নিজস্ব সংবাদদাতা: একটা গ্রামে মাওবাদীদের হাতে এত খুন সম্ভবতঃ আর কোনও গ্রামে হয়নি! ২০০৯ সালের শীতের সকাল অভিজিৎ মাহাত, নীলাদ্রি মাহাত সহ তিন ছাত্র যুবর লাশ দেখেছিল জাতীয় সড়কের ডাকাত উমাকান্ত মাহাতর বাঁকশোল গ্রাম। ডাকাত উমাকান্ত ততদিনে মাওবাদীদের ছোঁয়ায় বিপ্লবী! জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার নায়ক সেই উমাকান্তের নেতৃত্বে ততদিনে ঝাড়গ্রামের পাটা শিমুলগ্রামে ততদিনে অভিজিৎ নীলাদ্রির মতই লাশ হয়ে শিক্ষক অনিল মাহাত, গুরুচরণ মাহাত, বাবলু মাহাত, টোটন পড়িয়ারী, কেশব মাহাত, কানাই রায় মিলিয়ে ১৩ জন!
ঝাড়গ্রাম জেলার সেই ১৩শহিদের গ্রামে ঢুকতে গিয়ে গ্রাম বাসীদের তীব্র বাধার মুখে পড়তে হল জঙ্গলমহলে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সৈনিক ছত্রধর মাহাতকে। নজির বিহীন বিক্ষোভ থেকে প্ল্যাকার্ড নিয়ে আওয়াজ উঠল খুনি ছত্রধর মাহাত দূর হটো।
শুধুই ছত্রধর মাহাত নয়, ছত্রধরের সংগে থাকায় বাধার মুখে পড়তে হয় ঝাড়গ্রাম ব্লক তৃনমূলের সাংগঠনিক সভাপতি নরেন মাহাত, ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের সভাপতি রেখা সরেন এবং বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মামনি মুর্মু সহ এক গুচ্ছ নেতাকে। ঘটনার খবর পেয়েই এলাকায় ছুটে যায় ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের একটি বাহিনী। জনতা পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পুলিশ ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। আন্দোলনকারী জনতার বক্তব্য, তাঁরা ছত্রধর মাহাতকে গ্রামে ঢুকতে দেননি যদিও মাহাতর দাবি পরে তিনি গ্রামে ঢুকে মিটিং করেছেন।
পাটাশিমুল গ্রামের মাওবাদীদের হাতে নিহত পরিবারের এক বিক্ষোভ কারি বাসিন্দা জানিয়েছেন, “আমরা খবর পেয়েছিলাম যে আমাদের গ্রামে মাওবাদীদের সাগরেদ জনসাধারণের কমিটির নেতা খুনি ছত্রধর আসবে। তাই আমরা আগেভাগেই তৈরি হয়েছিলাম। ও গ্রামে ঢোকার মুখেই ওর পথ আটকাই আমরা। এই গ্রামে আমরা ওকে ঢুকতে দেয়নি আর কোনও দিন দেবনা। আমাদের প্রশাসনের সঙ্গে কোনোও বিরোধ নেই।”
জানা গেছে সোমবার দুপুর ৩টা নাগাদ তৃনমূলের ভোট কুশলী প্রশান্ত কুমারের নবতম ভোট পুরিয়া ‘বঙ্গ ধ্বনি’ প্রচার করার জন্য ঝাড়গ্রাম জেলার ঘন জঙ্গল বেষ্টিত গ্রাম পাটাশিমুলে যাচ্ছিলেন ছত্রধর মাহাত। তিনটি গাড়ি নিয়ে ঝাড়গ্রাম থেকে রওনা দেন তাঁরা। হাওড়া-মুম্বাই ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ঘেঁষা এই গ্রামে এক সময় মাওবাদীদের অধ্যুষিত এই গ্রামে ঢোকার মুখে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা পথ আটকায় তিনটি গাড়ির। হাতে খুনি ছত্রধর মাহাত দূরহটো প্ল্যাকার্ড ছিল তাঁদের। প্রায় ৫০জন মত পুরুষ মহিলা রাস্তা আটকায়। কয়েকজন রাস্তায় বসেও পড়ে।
এরপরই আটকে পড়া তৃনমূল নেতারা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ছুটে আসে ঘটনাস্থলে। পুলিশ আধিকারিকরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। বিক্ষোভ কারীরা প্রশ্ন তোলেন সরকারের ঘোষণা ছিল মাওবাদীদের হাতে নিহত ব্যক্তিদের নিকট আত্মীয়কে চাকরি দেওয়া হবে সেই চাকরি তাঁরা পাননি অথচ যে ছত্রধরের লোকেরা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের খুন করেছে সেই ছত্রধরের বাড়িতে একাধিক চাকরি কেন? কেন প্রশাসন খুনি ছত্রধরকে সুরক্ষা দিচ্ছে? প্রায় ঘন্টা খানেক বিক্ষোভে আটকে থাকার পর ছত্রধর মাহাত ফিরে যান বলে গ্রামবাসীদের দাবি।
যদিও ছত্রধর মাহাত দাবি করেছেন পরে তিনি ওই গ্রামে গিয়ে সভা করেছেন। ছত্রধর মাহাত ‘দ্য খড়গপুর পোষ্ট’কে জানিয়েছেন, “বিজেপির লোকেরা কয়েকজনকে পাঠিয়েছিল গন্ডগোল করার জন্য। কয়েকজন মদ্যপ অবস্থায় আমাদের গাড়ি আটকায়। ওরা আমাদের রাস্তায় বসে পড়ে। আমরা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ আসে। সমস্যা মিটে গেছে এবং আমরা পরে গিয়ে সভা করেছি।” বিক্ষোভ কারীরা অবশ্য দাবি করেছেন তাঁরা বিজেপির লোক নয়। নিহত ব্যক্তিরা সবাই লাল ঝান্ডার মানুষ ছিলেন এবং তারাও লালঝান্ডা নিয়েই বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন।