নিজস্ব সংবাদদাতা: এটা বোধহয় খড়গপুরই পারে, একই সাথে পরিবারের সমস্ত সদস্যের রক্তদান! বাবা-মা দুজনই রক্তদান করছেন শুধু রক্তের অভাব পূরণের মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই নয় সঙ্গে কাজ করছে আরও বড় মহৎ উদ্দেশ্য তা’হল নিজের সন্তানকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করতে, জীবনের প্রথম রক্তদানের ভীতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে আর সর্বোপরি এই সমাজের জন্য একজন চিরস্থায়ী রক্তদাতা উপহার দিতে। আবারও বলতে হয়, এটা বোধহয় খড়গপুরই পারে।
রবিবার খড়গপুর শহরের দুটি জায়গায় রক্তদান শিবির আয়োজন করা হয়েছিল। খড়গপুর ভলান্টিয়ারি ব্লাড ডোনার্স অর্গানাইজেশন বা KVBDO এই শিবির দুটি পরিচালনা করেন। এই শিবির দুটি সংগঠিত করেছিল শহরের দক্ষিন প্রান্তে মায়াপুর স্পোর্টিং ক্লাব এবং উত্তর-পূর্ব প্রান্তে জফলা রোড সংলগ্ন শরৎপল্লীর অগ্রগামী সংস্থা। এই দুটি জায়গা মিলিয়ে শহর থেকে এদিন সংগ্ৰহ হয়েছে মোট ৫১ ইউনিট রক্ত। রক্ত দিয়েছেন ৮জন মহিলা এবং ১২ জন নতুন রক্তদাতা।
এই রক্তদান শিবির সংগঠিত করতে এবারই প্রথম এগিয়ে এসেছে অগ্রগামী। খড়গপুর শহরের কিছু পড়ুয়া বিশেষ করে যাঁরা শহরের বাইরে হোস্টেলে বা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় থেকে পড়াশুনা করছেন তারাই অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। এদের কেউ কলকাতা, কেউ ওড়িশা বা ভিনরাজ্যে থেকে পড়াশুনা করছেন। লকডাউন সময়ে বাড়িতে থেকে অনলাইনে পড়াশুনা করছেন। মূলতঃ এরাই তৈরি করেছেন অগ্রগামী একটি সংস্থা তৈরি করে এই রক্তদান শিবির আয়োজন করেছেন তারই একজন অদ্রিজা গাঙ্গুলী। অদ্রিজা ভুবনেশ্বরে থেকে নার্সিং পড়ছেন, ফার্স্ট ইয়ারে। অদ্রিজা জীবনের প্রথম রক্তদান করেছেন বাবা অসীম গাঙ্গুলী ও মা পাপড়ি গাঙ্গুলীর সাথে।
অসীমবাবু রেলের পাবলিক ওয়ার্কস বিভাগে চাকরি করেন। মা গৃহবধূ। সন্তানকে উৎসাহ দিতে রক্ত দিয়েছেন তাঁরাও। সবমিলিয়ে পারিবারিক রক্তদান। অসীম বাবু জানিয়েছেন, জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রেই সন্তানকে উদ্বুদ্ধ করাই তো বাবা-মার কাজ। রক্তদানের মত এরকম একটি মহৎ কাজে সন্তানকে যুক্ত করতে পারলে ভালো লাগে। আমাদের বয়স হয়ে আসছে। একটা সময় আসবে যখন আর রক্ত দিতে পারবনা। কিন্তু তা বলে রক্তের প্রয়োজন তো থেমে থাকবেনা। তখন কী হবে যদি না নতুন প্রজন্ম এগিয়ে আসে? আমরা নিজেরা রক্তদানের প্রয়োজন নিয়ে কথা বলব আর নিজেদের ছেলেমেয়েদের এগিয়ে দেবনা সেটা হয়? আজ এতগুলো ছেলেমেয়ে এখানে রক্ত দিচ্ছে আর তারমধ্যে আমার মেয়েও রয়েছে দেখে খুবই ভালো লাগছে। ওদের সবাইকে উৎসাহ দিতেই আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে রক্ত দিলাম। খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের পক্ষ থেকে এই শিবির থেকে ৪ মহিলা সমেত ২৪ ইউনিট রক্ত সংগ্ৰহ করা হয়েছে। নতুন রক্ত দিয়েছেন ৫জন।
এদিন মায়াপুর স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষ থেকে ক্লাব প্রাঙ্গনেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। নয়াগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক মোট ২৭জনের রক্ত সংগ্ৰহ করেছে। ৪জন মহিলা রক্তদান করেছেন এই শিবিরে। রক্তদাতাদের মধ্যে ৭জন জীবনের প্রথম রক্তদান করেছেন। খড়গপুর শহরের একটি সংগঠন ‘খড়গপুর স্বল্প প্রচেষ্টা’ র পক্ষ থেকে বাঁকতালে একটি রক্তদান শিবির সংগঠিত করা হয় যেখানে ১৫জন নতুন রক্তদাতা ছিল। ৫জন মহিলা সহ ৩০জনের রক্ত সংগ্ৰহ করেছে ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের রক্ত সংগ্রাহকরা। এই প্রত্যেকটি শিবিরের পরিচালনা করেছে খড়গপুর ভলান্টিয়ারি ব্লাড ডোনার্স অর্গানাইজেশন। সংগঠনের সম্পাদক ডাঃ জে.বি সাহু প্রতিটি রক্তদাতা এবং সংগঠনগুলিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। রক্তদান আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন পড়ুয়াদের। উদ্যোগকে।