নিজস্ব সংবাদদাতা: পশ্চিম মেদিনীপুরে বেআইনি বালি খাদান চক্র ভাঙতে যখন পুলিশের তৎপরতা তুঙ্গে উঠেছে তখন পাশের জেলা ঝাড়গ্রামে বালি গাড়ির ধাক্কায় একই দিনে প্রাণ হারালেন এক গৃহবধূ সমেত ২জন। মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ঘটনা দুটি ঘটেছে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর ও সাঁকরাইলে। বালি গাড়ির ধাক্কায় এই দুই মৃত্যুকে ঘিরে ফুঁসছে দুই এলাকার মানুষেরা।
রবিবার দুপুরে প্রথম ঘটনাটির খবর আসে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া থানার চোরমুন্ডি এলাকায়। জানা গেছে ওই থানারই সাতমা থেকে একটি বাইকে করে এক গৃহবধূ সহ তিনজন গোপীবল্লভপুর ২ নম্বর ব্লকের কুলিয়ানা গ্রামে বিবাহ উপলক্ষ্যে প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। চোরমুন্ডি চকে হঠাৎ করে রাস্তার ওপরে এক সাইকেল আরোহীকে পাশ কাটিয়ে বাইকটি রাস্তার পাশে পড়ে থাকা বালিতে পিছলে পাশ দিয়ে যাওয়া বালি বোঝাই ডাম্পারের গায়ে লেগে যায়।
ডাম্পারের গায়ে ধাক্কা লেগেই ভারসাম্য হারিয়ে বাইকটি উল্টে গেলে পেছনে থাকা গৃহবধূ বাইক থেকে পড়ে ডাম্পারের পেছনে চাকায় ঢুকে গিয়ে পিষ্ট হয়ে যান। ঘটনার খবর পেয়ে আহত বাইক আরোহীদের উদ্ধার করে গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা চম্পাবতী দন্ডপাট নামে বছর ৩৩ এর গুরুতর আহত বাইক আরোহী মহিলাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এলাকায়। মানুষের অভিযোগ, গোপীবল্লভপুরের কুঠিঘাট চোরমুন্ডী থেকে ৯ নম্বর রাজ্য সড়কের বাহারুনা পর্যন্ত বালি গাড়ির দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষের পথ নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে। বেপরোয়া বালি গাড়ির কবলে দুর্ঘটনার পাশাপাশি পুরো রাস্তা জুড়ে পড়ে থাকা বালির পুরু স্তরের কারনে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে বলে মানুষের অভিযোগ।
এদিন দ্বিতীয় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল থানার অন্তর্গত মুরগিপাড়ার পাশে কুশমিখাল ব্রীজের কাছে। কুলটিকরি থেকে রোহিনী যাওয়ার পথে ২৮ বছরের বাইক চালক ধবনী গ্রামের লাল্টু সিংকে ধাক্কা মেরে তার ওপর দিয়ে চলে যায় একটি বালি খালি করে ফিরতি পথের ডাম্পার। লাল্টুর দেহের নিম্ন ভাগের অর্ধাংশ পিষে দিয়ে ডাম্পারটি পাশের ক্ষেতে নেমে যায়। সাঁকরাইল পুলিশ মৃত দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঝাড়গ্ৰাম জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে।ঘাতক গাড়িটিকে পুলিশ আটক করলেও চালক পলাতক।
পশ্চিম মেদিনীপুরে অবশ্য বেআইনি বালি খাদান ও গাড়িগুলির বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান আরও তীব্র করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানিয়েছেন, গত ২৪ঘন্টায় পুলিশ বেআইনি বালি কারবারের সঙ্গে যুক্ত ২৩জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ১০টি বালি ভর্তি গাড়ি সহ মোট ৪৪টি নানা ধরনের গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ২টি বালি তোলার মেশিন ও ১টি জেসিপিও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ২৬টি মামলা রুজু করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি মজুত বালির কেন্দ্র পুলিশের আয়ত্তে নেওয়া হয়েছে। জেলার ৫টি জায়গায় সর্বক্ষণের নাকা চেকিং শুরু হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে নজরদারির জন্য। প্রচ্ছদের ছবিটি পশ্চিম মেদিনীপুরে পুলিশের তৎপরতার