বৃদ্ধ বাবার সংগে বাঁ হাত হারানো সানোয়ার |
নিজস্ব সংবাদদাতা: সুপার স্পেশালিটি, মাল্টি সুপার স্পেশালিটি থেকে শুরু করে কী নেই এই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়! তার ওপরে রয়েছে একটি মেডিক্যাল কলেজ। মূখ্যমন্ত্রী থেকে ছোট বড় নেতা মন্ত্রী বক্তব্য রাখতে গেলেই হরিনামের মতই বন্দনা করেন রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থার। আর পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর শহরের এক যুবক নিজের হাত কাটিয়ে প্রান নিয়ে কোনমতে ফিরে এসেছেন সম্প্রতি। আর খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ আর রাজ্যের সেরা হাসপাতাল ঘুরে প্রতিবন্ধী ওই যুবক ও তার পরিবারের উপলব্ধি, পাশের রাজ্য কটকে না গেলে প্রানটাই চলে যাচ্ছিল, হাতটা না’হয় উৎসর্গ করা গেল এরাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
খড়গপুরের পাঁচ বেড়িয়ার বাসিন্দা বছর তিরিশের সৈয়দ সানোয়ার আলি জন্ম প্রতিবন্ধী। মাস দুয়েক আগে বাঁ হাতে একটি ফোঁড়ার মত হয়। প্রথমে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে দেখান। এটা ওটা পরীক্ষা করার পর কোনও কিছুই ধরতে না পেরে শ্রেষ্ঠ চিকিৎসার পথ নেন চিকিৎসক যার নাম ‘রেফার’। অতঃপর সানোয়ার গেল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে দু দফায় দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখেন সানোয়ারকে। ২১দিন ধরে নুন আর গরমজলের সেঁক নিতে হয় বাড়িতে। দাওয়াই হল পেন কিলার।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
তারপর তাঁদেরই মধ্যে এক চিকিৎসক নিদান দিলেন ‘মাত্র’ ২২হাজার টাকা দিয়ে একটা নার্সিং হোমে ভর্তি হতে। বেচারারা পাবে কোথায় ? এরমধ্যে এক চিকিৎসক সানোয়ারের সেই ‘ফোঁড়া’র মত জায়গায় ১০এম.এলের সুঁচ ফুটিয়ে দিলেন! ভেবেছিলেন বোধহয় পাকা ফোঁড়া। কিন্তু পুঁজের বদলে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে এল রক্ত। এত রক্ত যে হিমসিম খেলেন চিকিৎসক। এরপর আরও বড় হাসপাতাল পিজি তে রেফার।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
কিন্তু পিজিতে গিয়ে কী করবেন ? কাকে ধরবেন? পাঁচবেড়িয়ার নেতারা বললেন, কুছ পরওয়া নেই কালই মন্ত্রী আসছেন, কথা বলে ব্যবস্থা হবে। সানোয়ার আলির বৃদ্ধ বাবা ওসমান আলি বলেন, ”পরের দিন এলাকায় এসেছিলেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। উনি বললেন, কোনও চিন্তা নেই, পিজিতে গেলেই ভর্তি নিয়ে নেবে। আমি একটা ফোন নম্বর দিচ্ছি ওখানে গিয়ে কথা বলে নেবেন। আমি বলে দিচ্ছি।”
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
ওসমান বলেন, ”মন্ত্রীর ভরসায় ছেলেকে নিয়ে পিজি গেলাম। ওখানে গিয়ে সেই ফোন নম্বরে ফোন করলাম। সারাদিন কেটে গেলেও সেই ফোন ধরেনি কেউ। বাধ্য হয়ে নিজেরাই ডাক্তার দেখলাম। ডাক্তার বলল, অপারেশন করতে হবে তবে ডেট পাওয়া যাবে আড়াই মাস পরে।”
এখানে বিজ্ঞাপন দিন |
ছেলের ওদিকে যন্ত্রনা বেড়েই চলেছে। এবার বাধ্য হয়ে মেদিনীপুর শহরে এক বেসরকারি নার্সিং হোমের চিকিৎসককে দেখানো হল। সেই চিকিৎসক রমেশচন্দ্র মুর্মুই প্রথম জানালেন, বস্তুটি কোনও ফোঁড়া হয়, ওটি আদতে টিউমার। কিন্তু ততদিন টিউমার সংক্রমন হয়ে বোন টিবিতে রূপান্তরিত। এরপরই কটক নিয়ে যাওয়া হয় তারপর সেখানকার পরামর্শে এইমসে নিয়ে যাওয়া হল। হাত বাদ দিয়ে জীবন নিয়ে ফিরল সানোয়ার।