নিজস্ব সংবাদদাতা: কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর কিছুই নেই! এমন কী গা হাত পা র ব্যথাও মালুম হচ্ছেনা। খালি একটাই উপসর্গ, আচারে টক নেই। চা যেন চিনি ছাড়া, তরকারি পানসে লাগছে। মঙ্গলবারের পর ফের বুধবার এই নতুন উপসর্গ দেখা গেল খড়গপুর শহরের চার আক্রান্তের মধ্যে ২ জনেরই। মঙ্গলবার ঠিক এমন টাই দাবি করেছিলেন খড়গপুর শহরের ইন্দা বামুনপাড়া এলাকার ৬৬বছরের বৃদ্ধ। আসানসোলের বোনের বাড়িতে ছিলেন পুরো লকাডাউনেই। ৩১ জুলাই বাড়ি ফিরেছিলেন। বিয়ে থা করেননি। একাই থাকতেন। নিজেই রান্না করতেন।
৩১ তারিখ ও ১লা আগস্ট রান্না করে খেতে গিয়ে দেখলেন কোনো কিছুই স্বাদ লাগছেনা। প্রথমে ভেবেছিলেন অনেকদিন পরে নিজের হাতে রান্না করছেন তাই সমস্যা কিন্তু দ্বিতীয় বেলাতেও একই কান্ড। এরপর সন্ধ্যা বেলায় বাইরে থেকে আচার কিনে এনেছিলেন স্বাদ ফেরাবেন বলে কিন্তু সেই একই কান্ড! দ্য খড়গপুর পোস্ট কে বৃদ্ধ জানালেন, কেমন অদ্ভুদ স্বাদ! যা খাচ্ছি তাই পানসে লাগছে, নুন কিংবা আচারেও স্বাদ পাইনি। ভয় পেয়ে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসককে দেখাতে গেলাম। উনি করোনা পরীক্ষা করতে বললেন। মঙ্গলবার সত্যি সত্যি পজিটিভ হল।
গত কয়েকদিন ধরে সেই একই অভিজ্ঞতার সম্মুখে পড়েছিলেন, ২৯নম্বর ওয়ার্ড ঝুলি এলাকার ৪৮ বছর বয়সী রেলের এক কর্মচারী। রেলের কন্ট্রোল বিভাগের এই কর্মচারী ডিআরএম ভবনেই কর্মরত যেখান থেকে এক গাদা পজিটিভ কেস বেরিয়েছে। আক্রান্তের এক আত্মীয় জানালেন, ” খাবারে রুচি টাই যেন হারিয়ে গেছিল ওনার। এমনকি চায়ে চিনি দেওয়ার পরও বলছিলেন আমরা নাকি ওনার চায়ে চিনি দিচ্ছিলাম না! এখন উনি বুঝতে পারেন করোনাই হয়েছে তাঁর”
বুধবার এরকমই আরও একটি করোনা উপসর্গ মিলেছে ইন্দা গোয়ালা পাড়া এলাকায়। ৩৮ বছরের এক যুবক একই কথা জানালেন। তিনিও বলেন, ‘মুখটা বিস্বাদ লাগছিল ক’দিন ধরেই। এরপর হাসপাতালে যাওয়ার পর নমুনা জমা দিতে বলা হয়। বুধবার জানতে পারি আমি পজিটিভ।’
রেলের সিগন্যাল টেলিকমিউনিকেশন অপারেটিং বিভাগের এক ২৬ বছরের তরুনীর যিনি বাড়ি ভাড়া করে ঝাপেটাপুরে থাকেন। তাঁর অবশ্য জ্বর এবং গা হাত পা ব্যথা জাতীয় কমন উপসর্গ ছিল। ডিআরএম অফিসেই কাজ করেন বলে কোনো ঝুঁকি নেননি। ৩ তারিখ নমুনা জমা দিলে ৫তারিখ তাঁর পজিটিভ পাওয়া যায়।
এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বা এনএইচএস শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা এবং ঘন-ঘন কাশিকেই কোভিডের অন্যতম প্রধান দুই উপসর্গ হিসাবে বিবেচনা করছে। কিন্তু একের পর এক গবেষণার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে জ্বর বা কাশি শুরুর আগেই তারা স্বাদ-গন্ধ হারিয়ে ফেলছেন। ব্রিটিশ রিনোলজিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট এবং শীর্ষ নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ক্লেয়ার হপকিন্স বলছেন, জ্বর বা কাশির চেয়েও হঠাৎ স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া কোভিডের আরো ‘বিশ্বাসযোগ্য‘ উপসর্গ হতে পারে।
ওই তিনটি কেস ছাড়াও বুধবার খড়গপুর রেলের আরেক কর্মচারীর এদিন করোনা ধরা পড়েছে। ঝাপেটাপুরের বাসিন্দা ওই ব্যাক্তি ঠিক কিভাবে আক্রান্ত হলেন তা অবশ্য বোঝহীন। সব মিলিয়ে বুধবার খড়গপুরের করোনা কান্ডে এ পর্যন্ত মোট ১৫৩ জনের করোনা পাওয়া গেল ।