নিজস্ব সংবাদদাতা: বিয়েটা হওয়ার কথা ছিল মার্চ মাসের ১৩তারিখ। নির্ঘণ্ট মেনেই খড়গপুরের পিসির বাড়িতে এসে গিয়েছিল মেয়ে আর তার বাড়ির লোকজন। কিন্তু বিয়ের দিন সকালে হটাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ে ছেলের মা ও বৌদি। ফলে বন্ধ হয়ে যায় বিয়ে। স্থগিত হয়ে যায় বিয়ে, পরের তারিখ ঠিক হয় ১৬ই এপ্রিল মানে বৃহস্পতিবার। মেয়েকে পিসি বাড়িতে রেখেই কন্যাপক্ষ ফিরে গেছিল ঝাড়গ্রামের বাড়িতে। আর তারমধ্যেই শুরু হয়ে যায় লকডাউন।
বৃহস্পতিবার সেই লকডাউনের মধ্যেই খড়গপুরের তালবাগিচায় বরের বাড়িতেই বিয়ের আসর বসল একেবারেই সামাজিক দুরত্বের নিয়ম মেনেই তবে হাজির ছিলনা কনে পক্ষ কারন কনের বাপের বাড়ির দেশ ঝাড়গ্রামের প্রতিবেশিরা জানিয়ে দিয়েছিল, মেয়ের বিয়েতে বাবা মা যেতেই পারে তবে ফিরতে হবে লকডাউন শেষে কোয়ারেন্টাইন পর্ব শেষ করেই।
গ্রামঘরের দেশ, চাষাবাদ রয়েছে। অতদিন বাইরে থাকলে সেসব চৌপাট হয়ে যাবে ফলে আসা হয়নি তাঁদের। অতএব দায়িত্ব নিলেন খড়গপুর পৌরসভার ৩৫নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহর পাল। কন্যা কর্তা হলেন তিনি। বৃহস্পতিবার মাথায় টোপর আর মুখে মাস্ক পরেই যদিনং তব , তদুস্ত মম’ মন্ত্র পড়ে চার হাত এক হয়ে গেল সৌরভ কর্মকার আর সাথী পাতরের। কাউন্সিলর জানালেন, ” মার্চের বিয়েটা পিছিয়ে যেতেই কাছাকাছি আর তারিখ পাওয়া গেলনা, চৈত্র মাস পড়ে গেল। তাই বৈশাখের এই দিনটাকেই বাছা হয়েছিল। কে জানত যে লকডাউন পড়ে যাবে! যাইহোক লকডাউন বিধি নিয়ম মেনেই বিয়ে হল। কোনও জনসমাগম করা হয়নি।”
তালবাগিচার যুবক সৌরভ খড়গপুর শহরের মালঞ্চ এলাকায় একটি খাবার দোকান চালান। বিয়ের জন্য জমিয়ে ছিলেন কিছু টাকা। কিন্তু বিয়েটা তেমন জাঁক জমক না হওয়ায় খরচ পাতি তেমন হয়নি তাই নগদ ৩১হাজার টাকা তুলে দিলেন স্থানীয় বঙ্গ যুব শক্তি নামে একটি সংগঠনের হাতে। লকডাউন চলার পর থেকেই এই সংগঠন এলাকার ৫০০জন মানুষকে দুবেলা অন্ন জুগিয়ে চলেছে। পাশাপাশি বেশ কিছু পরিবারকে চাল সহ রান্নার সরঞ্জাম সরবরাহ করছেন তাঁরা।
সংগঠনের অন্যতম কর্মকর্তা অসিত পাল তাই ধন্যবাদ জানালেন নব দম্পতিকে। বললেন , ”নতুন জীবনে চলার শুরুতেই যে সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় এঁরা দিলেন তাতে আমরা আপ্লুত। অনেক মানু্ষের সুরাহা হল এতে।” অন্যদিকে এমন অন্য বিয়েতে খুশি সাথীও। সাথী জানালেন, ‘আমাদের বিয়েতে বউভাত হত, অনেকেই আসতেন প্রীতিভোজে। সেই ভোজটাই এখন হবে বিপন্ন মানুষদের জন্য। তাঁরা আমাদের আশীর্বাদ করবেন, আমাদের আগামী দিনের জন্য।”