নিজস্ব সংবাদদাতা: রেয়াত করলনা খড়গপুর প্রশাসন, বৃষ্টি ভেজা সকালেই শুরু হয়ে গেল উচ্ছেদ অভিযান। খড়গপুর ইন্দায় নতুন করে সম্প্রসারিত রাস্তার ওপর তৈরি কাঠামো ভাঙার কাজ শুরু করে দিল পিডব্লিউডি, পাশে সহায়ক শক্তি হিসেবে দাঁড়ালো খড়গপুর পুলিশ। সোমবার সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনেই উচ্ছেদ অভিযানের তৎপরতা দেখল শহরবাসী।
কিছুদিন আগেই খড়গপুর মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন খড়গপুর ল্যান্ড অনার্স ওয়েলফেয়ার আ্যশোসিয়েশন।দাবি ছিল দোকানের নাম করে তাঁদের বসতবাড়ি কিংবা রায়ত দোকানের সামনেই নতুন কাঠামো তৈরি করে বসছেন কিছু মানুষ। এতে করে তাঁদের ব্যবসা এবং বাড়ির অবস্থান দুইই বদলে যাচ্ছে। তাঁরা দাবি করেন এঁদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে তাঁদের বাড়ি বা দোকানের সম্মুখভাগ দখল মুক্ত করা হোক। অন্যদিকে একই সময়ে হাজির হয়েছিলেন ফুটপাত ব্যবসায়ী সমিতি। তাঁরা দাবি করেছিলেন, দীর্ঘ লকডাউনে কোমর ভেঙে গেছে তাঁদের। সামনে পুজো, পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থেই ব্যবসা করতে দেওয়া হোক তাঁদের।
মহকুমা শাসক বল ঠেলে দিয়ে দিয়েছিলেন রায়ত দোকানদার বা বাড়ির মালিকদের কোর্টে। বলেছিলেন, তাঁরা যদি মানবিকতার খাতিরে কাউকে বসতে দেন তো ভাল নচেৎ আইনের কিছু করার নেই। তখনই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, আইন দাঁড়াবেনা ফুটপাত ব্যবসায়ীদের পাশে। কয়েক বছর আগেই চৌরঙ্গী থেকে ইন্দা হয়ে পুরাতন বাজার, দীর্ঘ প্রায় ৪কিমি রাস্তা ১৩০ফুট সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরুর সময় উচ্ছেদ শুরু হয়।
১০ থেকে ৩০ বছর রাস্তার ওপর ব্যবসায়িক কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়। প্রায় ২৫০জন ছোটবড় দোকান কোনও পুনর্বাসন প্যাকেজ ছাড়াই ভেঙে ফেলা হয়। শুধু ছিল মৌখিক আশ্বাস, তাঁদের বিষয়টি ভেবে দেখার। গত বিধানসভা উপনির্বাচনেও সেই ভেবে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল কিন্তু ভোট ফুরাতেই সে আশ্বাস মিলিয়ে গেছে। এমনিতেই রাজ্যে বেকারত্বের পাল্লা ভারি। তার ওপর মানুষের নিজের মত করে কিছু করে বেঁচে বর্তে থাকার সম্ভবনাও থাকছেনা। ফুটপাতের এই ব্যবসায়ীদের জন্য বিকল্প ভাবনা ভাবার যথেষ্ট সুযোগও রয়েছে কিন্তু উদ্যোগের অভাব।
রাস্তা সম্প্রসারনের কাজ চলার মাঝখানে থেমে গিয়েছিল কাজ। অর্থ সঙ্কুলান হয়নি তাই সাময়িক ভাবে থমকে যাওয়া। এরমধ্যেই উচ্ছেদ হওয়া কিছু দোকানদার পিছিয়ে গিয়ে ফের নতুন কাঠামো শুরু করে। সোমবার সকালেই টাউন থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ রাজা মুখার্জীর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ উপস্থিত হয়। আরও দুই দক্ষ আধিকারিক ট্রাফিক ওসি তাপস পাল ও স্বপন সাঁই নেতৃত্ব দেন রাজা মুখার্জীর সাথে। পিডব্লিউডি আধিকারিকরা পে-লোডারের সাহায্যে ভাঙার কাজ শুরু করেছেন। ইন্দা কলেজ থেকে ইন্দা মোড়ের দিকে আসার ডানদিক বরাবর সামন্ত হার্ডওয়্যারের অতিরিক্ত দখল করে রাখা কাঠামো ভাঙার মধ্যে দিয়েই শুরু হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান। বেলা ১২টা অবধি পাঁচটা দোকান ভাঙা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে উচ্ছেদ বিরোধিতা করেছেন হাম পার্টি যার পুরো নাম হিউম্যানিটি ইউনিভার্সাল মোশান পার্টির পরিমল গুছাইত ও স্যামসন হোডা এই উচ্ছেদকে বেআইনি বলে দাবি করে বলেন, জাতীয় সড়ক আইন অনুযায়ী এই উচ্ছেদ করা হলেও এটা জাতীয় সড়ক নয়। এটি শহর সড়ক। জাতীয় সড়ক হলে এরপাশে মদের দোকান থাকতনা। আমরা এই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট করেছি। এটা বিচারাধীন হওয়া স্বত্ত্বেও জোর করে আইন বিরুদ্ধ উচ্ছেদ। সরকার চাকরি দিতে পারেনা, ব্যবসা করার লোন দিতে পারেনা কিন্তু নিজস্ব পুঁজিতে করা ব্যবসা উচ্ছেদ করতে পারে! ছবি- অচিন্ত্য ত্রিপাঠী