নিজস্ব সংবাদদাতা: ফের বজ্র আঁটুনির গেরোয় খড়গপুরপুর শহর। আর সেই আঁটুনি এবার রেড জোনের চেয়েও কড়া আর তারও চেয়ে কড়া সংবাদ হল একাধিক কন্টেইনমেন্ট জোনের আওতায় চলে যাচ্ছে খড়গপুর। সোমবার করোনা সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়ে গেছে নবান্নে যেখান থেকে বাংলার মোট কন্টেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা ৭২টি বাড়িয়ে ৫১৬ টি করা হয়েছে। ওখানেই ঠিক হয়েছে কোন জেলায় কটি কন্টেইনমেন্ট জোন হবে। বলা হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মোট ৫টি কন্টেইনমেন্ট জোন হবে। যদিও ঠিক কোথায় কোথায় এই জোন হবে তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি কারন সংখ্যার নিরিখে জেলাগুলি ঠিক করবে এই জায়গা।
জানা গেছে আগামী কালই জেলার কোভিড টাস্ক ফোর্স মিটিংয়ে বসে ঠিক করবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৫ টি জায়গার নাম। টাস্ক ফোর্সের ওই মিটিংয়ে জেলাশাসক, জেলার পুলিশ সুপার ছাড়াও জেলা প্রশাসন ও পুলিশের কর্তা ব্যক্তিরা ছাড়াও থাকবেন স্বাস্থ্যদপ্তর। গত একমাসের রিপোর্টের চুলচেরা বিচারের পরই ৫ জায়গার নাম চূড়ান্ত হবে। প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়াই যেতে পারে যে করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে এমন জায়গা গুলি যেমন খড়গপুর, ঘাটাল ও দাসপুরের কিছু এলাকা থাকবে এই কন্টেইনমেন্ট জোনের এলাকায়। কেন্দ্রের গাইড লাইন অনুযায়ী পুরো দাসপুর না হয়ে শুধু সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতকে কন্টেইনমেন্ট জোন করা হতে পারে। এদিকে ওই তিন এলাকা বাদ দিলেও আরও দুটি এলাকা কোথায় হবে?
জেলা প্রশাসনের এক পদাধিকারী জানিয়েছেন, ‘ওই তিন এলাকার বাইরে সম্ভবত আলাদা কন্টেইনমেন্ট জোন হবেনা বরং খড়গপুর শহরকেই দুটি অথবা তিনটি পৃথক কন্টেইনমেন্ট জোনের আওতায় আনা হতে পারে। কেন্দ্রের গাইড লাইন অনুসারে মিউনিসিপ্যাল বা কর্পোরেশন এলাকাকে প্রয়োজনে ভেঙে পৃথক জোন করা যেতে পারে।’ যদিও এটাই চূড়ান্ত নাও হতে পারে। কিভাবে খড়গপুর শহরকে ভাঙা হবে তার একটা সূত্র রাখা হতে পারে এই রকম যে, খড়গপুর মিউনিসিপালিটির রেলের অন্তর্গত ২৬ নম্বর ওয়ার্ডকে যা কিনা আরপিএফ ট্রেনিং সেন্টার ও ব্যারাক সংলগ্ন সেটি এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ড যা কিনা টিবি হাসপাতাল সংলগ্ন সেই এলাকা পৃথক দুটি কন্টেইনমেন্ট জোন করে দেওয়া হবে বাকি রেল এলাকাকে আরেকটি জোন করে দেওয়া হবে। বাদ বাকি অংশ অর্থাৎ রেলের ৮টি ওয়ার্ড বাদ দিয়ে ইন্দা খরিদা মালঞ্চ এলাকা আর শহরের দক্ষিনের কৌশল্যা ঝাপেটাপুর হয়ে তালবাগিচা আইআইটি প্রেমবাজার এলাকার ২৭ টি ওয়ার্ড কন্টেইনমেন্ট জোনের বাইরে থাকবে।
অন্য একটি সূত্রে বলা হচ্ছে খড়গপুরের ওই দুটি ওয়ার্ড আর মেদিনীপুর পৌরসভার একটি ওয়ার্ড
কন্টেইনমেন্ট জোনের আওতায় আসবে যদিও কেন মেদিনীপুর পৌরসভার ওয়ার্ড কন্টেইনমেন্ট জোনের আওতায় আসবে তার উত্তর এখুনি নেই। কারন জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে মেদিনীপুর পৌরসভা এলাকায় কোভিড পজিটিভ হয়েছে এমনটা জানানো হয়নি অন্তত সংবাদমাধ্যমকে। তবে সোমবার রাজ্যের তরফে যে কোভিড বুলেটিন প্রকাশ করা হয়েছে তাতে যে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বলা হয়েছে তা জেলার প্রদত্ত সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া তথ্যের চাইতে বেশি। যদিও সম্প্রতি জেলা কোভিড সংক্রান্ত তথ্য দিচ্ছিল না তথাপি প্রতিদিন কোভিড পরীক্ষা সংক্রান্ত পজিটিভ বা নেগেটিভ যে ফলাফল দেওয়া হয়েছে তার থেকে রাজ্যের বুলেটিনে কোভিড পজিটিভের সংখ্যা বেশি। যদি মেদিনীপুর পৌরসভার কোনও এলাকাকে কন্টেইনমেন্ট জোনের আওতায় আনা হয় তবে এই প্রশ্নটা উঠবে যে শহরেও কি তবে কোভিড আক্রান্ত ছিল! হতেই পারে তা জেলা সরাসরি রাজ্যকে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমকে না জানিয়ে। যাই হোক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে মঙ্গলবার এবং ঘোষনা করবেন জেলাশাসক রশ্মি কমল। তারপরই পরিষ্কার হয়ে যাবে জেলার করোনা চিত্র।
সোমবার মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, কলকাতার কন্টেইনমেন্ট জোন সংখ্যা ৩১৮টি। ৩০ এপ্রিল এই সংখ্যা ছিল ২৬৪। অর্থাৎ চারদিনে বাংলায় যে ৭২টি সংক্রামিত এলাকা বেড়েছে তারমধ্যে ৫৪টিই কলকাতায়। ২৭ এপ্রিল কলকাতার কন্টেইনমেন্ট জোন ছিল ২২৭টি। অর্থাৎ সাতদিনে বেড়েছে ৯১ টি কন্টেইনমেন্ট জোন।
তা ছাড়াও হাওড়ায় কন্টেইনমেন্ট জোন রয়েছে ৭৪টি, উত্তর ২৪ পরগনায় ৮১টি, পূর্ব মেদিনীপুরে ৯টি। গত কয়েকদিনে হুগলির কন্টেইনমেন্ট জোনও বেড়েছে। ৩০ এপ্রিল ছিল ৭টি। চারদিনে তা বেড়ে হয়েছে ১৮টি। হুগলিতে নতুন নতুন এলাকা থেকে সংক্রামিতর হদিশ মিলেছে। সবচেয়ে উদ্বেগের হয়ে দাঁড়িয়েছে চন্দননগরের উর্দিবাজার এলাকা। এছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদহ, দার্জিলিং, কালিম্পং-সহ বেশ কয়েকটি জেলায় দুটি-একটি করে কন্টেইনমেন্ট জোন রয়েছে। মঙ্গলবার এই সংখ্যা ধরেই জেলাগুলি চূড়ান্ত করতে চলেছে স্থানের তালিকা।