকেই। রোগীর আত্মীয়দের অনেকেই আবার হাসপাতালের লাগোয়া খাবার, ফলের দোকান ও ওষুধ দোকানগুলিতেও ওষুধ কিনতে যান। উদ্বেগের মেঘ তাঁদের মনেও।