নিজস্ব সংবাদদাতা: ফের আক্রান্ত হলেন খড়গপুর মেন হাসপাতালের এক চিকিৎসক। কয়েকদিন আগেই এই হাসপাতালের প্রখ্যাত চিকিৎসক অরবিন্দ কুমার জয়সওয়াল ও আরও একজন মহিলা চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ার পরই জরুরি পরিষেবা ছাড়া পুরো হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তাতেও রেহাই মিললনা। জরুরি পরিষেবা চালাতে গিয়েও আক্রান্ত হয়ে পড়লেন এক চিকিৎসক।
মাত্র ২৫বছর বয়সী দক্ষিনের বাসিন্দা ওই চিকিৎসক প্রশিক্ষনে থাকা চিকিৎসক হিসাবেই এই হাসপাতালে কয়েকমাস আগেই কাজে যোগ দিয়েছিলেন বলেই জানা গেছে। চিকিৎসক নিজেই দ্য খড়গপুর পোষ্টকে জানিয়েছেন, ‘কয়েকদিন ধরেই শরীর খারাপ লাগছিল। সোমবারই এই হাসপাতালেই ভর্তি হই। ওইদিনই সোয়াব দিয়েছিলাম। আমি খবর পেয়েছি যে আমার পজিটিভ হয়েছে।’ চিকিৎসক একাই থাকতেন। তাঁর পুরো পরিবারই অন্ধ্রপ্রদেশে থাকে।
এদিকে খড়গপুর ১৮নম্বর ওয়ার্ডের নয়াখুলি রেল সেটেলমেন্ট আবাসনের এক ৩৮বছরের বাসিন্দা রেলের সাঁতরাগাছিতে কর্মরত এক কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন বলে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের সূত্রে জানা গেছে। রেলের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী এই ব্যক্তি সপ্তাহে তিনদিন কর্মস্থলে যাতায়াত করছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি জানিয়েছেন, “রবিবার শরীর খারাপ লাগায় চিকিৎসকের কাছে গেছিলাম। উনি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে বলেছিলেন। আমি দিয়েছিলাম।” এই ব্যক্তিও রেলের আইসোলেশনে রয়েছেন।
অন্যদিকে শহরের গোলবাজার এলাকার এক ব্যবসায়ী পরিবারের চারজন সদস্যই আক্রান্ত হয়েছে। গোলবাজারের জনতা মার্কেট এলাকার এই পরিবার প্রতিষ্ঠিত ঘড়ি ব্যবসায়ী পরিবার। গত শুক্রবারই পরিবারের সত্তরের বেশি বয়সী কর্তা হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে খড়গপুর শহরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসা করছিলেন শহরের প্রখ্যাত চিকিৎসক অনিরুদ্ধ ঘোড়াই। প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাঁকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ডক্টর ঘোড়াই। মহানগরের বিএমবিড়লা হাসপাতালে তাঁর প্রাথমিক ভাবে করোনা ধরা পড়ে। এরপরই গোটা পরিবার খড়গপুর হাসপাতালে নমুনা প্রদান করেন। মঙ্গলবার বৃদ্ধের ২ছেলে ও ২ নাতির পজিটিভ ফলাফল এসেছে। পরিবারের ২মহিলা সদস্য অবশ্য সংক্রমিত হননি বলেই জানা গেছে। মনে করা হচ্ছে পরিবারের ঘড়ি দোকানের খরিদ্দার থেকেই আক্রান্ত হয়েছে পরিবারটি।
এদিকে কলকাতায় বৃদ্ধের প্রাথমিক পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে জানার পরই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল নার্সিংহোম। ডক্টর ঘোড়াইও নিজের চেম্বার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে চলে যান। মঙ্গলবার এই রিপোর্ট পাওয়ার পরই নার্সিংহোমের সমস্ত কর্মী ও কর্তৃপক্ষ কোরনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রত্যেকের রিপোর্ট আসার পর পুরোপুরি জীবানুমুক্ত না করা অবধি নার্সিংহোম বন্ধ থাকছে বলেই জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখার্জি বলেন, “সোমবার যে ৮টি অমীমাংসিত ফল এসেছিল সেখান থেকেই গোলবাজারের চারজনের পজিটিভ এসেছে। বাকি চারটি নেগেটিভ। সোমবার নতুন করে আশিরও বেশি নমুনা পাঠানো হয়েছে পাশাপাশি মঙ্গলবারও প্রায় সম পরিমান নমুনা পাঠানো হয়েছে।” অর্থাৎ বুধবার দেড়শর বেশি নমুনার ফলাফল কি হয় তার দিকেই চেয়ে আছে মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। অভিজ্ঞতা বলছে বুধবার আরও বড়সড় মাত্রায় পজিটিভ আসার আশঙ্কা।