নিজস্ব সংবাদদাতা: এক ভয়ঙ্কর, অমানবিক, পৈশাচিক নিষ্ঠুরতা দেখল পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ী থানার এক গ্রাম। কুয়ো নিয়ে বিবাদের জেরে প্রৌঢ় বাবা আর তার ছেলেকে মেরে রক্তাক্ত করে ফের পশুকে বাঁধার মত খুঁটিতে বেঁধে মারা হল। তারপর রৌদ্রতপ্ত কংক্রিটের রাস্তায় ফেলে রাখা হল ঘন্টার পর ঘন্টা। যে ছবি উঠে এসেছে তা মাওবাদী আমলের বীভৎসতাকে ছাড়িয়ে গেছে। গ্রামবাসীদের একাংশের ঘটানো এই নারকীয় ঘটনার বিন্দু বিসর্গ নাকি জানতেননা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য এমনটাই দাবি করেছেন তিনি! কয়েকঘন্টা পর পুলিশ গিয়ে পিতাপুত্রকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ঘটনাস্থল কেশিয়াড়ী থানা থেকে প্রায় ১৮কিলোমিটার দুরে কুসুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মৎনগর মৌজার মড়াডিহি এলাকায়। এই এলাকায় বাড়ি বিমল বাগের। বছর সাতান্ন আটান্নর বিমলের দাবি তাঁদের নিজেদের একটি কুয়ো রয়েছে যা একসময় গ্রামের প্রায় প্রত্যেক পরিবার ব্যবহার করত। তাঁরা সানন্দে তা ব্যবহারের অনুমতিও দিয়েছিলেন কারন তখন গ্রামে পানীয়জলের উৎস এই কুয়োটাই ছিল। ইদানিং গ্রামে সাবমার্সিবল পাম্প হয়েছে, কয়েকটি টিউকলও রয়েছে। মাত্র গুটি কয়েক পরিবার কুয়ো থেকে জল নেয় তাও তারা ইচ্ছা করেই নেয় কুয়োটার দখল না রাখার জন্য। বিমলের কথায়,’ ওরা ওখান থেকেও জল নেয় আবার আমার কুয়ো থেকেও নেয় যাতে কুয়োটা চিরকাল আমাদের পরিবারের দখলের বাইরেই থেকে যায়।’
কয়েক দিন আগে বিমল এবং তাঁর ছেলে কৃষ্ণ কুয়োটা বেড়া দিয়ে ঘিরতে গিয়েছিল কিন্ত গ্রামের লোক বাধা দেয়। তারা জানায়, কুয়ো ঘেরা যাবেনা। শনিবার ফের পিতা পুত্র মিলে কুয়োর চারপাশে বেড়া দিতে গেলে গ্রামের কয়েকজন মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে তেড়ে আসে। পিতা পুত্রের সঙ্গে মারামারি লেগে যায়। প্রায় ২৫ জনের সঙ্গে ২জন পেরে ওঠেনি। লাঠির আঘাতে দু’জনকে শুইয়ে দেওয়া হয়। তারপর গরুর খুঁটির মত খুঁটি পুঁতে দুজনকেই বেঁধে ফেলে রেখে ফের মারধর করা হয়। এরপর রোদে তাতা গ্রামের কংক্রিট রাস্তার ওপরে ফেলে রাখা হয় দুজনকেই। পরিবারের অভিযোগ জল পর্যন্ত দিতে দেওয়া হয়নি তাঁদের।
ঘটনার কয়েকঘন্টা পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে আনে পিতাপুত্রকে। এই ঘটনার পেছনে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য অজয় রায়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনায় তাঁর প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে এমনই অভিযোগ বিমলের পরিবারের। তিনি চাইলে এই ঘটনা ঘটতইনা বলে জানিয়েছেন বিমলের পরিবারের মহিলা সদস্যরা। যদিও অজয় রায়ের বক্তব্য তিনি ওই সময় গ্রামেই ছিলেননা। পুলিশের কাছ থেকে নাকি তিনি খবর পেয়েছেন।
যদিও দায় এড়াতে অজয় ইচ্ছা করেই সরে গিয়েছিলেন এবং অন্য জায়গা থেকে তিনি গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছিলেন এমনটাই গ্রামেরই একটা অংশ যারা এই নৃশংসতা মেনে নিতে পারেননি কিন্তু ভয়ে গ্রামের বিরোধিতা করতে পারেননি তারাই জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, পুলিশকে যারা খবর দিয়েছিল তাঁরাই বিষয়টি আগে অজয় রায়কে জানিয়েছিলেন এমনকি বিমলদের ওপর হামলা করতে যাওয়ার আগেই পঞ্চায়েত সদস্যের সঙ্গে কয়েকজন কথা বলেছিল। পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে।