নিজস্ব সংবাদদাতা: শনি যেন কাটতেই চাইছেনা খড়গপুরের। ৭ জন আরপিএফ জওয়ানের করোনা মুক্ত হওয়ার কয়েকদিন পর ১৫ই মে কন্টেনমেন্ট জোন মুক্ত হয়েছিল খড়গপুর শহরের ২টি ওয়ার্ড ২৬ এবং ১৮ নম্বর। ৮ দিনের মাথায় এবার শনিবার, ২৩মে কন্টেনমেন্ট জোনের বেড়ি পড়ল খড়গপুর শহরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড। খড়গপুর রেল কারখানা সংলগ্ন এই ওয়ার্ড যা কিনা ছোট আয়মা বলেই পরিচিত সেখান থেকেই
১৯ বছরের এক তরুনীর কোভিড পজিটিভ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। এই আক্রান্তের ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলার স্বাস্থ্য দপ্তর কারন এই সংক্রমনের উৎস নিয়ে যথেষ্টই রহস্য রয়েছে। আক্রান্ত এবং আক্রান্তের পরিবার কোনোও তথ্য গোপন করছে কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ঘটনায় ২৪জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে যা রীতিমত বিস্ময়কর।এখনও অবধি জানা গেছে শারীরিক উপসর্গ নিয়ে ওই তরুনী খড়গপুর রেলের জোনাল হাসপাতাল বা মেন হাসপাতালে ভর্তি হয় দু’দিন আগেই, ২১মে। সন্দেহ হওয়ায় চিকিৎসকরা তার নমুনা সংগ্ৰহ করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ভাইরাল ল্যাবে পাঠানো হয়। শুক্রবার রাতে রিপোর্ট আসলে দেখা যায় কোভিড পজিটিভ। খবর আসতেই তৎপর হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যদপ্তর ও পুলিশ। শনিবার সকালেই এলাকায় পুলিশ পৌঁছে যায়। তরুনীর বাবা মা ও ভাইকে পুলিশ নিয়ে আসে কোয়ারেন্টাইনে। পুলিশ ওই পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় ওই তরুনীর ভাই বিশাখাপত্তনমে পড়াশুনা করে। লকডাউনের আগেই ২০শে মার্চ সে বাড়ি ফেরে আর ফিরতে পারেনি।
পুলিশ আরও জানতে পারে ওই তরুনীর পিসিমার পরিবার যাঁরা কিনা শহরের মথুরাকাটি এলাকায় থাকেন। ওই পরিবারের কর্তাও অর্থাৎ তরুনীর পিসেমশাইও কর্মসূত্রে অন্ধ্রপ্রদেশে থাকেন তিনিও ওই তরুনীর ভাইয়ের সমসাময়িক কালেই, লকডাউনের পূর্বেই ফিরেছিলেন। আশ্চর্য্যের বিষয় হল আক্রান্ত পরিবারটি লকডাউনের নিয়ম মানেনি। এই দুই পরিবারের মধ্যে নিরন্তর যাতায়ত ছিল এবং এই তরুনী প্রায় ৫দিন মথুরাকাটিতে কাটিয়ে বাড়ি ফেরার পরই আক্রান্ত হয়।
যদিও পুলিশ বা স্বাস্থ্য দপ্তর মনে করছে যেহেতু তরুনীর তার ভাইয়ের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শে এসেছে তাই ভাই থেকেই সংক্রমণে আসার সম্ভবনা বেশি।
যদিও এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে প্রায় ২মাস পরে একজন ব্যক্তির থেকে অন্য ব্যক্তি সংক্রমিত হবেন কী করে? করোনা চক্রের কাল বড় জোর ১৪ থেকে হু’য়ের সাম্প্রতিক পরামর্শ অনুযায়ী ১৭দিন। চিকিৎসকদের একটি অংশের বক্তব্য, বিষয়টি খুব অসম্ভব নয়। সংক্রমিত ব্যক্তি অভ্যন্তরীণ ভাবে শক্তিশালী ও জীবানুর সঙ্গে লড়াইয়ে সক্ষম হলে উপসর্গহীন হয়ে থাকেন। ১৪দিনের মধ্যে তার দ্বারা যিনি সংক্রমিত হয়েছিলেন তিনিও অভ্যন্তরীণ ভাবে শক্তিশালী হওয়ায় উপসর্গহীন ছিলেন এই ভাবে চেইন রিয়াকশনে যখন তা এই তরুনীর কাছে এসেছে তখন তরুনীর জীবানুর সাথে লড়াইয়ের ক্ষমতা না থাকায় তা প্রকট হয়েছে। যদি সেটাও হয় তাহলে ওই পরিবারের তরুনীর ভাই ছাড়া আরও ২জনকে অতীতে আক্রান্ত হতে হবে। অথবা ওই একই পদ্ধতিতে তরুণী তার পিসিমার পরিবার থেকে আক্রান্ত।
এই দুই সম্ভবনা ছাড়া আর একটিই সম্ভবনা থাকে তা হল পরিবারের বাইরে কোনও করোনা আক্রান্তের সঙ্গে তরুনীর কাছাকাছি হওয়ার সম্ভবনা। তরুণী নিজেও বিশাখাপত্তনম থেকেই হায়ার সেকেন্ডারি করার পর গত একবছর বাড়িতে থেকেই দুরশিক্ষায় কলেজের পাঠ নিচ্ছিল। সে এই একবছর ওই মথুরাকাটি এলাকায় নিরন্তর যাতায়ত করত। দক্ষিন ভারতীয় এই তরুনীর পরিবার আর মথুরাকাটি অঞ্চলে ওই দক্ষিন ভারতীয়দের আধিক্য। কী এমন বিষয় ছিল যে লকডাউন অমান্য করেই ওই তরুনী বারংবার মথুরাকাটিতে যেত এবং দিনের পর দিন পিসি বাড়িতেই থেকে যেত? পুলিশ জানবার চেষ্টা করেছে কিন্তু মুখে প্রায় কুলুপ এঁটেছে পরিবার। পুলিশ অবশ্য সেই কুলুপ খোলার চাবির খোঁজ করছে।
তরুনীর বাবা রেলের কারখানায় কাজ করেন। ২১তারিখ থেকে শুরু হয়েছে কাজ। পুলিশ তরুনীর বাবার ৮ সহকর্মী, তরুনীর পিসির পরিবার এবং একটি ভাড়াটিয়ার পরিবার মিলে এখনও অবধি ২৪জনকে কোয়ারেন্টাইন করেছে। আরও কাউকে কোয়ারেন্টাইন করার দরকার কিনা দেখা হচ্ছে। আক্রান্ত তরুনী আপাতত রেলের হাসপাতালেই। শনিবার পুরো এলাকা সিল করে দিয়ে কন্টেনমেন্ট জোন করে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। এলাকায় আতঙ্ক কাজ করছে। জানা যায় কোয়ারেন্টাইন করা হবে এমন ভয়ে পুলিশ আসতে অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালায়।