নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়েই। খড়গপুর মেদিনীপুর তো আছেই তার সাথে ধিরে ধিরে জুড়ে যাচ্ছে গ্রামীন এলাকা এবং মফঃস্বল। ৭ই এপ্রিল এক ৩ বছরের শিশু সহ ৩০ জন আক্রান্ত হয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। এই সংখ্যা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের এখনও অবধি সর্বোচ্চ ধাক্কা। এদিন একজন ৩৬ বছরের যুবকের মৃত্যুর পর তাঁর দেহে করোনার অস্তিত্ব মিলেছে। যে ৩০ জনের দেহের করোনার অস্থিত্ব পাওয়া গেছে তার মধ্যে ২০ জনের আরটি/ পিসিআর, ৭জনের ট্রুনাট ও ৩ জনের আ্যন্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ পাওয়া গেছে। মৃত যুবককে এই ৩০ জনের মধ্যেই ধরা হয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যুর পর তাঁর করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। ৩৬ বছরের ওই যুবকের বাড়ি কোথায় তা অবশ্য জানা যায়নি।
এদিন সর্বোচ্চ আক্রান্তের খবর এসেছে খড়গপুর শহর থেকেই। খড়গপুরে আক্রান্তদের মধ্যে রেল হাসপাতালের সংগৃহিত নমুনায় ৪, খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের নমুনায় ৩ এবং আইআইটি হাসপাতালের নমুনা থেকে ১জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এছাড়াও লাগোয়া কলাইকুন্ডার ১জন ৩৪ বছরের যুবকের ট্রুনাট পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। রেল এলাকায় ৩৬ ও ৩৭ বছরের দুই রেলকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে এক রেলকর্মীর ৪৮ বছর বয়সী স্ত্রী ও ২৪ বছরের পুত্র আক্রান্ত হয়েছেন।
আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur)য়ে আক্রান্ত ৪৫ বছরের মহিলার বাড়ি লাগোয়া রবীন্দ্রপল্লী এলাকায়।
খড়গপুরের মালঞ্চতে এক পরিবারের শুধুমাত্র ৩বছরের শিশুপুত্র আক্রান্ত হয়েছে। কিভাবে আলাদা করে পরিবারের শিশুটি আক্রান্ত হল তা রীতিমত ভাবনার। এছাড়াও মালঞ্চতে আলাদা করে আক্রান্ত ৫২ বছরের ব্যক্তি। ইন্দাতে ৪৫ বছরের এক ব্যক্তির শরীরে করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে। আশঙ্কার কারন ঘটিয়ে আইআইটি খড়গপুরে ১২জন, রেল হাসপাতালে ১০ জন এবং খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে ১৫ জনের রিপোর্ট অমীমাংসিত এসেছে ফলে বৃহস্পতিবার শহরের আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এদিন মেদিনীপুর শহরের বার্জ টাউন, রবীন্দ্রনগর থেকে ৩২ বছরের যুবক ও ৩৭ বছরের গৃহবধূর আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ট্রুনাট এবং আ্যন্টিজেন পরীক্ষায় বাকি আক্রান্তরা আনন্দপুর, মেদিনীপুর সদর, গোলাপিচক, মোহনপুর বাগদা ও চন্দ্রকোনার গোহালডাঙ্গার বাসিন্দা।
ডেবরা থানা এলাকার হাইপাট গ্রামে ৫৪ বছর বয়সী মা এবং তাঁর ২৯ বছরের ছেলে আক্রান্ত হয়েছেন। ইসলামপুরে আক্রান্ত ৬০ বছরের বৃদ্ধ। বেলদার আম্বিডাঙরে ২০ বছরের যুবক ও ধলবেলুনে ৩০ বছরের যুবতী আক্রান্ত।
সবংয়ের বলপাইতে ৫৭ বছরের এক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। শালবনীতে ৫৫ বছরের মহিলা, ২৫ এবং ৪৯ বছরের দুই পুরুষ আলাদা আলাদা ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। ক্ষীরপাইয়ের শশাগেড়িয়া, ঘাটালের কুশপাতায় যথাক্রমে ৪২ এবং ৪৮ বছরের ২ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিন সব মিলিয়ে জেলায় প্রায় ১৫৪ টি অমীমাংসিত ফলাফল এসেছে ফলে বৃহস্পতিবার ফের বড়সড় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যেতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে গত চারদিনের হিসাব ধরলে জেলায় মোট আক্রান্ত দাঁড়ালো ৯৮ জনে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে আইআইটি খড়গপুরে আক্রান্ত হলেন ৯ জন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় করতে বুধবার স্বাস্থ্য দপ্তর , পুলিশ এবং অন্যান্য আধিকারিকদের নিয়ে জেলা টাস্ক ফোর্সের বৈঠক সেরে ফেলেছেন জেলাশাসক রশ্মি কোমল।
জানা গেছে বৈঠকে স্থির হয়েছে জেলায় করোনা নমুনা সংগ্রহ আরও বাড়ানো হবে। হাসপাতাল গুলিকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে পরিস্থিতি মোকাবিলায়। খড়্গপুর এবং ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং শালবনি করোনা হাসপাতালেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চূড়ান্ত।
এদিকে বুধবার মেদিনীপুর শহরে বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ বালিকা বিদ্যালয়ের এক কর্মীর পরিজন করোনা আক্রান্ত হওয়ার ওই বিদ্যালয়টি ছুটি ঘোষণা করেছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন শিক্ষিকা ও সমস্ত কর্মচারীরা। ওই কর্মীর সংস্পর্ষে কারা এসেছিলেন খোঁজ নিচ্ছে জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকরা।
বুধবার রাজ্যের বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৯০ জন। এর ফলে রাজ্যে এখন মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লক্ষ ২৪। এক দিনে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্বে এ বার ৬ লক্ষ পেরিয়ে গেল রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা। মঙ্গলবারের মতো বুধবারও দৈনিক আক্রান্ত ২ হাজারের বেশি। সেই সঙ্গে সংক্রমণের হারও আগের দিনের থেকে আরও বেড়ে ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যাও আগের থেকে বেড়েছে। উদ্বেগ বাড়িয়েছে কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনা— এই দুই এলাকার সংক্রমণ পরিস্থিতি। কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনায় এদিন আক্রান্ত হয়েছেন ৭২২ ও ৫৪৮ জন। দুই জেলাতেই ৩জন করে মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ হাজার ৩৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে সংক্রমণের হার মঙ্গলবারের থেকে বেড়ে হয়েছে ৮.১৩ শতাংশ। যা উদ্বেগজনক বলেই মনে করা হচ্ছে। এ নিয়ে মোট ৯৩ লক্ষ ৬৩ হাজার ১৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।