নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের মুখে দাঁড়িয়ে দুর্ভাগ্য কাটল খড়গপুরের। বেসরকারি উদ্যোগে এই প্রথম খড়গপুর শহরে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা ICU চালু হল। রবিবার খড়গপুর শহরকে স্বস্তি দিয়ে এমনই একটি বেসরকারি হাসপাতাল ICU-র সাথেই HDU, ডায়ালিসিস ইউনিট ইত্যাদি বেশ কয়েকটি পরিষেবা চালু করল যা এর আগে খড়গপুর শহরে ছিলনা। করোনার প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউয়ে এই শহরে এমন বেশ কয়েকটি দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে যেখানে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন সময়মত ICU পরিষেবা থাকলে তাঁদের বাঁচানো সম্ভব হত। ১৮ই জুলাই এই পরিষেবা গুলি চালু হওয়ার ফলে শুধু খড়গপুর শহরই নয় শহরের পাশাপাশি বেলদা,দাঁতন, নারায়নগড়, কেশিয়াড়ী, সবং, পিংলা, ডেবরা ইত্যাদি থানা এলাকার মানুষদের জন্য স্বস্তির সংবাদ আনল।
খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল লাগোয়া ডিভাইন নার্সিংহোমের কর্নধার দেবরাজ মহারানা জানিয়েছেন, ” আমরা ডিভাইন পরিবার অনেকদিন ধরেই এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার স্বপ্ন দেখেছিলাম। অবশেষে সেই দিন এল। খড়গপুরের মত একটি শহর যা কিনা মহানগর বা সিটি বলে পরিগণিত হয় সেই রকম একটি শহরে সরকারি বা বেসরকারি কোনও স্তরেই ICU বা ডায়ালিসিস ইউনিটের পরিষেবা ছিলনা। এটা আমাদের খুবই আক্ষেপের বিষয় ছিল। যে আক্ষেপ কিছুটা হলেও আজ কাটিয়ে ওঠা গেল। আমরা ডিভাইন পরিবার খুবই গর্বিত যে এই দিনটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে আমাদের নাম। আমরা খড়গপুর শহরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের একগুচ্ছ আধুনিক পরিষেবা সংযোজন করতে চলেছি যা এর আগে এই শহরে ছিলনা।”
এই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, “আপাতত ৪০ শয্যা নিয়ে চালু হওয়া এই হাসপাতালের প্রতিটি শয্যাই বাতানুকূল। এখানে ৪ শয্যার ICU এবং ৪শয্যার ডায়ালিসিস ইউনিট থাকছে। পাশাপাশি চালু হচ্ছে ৫শয্যা HDU ইউনিট। এছাড়াও থাকছে একটি একটি রিকভারি ইউনিট। এই হাসপাতালের প্রতিটি জরুরি শয্যাই পাইপ বাহিত অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা দ্বারা সংযুক্ত থাকছে যাতে যতটা প্রয়োজন ততটাই অক্সিজেন রোগী নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রহণ করতে পারেন। এই প্রথম শহরের কোনও হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে পোর্টেবল এক্স-রে ও ইউএসজি মেশিন ব্যবহার করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যে কারনে রোগীকে তাঁর বিছানা ছেড়ে অন্যত্র যেতে হবেনা। এছাড়াও থাকছে ABG মেশিন পরিষেবা যা কয়েক মিনিটের মধ্যে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা রিপোর্ট প্রদান করবে এবং খুবই কম সময়ের মধ্যে চিকিৎসক চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন।”
দেবরাজ মহারানা জানিয়েছেন, “আমাদের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা হচ্ছে ডে-কেয়ার ইউনিট। একজন চিকিৎসক ও ক্রিটিক্যাল এক্সপার্ট দ্বারা ২৪ ঘন্টা ৭দিন এই ইউনিট চালু থাকবে। অনেকেই আছেন যাঁরা হয়ত নার্সিংহোমের প্রত্যেকদিনের শয্যা খরচ বহন করতে পারেননা। তাঁরা কোনো সঙ্কটাপন্ন রোগীকে নিয়ে আসলেন। চিকিৎসক তাঁকে দেখার পর কয়েকঘন্টার জন্য রেখে চিকিৎসা করে সঙ্কটমুক্ত করার পর রোগীকে ছেড়ে দিলেন। তাঁকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাকি চিকিৎসা করাতে পারেন। ফের তাঁকে চেকআপে নিয়ে আসতে পারেন। কিংবা কোনও মানুষ শহরে বেড়াতে এসেছেন বা শহরের ওপর দিয়ে কোথাও যাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা করে পরবর্তী যাত্রার উপযোগী করে দেওয়া। এসবের জন্যই থাকছে এই ডে-কেয়ার ইউনিট।”
খড়গপুর শহরে এই ধরনের একগুচ্ছ চিকিৎসা পরিষেবা চালুর খবরে নিশ্চিতভাবেই খুশি শহরের মানুষেরা। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, বহুক্ষেত্রেই সঙ্কটাপন্ন রুগীকে ICU পরিষেবা দিতে অন্যত্র নিয়ে যেতেই যেতেই রুগী মারা যায়। খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল, রেল কিংবা আইআইটি হাসপাতালেও এখনও অবধি ICU পরিষেবা নেই। একই অবস্থা কিডনি রোগীদেরও। ডায়ালিসিস করতে তাঁদের সপ্তাহে ২/৩দিন করে মেদিনীপুরে ছুটতে হয়। বিশেষ করে যখন করোনার তৃতীয় ঢেউ চোখ রাঙাচ্ছে তখন এই পরিষেবা কিছুটা ভরসা যোগাবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন সরকারের রীতিনীতি মেনেই নূন্যতম লভ্যাংশ রেখেই চিকিৎসা পরিষেবা দেবেন তাঁরা। এই পরিষেবাকে স্বাগত জানিয়েছেন শহরের চিকিৎসকরাও।