নিজস্ব সংবাদদাতা: দ্বিতীয় ঢেউ বিদায় বেলায় করোনার মরন কামড়ে খড়গপুর শহরে ঝরে গেল আরও একটি প্রাণ, বিদায় নিলেন এক প্রতিভাবান অঙ্কন শিল্পী রতন দত্ত। স্রেফ আইসিইউ না মেলায় মাত্র ৫৫বছরে প্রাণ হারালেন রতন। করোনা জয় করলেও জয় করতে পারলেননা করোনা পরবর্তী আক্রমনকে। শুক্রবার সকাল ১০টায় প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবরে শোক নেমে এসেছে খড়গপুর শহরের তালবাগিচা এলাকায়। শিল্পীর মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি শোক স্তব্ধ বন্ধুবান্ধব ও তাঁর অগণিত ছাত্রছাত্রীরা।
পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ করোনার লক্ষণ দেখা দেয় রতনের। জ্বর এবং কাশি হচ্ছিল। তালবাগিচার একটি ওষুধ দোকান থেকে জ্বরের ওষুধ খাচ্ছিলেন তিনি। দোকানদার তাঁকে করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ মত করোনা পরীক্ষা করলে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে তাঁর। অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় তাঁকে শালবনী করোনা হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জুনের প্রথম সপ্তাহেই করোনা মুক্তির ছাড়পত্র নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি হন রতন। প্রথম কয়েকটা দিন কাটিয়ে সঙ্কট মুক্ত হয়েও যান তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন দু’একদিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরবেন তিনি। কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠলনা।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সঙ্কট জনক হয়ে পড়ে রতনের অবস্থা। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া দরকার কিন্তু মেডিক্যালে সব আইসিইউ ভর্তি। বাড়ির লোকেরা, বন্ধু বান্ধব আইসিইউর জন্য খোঁজ চালাতে থাকেন। মেদিনীপুর শহরের নার্সিং হোম, বেসরকারি হাসপাতাল কোথাও আইসিইউ মেলেনি। রতন দত্তের পাশেই বাড়ি খড়গপুর শহর তৃনমূল যুব সভাপতি অসিত পালের, তাঁর বাবা জহর লাল পাল এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর ও পরিচিত তৃনমূল নেতা। জহরবাবু জানিয়েছেন, আমার ছেলে ও দলের কর্মীরা মেদিনীপুর ছুটে গিয়েছে কিন্তু কোথাও আইসিইউ মেলেনি। শুক্রবার সকাল ১০টায় মৃত্যু হয় রতনের।
মেদিনীপুর আর্ট কলেজ থেকে ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন রতন। ছোটবেলা থেকেই আঁকার দিকে ঝোঁক। এরপর নিজেকে আরও প্রশিক্ষিত করেন। ধিরে ধিরে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে তাঁর। ফাইন আর্টসের পাশাপাশি কমার্শিয়াল আর্টেও সুনাম অর্জন করেন। খড়গপুর শহরের আরেক শিল্পী তথা একটি প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের ফাইন আর্টসের শিক্ষক অশোক ঘোষ জানিয়েছেন, ‘ এঁকেও যে ভালো ভাবে খেয়ে পরে টিকে থাকা যায় আমাদের কাছে তার প্রথম নির্দেশন রতন দত্ত। তাঁকে দেখে অনেকেই আঁকাকে জীবিকা করার উৎসাহ পেয়েছেন। প্রচুর ছাত্রছাত্রীর পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে সংসারকে একটা স্বচ্ছল জায়গায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একটা সুন্দর বাড়ি করেছিলেন। বিভিন্ন শিল্পী সংগঠন, চিত্রকলা সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন যা হয়ত আমরা পেরে উঠতামনা। অমায়িক, সদালাপী মানুষটির প্রয়ানে বড় ক্ষতি হয়ে গেল।”
পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পাশাপাশি রতন দত্ত রেখে গেলেন স্ত্রী ও দশম শ্রেণীর ছাত্রী কন্যাকে। রেখে গেলেন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও, খড়গপুর শহর নয়, মহানগর বলে গর্ব করা হয়। সেই খড়গপুর শহরেই আজ অবধি কেন আইসিইউ তৈরি হলনা!