নিজস্ব সংবাদদাতা: পকেটে রক্তে ভেজা চার হাজার টাকা! সাড়ে তিন বছরের নাতির নাছোড়বান্দা আবদার পুজোয় চাই নতুন সাইকেল আর সেই সাইকেল কিনতে গিয়েই তেলের ট্যাংকারে তলায় পিষ্ট হয়ে গেলেন ৬৩ বছরের দাদু। দেবী পক্ষের সূচনাতেই রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ খড়গপুর গ্রামীণ থানার অন্তর্গত হাওড়া-মুম্বাই জাতীয় সড়কে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় নিহত ৪ ব্যক্তির মধ্যেই ছিলেন স্থানীয় কুমারডোবা গ্রামের নকুল সিং। ছিলেন তাঁরই গ্রামের আরেক বাসিন্দা ৩৫ বছরের নয়ন মাঝি এবং পাশের গ্রাম মুনিব গড়ের সেক আরিয়ান (২৩) ও সামসের আলম খান (৫৫)।জাতীয় সড়কের ছয় লেনের মধ্যবর্তী জায়গায় দাঁড়িয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এঁরা। তখনই ঘটে যায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
নকুল সিংয়ের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ‘ পরিবারের একমাত্র ক্ষুদে সদস্য সুদাম বেশ কিছুদিন ধরেই বায়না ধরেছিল সাইকেল কিনে দেওয়ার। সাইকেলের জন্য নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছিল প্রায়। বাধ্য হয়ে রবিবার পকেটে চার হাজার টাকা নিয়ে বেরিয়ে ছিলেন মেদিনীপুরে আসবেন বলে। লছমাপুর থেকে বাস ধরার কথা। বাস স্টপেজে যাওয়ার জন্য রাস্তা পের হওয়ার দরকার ছিল তাই এক পাশের তিনটি লেন পেরিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ওপারে যাওয়ার জন্য। ওপারে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন আরও কয়েকজন। তখনই ঘটে যায় দুর্ঘটনাটা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন জায়গাটা লেন কাটিংয়ের। মূল রাস্তার ওপর গার্ড রেল রাখা ছিল গাড়ির গতি কমানোর জন্য। সেই গার্ডরেল জিকজ্যাক করে পেরুতে হয় গাড়ি গুলিকে। সেই জিকজ্যাক কাটিয়ে পেরুতে গিয়েই মেদিনীপুরের দিক থেকে একটি তেল ট্যাংকার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে উঠে পড়ে ডিভাইডারে। তারপর ঘুরে গিয়ে চলে আসে লেন কাটিংয়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায়। আর তাতেই ট্রাকের তলায় চাপা পড়ে যায় চারজন যার মধ্যে ছিলেন নকুল সিং।
নকুল সিংয়ের ছেলে খড়গপুর গ্রামীন থানার সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় সিং জানিয়েছেন, ‘সকালেই বাবা বেরিয়েছিলেন আমার ভাইপো সুদামের জন্য পুজোর উপহার হিসেবে সাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য। আমি তখন অন্য জায়গাতে ডিউটি করছিলাম। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ছুটে যাই। একটা মারুতি করে বাবাকে নিয়ে মেদিনীপুর হাসপাতালের দিকে রওনা দেই কিন্ত রাস্তাতেই আমার কোলে মাথা রেখেই বাবা মারা যান।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাস্তার ওপরে গার্ডরেল গুলো ঠিক করে ব্যারিকেড করা হয়না। রাস্তার যে অংশে লেন কাটিংয়ের জায়গা সেই দিকে ব্যারিকেড ছিলনা, ছিল রাস্তার মাঝামাঝি। ফলে ট্যাংকারটি মধ্যিখানের ডিভাইডার ঘেঁষেই যাচ্ছিল। সেই সময় নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ডিভাইডারে চাকা উঠে যায় আর তারপরেই গাড়িটি ঘুরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে অপেক্ষারত মানুষদের ওপর। ঘটনার সময় কর্তব্যরত সিভিক ভলান্টিয়ারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও পুলিশের তরফে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।
ঘটনায় মৃত নয়ন মাঝি , পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটিভ। সকাল সকাল তিনিও বেরিয়ে ছিলেন কাজে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তাঁরও। সামসের এবং আরিয়ানও নিজের নিজের কাজে বেরিয়েছিলেন। ঘটনার পর দুই গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পুলিশ মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে এসেছে।