খড়গপুর জয়ের পর তৃণমূল জেলা সভাপতি অজিত মাইতি |
নিজস্ব সংবাদদাতা:বিজেপির অঘটনটা টের পাওয়া গেছিল প্রথম রাউণ্ডেই যখন কংগ্রেস আর বাম জোটের প্রার্থী চিত্তরঞ্জন মণ্ডল এগিয়ে ছিলেন। আর তাতেই পরিষ্কার হয়ে গেছিল বাম আর কংগ্রেসের ভোট ফিরে আসতে শুরু করেছে তাদের ঘরেই বলাবাহুল্য এই ভোট গত লোকসভা নির্বাচনে চলে গিয়েছিল বিজেপির ঘরে। উপনির্বাচনে সেই ভোট জোটের ঘরে ফেরা শুরু হতেই ধস নামল বিজেপির। অবশ্য শুধুই খড়গপুর নয় রাজ্যের তিন উপনির্বাচনেই এই চিত্র কম বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
খড়গপুরে বিজেপির এই পরাজয় কার্যত সারা রাজ্যেই বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের পরাজয় হিসাবেই চিহ্নিত হবে কারন এই আসন থেকে তাঁকে জিতিয়ে ছিল খড়গপুর বাসি। খড়গপুরের ভুগোল বদলে দেওয়ার নামে ভোট লড়েছিলেন তিনি পরিনামে ভুগোল তো দুরের কথা এক কাটা জমিরও পরিবর্তন করতে পারেননি তিনি। খড়গপুরের গোলবাজার সহ রেল এলাকার ব্যবসায়ীরা তাঁকে লোকসভাতেও জিতিয়ে ছিলেন এই প্রত্যাশা নিয়ে যে রেলের সঙ্গে আলাপ আলোচনায় গিয়ে তিনি তাঁদের বিদ্যুৎ, জল, দোকান সংস্কার নিয়ে কিছু কাজ করবেন কিন্তু না, সেখানেও হতাশ হয়েছেন তিনি আর তারই পরিনাম পেল বিজেপি হাতে নাতে। মাত্র ৬মাস আগে প্রায় ৪৬হাজার ভোটে এই বিধানসভা এলাকায় লিড পাওয়া বিজেপিকে হারের মুখ দেখতে হল।
বিধায়ক নির্বাচিত হলেন প্রদীপ সরকার |
পঞ্চম রাউণ্ডে সমস্ত ব্যবধান ঘুচিয়ে ৫৪৮২ ভোটে এগিয়ে গেছিলেন তৃণমূলের প্রদীপ সরকার। এরপর প্রতিটি রাউন্ডয়েই ব্যাবধান বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ১০রাউণ্ডে সেই ব্যাবধান দাঁড়ায় ১৫হাজার ৪৫৩। তখনই পরিষ্কার হয়ে যায় বিজেপির ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা কার্যত শেষ।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
১২রাউণ্ড শেষে সেই ব্যাবধান পৌঁছে যায় ১৬ হাজার ১৭৭। আর শেষ অবধি সেই ব্যাবধান গিয়ে দাঁড়াল ২০হাজার ৮১১। ১৬ রাউন্ড গননা শেষে তৃণমূল প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ৭২হাজার ৪২৪, বিজেপি ৫১হাজার ৬১৩ এবং জোট প্রার্থী পেয়েছেন ২২হাজার ৫৩০। লোকসভায় খড়গপুর সদরের প্রায় ৪৬হাজার ব্যাবধান মুছিয়ে এই জয় তৃণমূলের জন্য বিশাল জয় বলেই চিহ্নিত হল।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
শুধু খড়গপুর নয়, কালিয়াগঞ্জ, করিমপুরেও ধাক্কা খেয়েছেন দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে থাকা বিজেপি। আর এই ধাক্কা দলের অন্দরেই তুলে দিয়েছে বড় প্রশ্ন। খড়গপুরের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটা শুরু হয়েছিল প্রার্থী নির্বাচনকে দিয়েই। খড়গপুরের নব্বই শতাংশ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে গিয়ে প্রেমচন্দ্রকে ঝা কে প্রার্থী করেছিলেন তিনি। জমির মাফিয়া হিসাবে ততদিনে ঝা খড়গপুরে বদনাম কুড়িয়েছেন।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এক স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারের জমি হাতিয়ে নেওয়ার আভিযোগে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবুও তাঁকেই প্রার্থী করেছেন দিলীপ। বিজেপির নিচু স্তরের কর্মীরাই বলেছিলেন, যেমনটা দুর্বল প্রতিপক্ষ প্রার্থী চেয়েছিল তৃনমূল ঠিক তেমনই দুর্বল প্রার্থী দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
সব শেষে এই লড়াই গিয়ে দাঁড়িয়েছিল রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বনাম দিলীপ ঘোষের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী শুভেন্দুকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিজেপির হাত থেকে এই আসন ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য। আর রাতদিন এক করে সেই লড়াইটা লড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
বুলবুল ঘূর্ণিঝড় যখন ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে তাঁর জেলা তখন রাত জেগেছেন দিঘা হলদিয়াতে ভোরে নন্দীগ্রাম খেজুরি হয়ে দিনের বেলায় খড়গপুরে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পদযাত্রা করেছেন। জয় তাই তাঁকেও এগিয়ে দিল অনেকটাই।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
তবে তিন উপনির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের বীজ রয়েছে অমিত শাহ আর মোদীর দাম্ভিকতা আর ঔদ্ধত্বের মধ্যেও। বাংলায় এনআরসি করবই আর একের পর এক সরকারি সংস্থার বিলগ্নীকরণ চলবেই এর জবাবও এসেছে সপাটে। মাত্র ৬মাস আগে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসে মোদী আর শাহ যে গা জোয়ারি মনোভাব দেখিয়ে চলেছেন তারই জবাব মিলল বাংলার উপনির্বাচনে।