নিজস্ব সংবাদদাতা: ফের সেই ইন্দা থেকে চৌরঙ্গী যাওয়ার সম্প্রসারিত রাস্তার পাশের অংশ দখলের প্রস্তুতিকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল খড়গপুর শহর। চলল রাস্তা অবরোধ এবং পুলিশের মৃদু লাঠিচার্জও। রবিবার সকাল সকাল ফুটপাত ব্যবসায়ী বনাম রায়ত জমির মালিকদের মধ্যে রীতিমত সংঘর্ষের পরিবেশ তৈরি হয়ে যায় যা সঠিক সময়ে পুলিশ এসে সামাল না দিলে অপ্রীতিকর ঘটনার দিকে চলে যেতে পারত। এদিন রাস্তার পাশের অংশে হকার দের দোকান করার জায়গা দিতে হবে এবং অন্যপক্ষর দাবি অনুযায়ী তাঁদের বাড়ি বা দোকানের সামনে অন্য কোনও দোকান বসতে দেওয়া হবেনা এই দাবিতে ২পক্ষই পথ অবরোধে সামিল হয়। সেই সময় খড়গপুর টাউন আইসি রাজা মুখার্জীর নেতৃত্বে পুলিশ এসে মৃদু লাঠি চার্জ করে সরিয়ে দেয় দু’পক্ষকেই। ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য কয়েকদিন আগেই এই রাস্তার ওপরে বেশকিছু দখল করা নির্মাণ কাঠামো ভেঙে দিয়েছিল পুলিশ তারপরেও কী করে হকাররা নতুন করে জায়গা দখল করতে আসে সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রায়ত বাড়ি কিংবা দোকানের মালিকদের বক্তব্য রাজনৈতিক মদতেই নির্বাচনের প্রাক্কালে ফের বেআইনি দখলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
জানা গেছে শনিবার রাত থেকেই ইন্দার কমলাকেবিন সংলগ্ন এলাকায় হকাররা বাঁশ মজুত করেছিল সম্প্রসারিত এলাকার বাইরে দোকানের অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করবেন বলে। সেই খবর পেয়ে যায় যাঁদের বাড়ি বা দোকানের সামনে সেই অস্থায়ী কাঠামো তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে সেই বাড়ি বা দোকানের মালিকরা। দু’পক্ষেরই বড়সড় জমায়েত হতে থাকে।
রায়ত বাড়ি বা দোকানদার মালিকদের তরফে দাবি করা হয়, সাত সকালেই তাঁদের বাড়ি এবং দোকানের সামনে বাঁশের খুঁটি পুঁততে শুরু করে কিছু মানুষ। তাতেই বাধা দেয় মালিকরা এরপরই দুপক্ষের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। চলে ধাক্কাধাক্কিও। এই পরিস্থিতিতে খড়গপুর মেদিনীপুর রাস্তা অবরোধ করেন হকারদের একটি অংশ। পাল্টা অবরোধে সামিল হয়ে যায় রায়ত মালিকরা। এই সময়ে পুলিশ এসে সামনে পায় রায়ত মালিকদের অবরোধকারী অংশটিকে। লাঠি চালিয়ে অবরোধ তুলে দেয় পুলিশ, আটক করে নিয়ে যায় রায়তদারদের। উল্টোদিকে অবরোধে থাকা হকারদের দলটি ততক্ষনে অবরোধ থেকে সরে পড়ে।
যদিও হকাররা কোনও অবরোধে যাননি বলে জানিয়ে এই দখলদারির পক্ষে দাঁড়ানো ইন্দা এলাকার তৃনমূল নেতা আশিষ সেনগুপ্ত তথা বাবলা জানিয়েছেন, “অবরোধ বা ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটিয়েছে বাড়ির মালিকদের কয়েকজন যাঁরা চায়না দোকান হোক।” কিন্তু মানুষের বাড়ি কিংবা দোকানের সামনে কী করে হকাররা কাঠামো তৈরি করবেন এর উত্তরে বাবলা বলেন, “আমরা সামান্য একটু জায়গা নেব, সবার বাড়ি বা দোকান পুরোপুরি আড়াল করবনা।” কিন্তু পাল্টা রায়তদারদের বক্তব্য, “রাস্তা সম্প্রসারন করার পর জায়গার মূল্য বাড়িয়ে ট্যাক্সের পরিমান বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। সেই বাড়তি ট্যাক্সের পাশাপাশি তাঁরা ঘর বা দোকানের সামনে জবরদখল নেবেন কেন?” হকাররা দাবি করেছেন, রাস্তা সম্প্রসারণের সময় তাঁদের কথা দেওয়া হয়েছিল যে সম্প্রসারনের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তাঁদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। কিন্তু সরকার ফিরেও তাকাচ্ছেনা এখন। এই অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে তাঁরা কোথায় যাবেন?”
ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে দুপক্ষই মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন যেখানে তিনি জানিয়ে দেন বাড়ি বা দোকানের মালিকরা চাইলে তাঁদের সামনে কেউ বসতে পারেন কিন্তু না চাইলে কিছু করার নেই কারন বিষয়টি বেআইনি। বাড়ির মালিকদের দাবি এই বেআইনি বিষয়টিকেই জোরজবরদস্তি মদত দেওয়া হচ্ছে ২০২১য়ের নির্বাচনকে মাথায় রেখে। তাঁদের আরও দাবি একবার এই দখলদারিকে প্রশ্রয় দিলে এর কোনও সীমা পরিসীমা থাকবেনা। ইতিমধ্যেই উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন তাঁরা।
পুরো বিষয়টির জন্য অবশ্য রাজ্য সরকারকেই দায়ী করছেন শহরবাসী।তাঁদের বক্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিলেন আইনি বা বেআইনি সমস্ত দখলদারদের পুনর্বাসন না দিয়ে তিনি উচ্ছেদ করবেননা। কিন্তু সরকারে আসার পর তিনি তাঁর কথা রাখেননি। আর তারই ফলে পাশাপাশি থাকা দুটি সম্প্রদায় আজ পারস্পরিক সংঘর্ষের মুখে জড়িয়ে পড়ছে।