নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা কালের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে একই দিনে শহরে ১ মহিলা সমেত ৭ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে এবং আরও বিপদের কারন এই যে এবার শহরের পুরানো জায়গার পাশাপাশি সংক্রমন ছড়িয়েছে কয়েকটি নতুন জায়গাতেও। খড়গপুর মহকুমা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে যে মোট ৭ আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে তারমধ্যে ৪ জনের নমুনা সংগ্ৰহ করেছিল খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল ও ৩জনের নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়েছিল রেলের মেইন হাসপাতালে।
উল্লেখ্য খড়গপুরে প্রথম করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল এপ্রিল মাসে যখন একই সঙ্গে ৯জন দিল্লি ও রাজস্থান ফেরৎ আরপিএফ কর্মী একই সাথে করোনা আক্রান্ত বলে ধরা পড়ে এবং যার মধ্যে খড়গপুর ব্যারাকেরই ৬ জওয়ান ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই সেই সময় গোটা খড়গপুরই দুষেছিল রেলের অবিমৃশ্যকারিতাকে। প্রশ্ন উঠেছিল কেন লকডাউনের মধ্যেই স্পেশাল ট্রেনে আসতে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল অস্ত্র আনতে যাওয়া ওই জওয়ানদেরকে। ঘটনায় খড়গপুর প্রশাসনের সঙ্গে রেলের ঠান্ডা যুদ্ধ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে পরবর্তী কালে আরেক জওয়ান করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে করোনা চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা স্বত্ত্বেও রেলেরই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় কারন জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর তাঁকে বড়মা কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে রাজি হয়নি। রেলের সেই রেকর্ডকে ভেঙে দিয়ে এবার খড়গপুর শহরে একই সাথে ৭ জনের আক্রান্ত হওয়ায় ঘুম ছুটেছে খড়গপুর প্রশাসনের।
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে খড়গপুরের সাব ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার বা এসডিপিও সুকোমল কান্তি ঘোষ এক বিশেষ ফেসবুক বার্তায় শনিবার রাতেই খড়গপুরবাসীকে সচেতন করেছেন। বলেছেন সবাই মাস্ক ব্যবহার করুন, করোনা বিধি মেনে চলুন এবং সতর্ক থাকুন।রাতেই পুলিশের মধ্যে শুরু হয়েছে চূড়ান্ত প্রস্তুতির কাজ।রবিবার ভোরেই পুলিশ শুরু করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সংক্রমিত এলাকাকে কন্টেনমেন্ট ও বাফার জোনে চিহ্নিত করে পর্যাপ্ত ব্যারিকেড তৈরি করতে। পাশাপাশি আক্রান্তদের কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পিপিই কিট ও বিশেষ গাড়ির আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে।
খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখার্জী জানিয়েছেন, যে সাতজন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে তারমধ্যে ২ জন ৬নম্বর ওয়ার্ড এলাকার সেই ভবানীপুরের বাসিন্দা যেখানে ইতিমধ্যেই ৪জন করোনা পজিটিভ হয়ে চিকিৎসাধীন। ২ জন রয়েছেন ২০ নম্বর ওয়ার্ড বা ওল্ড সেটেলমেন্ট এলাকা যা খড়গপুরের বিধায়ক তথা ওই এলাকার বিদায়ী কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারের এলাকা। ২৬ নম্বর ওয়ার্ড সাউথ সাইড এলাকার ১জন। ১জন রয়েছেন ৯নম্বর ওয়ার্ড, খরিদা কুমোরপাড়া এলাকার বাগানবাড়ির বাসিন্দা আর অপর জন কলাইকুন্ডা বায়ুসেনা এলাকার। এরমধ্যে ভবানীপুর এলাকা ও সাউথসাইড বাদ দিলে বাকি এলাকা খড়গপুরের করোনা মানচিত্রে নতুন সংযোজন। আর স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে খড়গপুরের করোনা সংক্রমনের এপিসেন্টার হয়ে রইল ভবানীপুর। ভবানীপুরের ৬আক্রান্তকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী ৪ এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ড এখনও সক্রিয় কোভিড আক্রান্ত।
আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য এই যে শনিবারের রিপোর্ট মোতাবেক মোট ৭ জনের যে ৪জন খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের অধীন অর্থাৎ যাঁদের নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল মহকুমা হাসপাতালেই তাঁদের প্রত্যেকেই আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার ৫ অমীমাংসিত হয়েছিলেন যা অত্যন্তই খারাপ লক্ষন শহরের জন্য। কারন অমীমাংসিতের মধ্যে থেকে পজিটিভ পাওয়ার সম্ভাবনার রেকর্ড শনিবার ভেঙে গিয়েছে। এতদিন শহরে ১৫ অমীমাংসিততে ৩, ৫ অমীমাংসের মধ্যে ১ ও ৪ অমীমাংসিতের মধ্যে ১ জন পজিটিভ পাওয়া গিয়েছিল যে হিসাবে মোটামুটি প্রতি ৫ জনে ১ জন পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছিল কিন্তু এবার ৫ অমীমাংসিতর মধ্যে ৪ জনই পজিটিভ বের হওয়ায় চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার অবস্থা মহকুমা স্বাস্থ্য দপ্তরের।
এদিন ৭ জনের মধ্যে ফের রেলের এক আরপিএফ জওয়ান আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে অন্যদিকে আক্রান্ত হয়েছেন কলাইকুন্ডা বায়ুসেনা কর্মীর এক স্ত্রী। রেল হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ কলাইকুন্ডা আর সেই সূত্র ধরেই মহিলা রেল হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। এই ঘটনায় উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে বায়ুসেনার দপ্তরেও। তবে শুক্রবার খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে সংগৃহিত ৫৮টি নমুনার সবগুলিই নেগেটিভ এসেছে। শনিবার নতুন করে নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়েছে ৭২ জনের নমুনা।