নিজস্ব সংবাদদাতা: ৪৮ ঘন্টা আগে তুই তোকারি করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারীকে। বলেছিলেন, ‘মমতা ব্যানার্জী না থাকলে পৌরসভার গেটে আলু বেচতিস।’ আর বৃহস্পতিবার বললেন, ‘শুভেন্দু খুব ভাল ছেলে, শিশিরদাকে আমি পিতার মত শ্রদ্ধা করি।’ ২৪ ঘন্টা পের হলনা ফের মুখ খুললেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার বললেন যে তিনি তাঁর বাবার রাজনৈতিক ঐতিহ্য নিয়ে রাজনীতিতে আসেননি। অর্থাৎ শুভেন্দু যেমন শিশির অধিকারীর সূত্রে রাজনীতিতে এসেছেন সেরকমটা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আসেননি।
শুক্রবার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা হুগলির বলাগড়ে একটি জনসভায় উপস্থিত শুভেন্দু অধিকারী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেন, ‘কোনও জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে অশালীন ভাষায় ব্যক্তিগত আক্রমণ কাম্য নয়।” উল্লেখ্য দিন কয়েক আগেই শুভেন্দুকে আক্রমণ করে কল্যাণ বলেছিলেন, ‘৪টি মন্ত্রিত্ব পেয়েছিস, ৪টে চেয়ারে আছিস। কত পেট্রোল পাম্প করেছিস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে পুরসভার বাইরে আলু বিক্রি করতিস।’ তাঁর এও কটাক্ষ ছিল যে, ‘হিম্মত থাকে তো ছেড়ে দিয়ে চলে যাও। ৪৮ ঘণ্টা বিপ্লব দেখানোর পর এখনও মন্ত্রীত্বের লোভ কেন? এখনও বোধহয় জানানো হয়নি মুখ্যমন্ত্রী হবে নাকি উপ মুখ্যমন্ত্রী হবে?’
শুক্রবার বলাগড়ে সেই প্রসঙ্গ টেনেই শুভেন্দু জনতার উদ্দেশ্যে কারওনাম না করে বলেন, ‘প্রাক্তন সাংসদ অনিল বসু যখন কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে অশালীন কথা বলতেন তখন কিন্তু হুগলির মানুষ তা সমর্থন করেননি। আজ যদি কোনও বর্তমান জনপ্রতিনিধিও আমাকে বা আমার পরিবারকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে। আপনারা কি তাঁকে সমর্থন করবেন? আপনারা কি এই কালচার সমর্থন করেন?’ সভায় উপস্থিত জনগণের কাছ থেকে সমস্বরে উত্তর আসে, ‘না’।
নিজের জেলায় এসে শুভেন্দুর সেই বক্তব্যকে মানতে পারেননি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘বাবা কোনও রাজনৈতিক দলের পদাধিকারী, এই সুযোগ নিয়ে কিন্তু আমি রাজনীতিতে আসিনি। আমি কিন্তু বড় হয়েছি অনেক পরিশ্রম করে।’
এদিন শুভেন্দুর নন্দীগ্রাম নিয়ে আন্দোলনকে কটাক্ষ করে কল্যাণ বলেন, “আমি যদি নন্দীগ্রামে সিবিআইয়ের অর্ডার না করাতাম তবে রাজনৈতিক নেতারা ঘর থেকে বেরোতে পারত না। ওই অর্ডার হওয়ার পরই সব ঘর থেকে বেরিয়েছিল। এগুলো মনে রাখতে হবে।” পাশাপাশি শুভেন্দুকে খোঁটা দিয়ে তাঁর বক্তব্য, “দলে থেকে কেউ যদি দলের কোনও জনপ্রতিনিধিকে যদি সমালোচনা করে তবে বুঝতে হবে যে অন্য দলের সঙ্গে তাঁর আঁতাত অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।’
শুভেন্দু বলাগড়ের সভায় বলেন, ‘রাজনৈতিক সমালোচনা তো হবেই, সমালোচনার উর্ধ্বে কেউ নই। কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রমণ মেনে নেওয়া যায় না।’ এর পাল্টা কল্যাণের জবাব, ‘একটা সময় ওখানে দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা ছিলেন লক্ষ্মণ শেঠ। তাঁরও অহঙ্কার ছিল। কিন্তু সেই অহঙ্কারই তাঁকে শেষ করে দিয়েছে।’
উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার রামনগরের জনসভায় শুভেন্দু বলেছিলেন, ” আমি এখনও মন্ত্রী রয়েছি। মমতা ব্যানার্জী আমাকে তাড়িয়ে দেননি আর আমিও ছেড়ে আসিনি। দলে থেকে দলের সমালোচনা করবনা।” এরফলে নতুন গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। অনেকেই মনে করেন যে বরফ গলল, শুভেন্দু থেকে যাচ্ছেন তৃনমূলেই। এরপরই কল্যান গদগদ হয়ে বলেন, ” শুভেন্দু খুবই ভাল ছেলে। ও ঠিকই কথা বলেছে দলে থেকে দলের সমালোচনা ও করবেনা। আমি শিশিরদাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি। ওঁদের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক…..” তারপর ফের ২৪ঘন্টায় কল্যাণের এই পাল্টি রাজনীতিতে নতুন করে গুঞ্জন তৈরি করল।