নিজস্ব সংবাদদাতা: ফের খড়গপুর শহর বিধায়ক তথা খড়গপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারের দলীয় কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ কাটতে উদ্যোগী হল দক্ষিণ পূর্ব রেলের খড়গপুর ডিভিশন যদিও শেষ অবধি রেল কর্মচারীদের বাধার মুখে ফিরতে হয়েছে বলেই জানা গেছে। উল্লেখ্য রেল এলাকার বিএনগ্রাউন্ড সংলগ্ন বিধায়ক প্রদীপ সরকারের এই বিলাসবহুল কার্যালয়ে রেলের সরবরাহ বিদ্যুৎ সংযোগ হুক করেই চালানো হয়। রেলের অভিযোগ শুধু অফিসটিই নয় সংলগ্ন এলাকায় রেলের জমিতেই পৌরসভা একটি পার্ক গড়ে তুলেছে। রেলের অভিযোগ বেআইনি ভাবে রেলের জমিতে পার্ক বানানোর পাশাপাশি ওই পার্ক ও সংলগ্ন এলাকায় কয়েকটি মিনি মাসের জন্য ব্যবহৃত আলো সবই রেলের সরবরাহ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থেকেই বেআইনি ভাবে সংযোগ নেওয়া হয়েছে। প্রদীপ সরকারের অফিসে আলো পাখা ছাড়াও একাধিক এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করা হয়। এসব বেআইনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য বারবার বলা হলেও বিধায়ক তা বিচ্ছিন্ন করেনি। তাই রেলের ইঞ্জিনিয়ার সহ বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীরা আজ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে যান কিন্তু উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়াতে গিয়ে তাদের ফিরে আসতে হয়।
রেল সূত্রে খবর মঙ্গলবার প্রদীপ সরকারের অফিসের বে আইনি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি রেল এলাকার মধ্যে বেশকিছু বেআইনি নির্মান উচ্ছেদের পরিকল্পনা ছিল। রেলের তরফে বহুদিনেরই অভিযোগ প্রদীপ সরকার শুধু বেআইনি নির্মান বানিয়েই ক্ষান্ত হননি পাশাপাশি কার্যালয় লাগোয়া রেলের জমিতে বেআইনি ভাবে একটি পার্ক নির্মান করেছেন। ওই পার্ক ও সংলগ্ন এলাকায় একাধিক উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বাতিস্তম্ভ এবং তাঁর নিজের অফিসের একাধিক আলো পাখা ও প্রায় চারটি এয়ার কন্ডিশনার সবই রেলের সরবরাহ করা বিদ্যুৎবাহী তার থেকে হুক করে নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, তাঁর কার্যালয়ের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে খবর পেয়েই খড়গপুর রেলের ডিভিশনাল ম্যানেজার বা ডিআরএম মনোরঞ্জন প্রধানকে প্রদীপ সরকার ফোন করে জানিয়ে দেন, এই ঘটনায় কোনও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে তার দায় রেলকেই নিতে হবে। পরে সাংবাদিকদের প্রদীপ বলেন, “যখন করোনার মত ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলিকে একসঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ তখন রেল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা, উচ্ছেদ করার মত কাজ শুরু করেছে। এখন মানুষ অসহায়, খেতে পাচ্ছেননা এই অবস্থায় রেলের এই নতুন উপদ্রবে মানুষ যদি ক্ষুব্ধ হয়, বিশৃঙ্খল হয় তার দায় রেলকেই নিতে হবে। এটাই আমি ডিআরএমকে জানিয়েছি।”
অন্যদিকে এদিনই অর্থাৎ মঙ্গলবার ১৩নম্বর ওয়ার্ডে রেলের জায়গায় থাকা কয়েকটি বাড়ি ভেঙে দেয় রেল। বিজেপির অভিযোগ ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার গরিব মানুষকে টাকার বিনিময়ে রেলের জায়গাকে রাজ্য সরকারের জায়গা বলে দখল দিয়েছে। রেল তার নিজের জায়গায় উচ্ছেদ শুরু করায় সর্বস্ব হারানোর মুখে গরিব মানুষ। এখন এঁদের কী হবে? এভাবেই লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করছে তৃণমূল কাউন্সিলর, নেতারা। বিজেপির জেলা নেতা তথা খড়গপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেমচন্দ্র ঝা বলেন, “একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে বেআইনি ভাবে রেলের জায়গা দখল করে অফিস চালাচ্ছেন বিধায়ক আবার ছ সাতটা এসি লাগিয়ে বিদ্যুৎ চুরি করছেন। অন্যদিকে তারই লোকেরা গরিব মানুষকে রেলের জমি রাজ্যের জমি বলে বেচে দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে খড়গপুর শহরে তৃণমূল রাজ। কেউ প্রতিবাদ করলে পুলিশ দিয়ে ঠান্ডা করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।”
খড়গপুর রেলের জনসংযোগ আধিকারিক তথা সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার আদিত্য চৌধুরী জানিয়েছেন, “রেলের কিছু জবর দখলিকৃত জায়গা দখলমুক্ত করা ও বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ছিল। কী কী হয়েছে পুরো খবর এখনো আসেনি তাছাড়া এটা ধারাবাহিক পরিকল্পনা আজ না হলে পরে হবে।”
রেলের আরেক আধিকারিক জানিয়েছেন, বিধায়ক করোনা পরিস্থিতির আগেও অন্য অজুহাত দিয়েছেন, এখন করোনার অজুহাত দিচ্ছেন। এরপরে কি অজুহাত দেন দেখব। তবে বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ আমরা বিচ্ছিন্ন করব। প্রয়োজনে আদালতে যাব।”