Homeএখন খবরকরোনা অব্যবস্থা! জেলার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন রুগির পরিবার,চিকিৎসকরা! অবরোধ, অবস্থানে নাজেহাল...

করোনা অব্যবস্থা! জেলার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন রুগির পরিবার,চিকিৎসকরা! অবরোধ, অবস্থানে নাজেহাল ঝাড়গ্রাম! উমার আশ্বাসে উঠল বিক্ষোভ

নিজস্ব সংবাদদাতা: তুষের আগুনের মত ধিকিধিকি জ্বলছিল ক্ষোভ, ক্ষোভ রুগির আত্মীয়দের, ক্ষোভ চিকিৎসকদের। শুক্রবার সেই ক্ষোভ নজির বিহীন ভাবেই ফেটে পড়তে দেখা গেল ঝাড়গ্রাম শহরে। নজিরবিহীন এই কারনেই যে রোগির পরিজন আর চিকিৎসকরা একই ভাবে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন জেলা প্রশাসন আর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের বিরুদ্ধেই। ঘটনা ঘটেছিল করোনা আক্রান্ত এক যুবকের মৃত্যুকে ঘিরে যা শেষ অবধি পর্যবসিত হল জেলা শাসক আর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বিরুদ্ধে। রোগির পরিবার সহ বিক্ষুব্ধ জনতা যখন দাবি তুলছেন যে করোনার আসল চিত্র লুকাচ্ছে জেলা প্রশাসন তখন চিকিৎসকদের বলতে শোনা গেল তাঁদের হাতে রিপোর্টই তুলে দিচ্ছেনা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অর্থাৎ দিনের শেষে সাধারন মানুষের দাবি আর চিকিৎসকদের দাবি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল।

ঘটনার সূত্রপাত ঝাড়গ্রাম শহরের উত্তরবামদা এলাকার এক ২৮ বছরের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগে শারীরিক অবনতির কারনে গত ১৬ তারিখ সকালে তাঁকে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসে তাঁর পরিবারের লোকজন। শাররীক অবস্থা খারাপ এবং করোনার উপসর্গ থাকার কারনে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়। এরপর রিপোর্ট পজেটিভ আসার কারনে তাঁকে ১৬ তারিখ সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম করোনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । শুক্রবার প্রায় রাত্রি ৯ টার সময় করোনা হাসপাতালে মৃত্যু হয় যুবকের।

শুক্রবার রাত থেকেই চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে ঝাড়গ্রাম করোনা হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখায় সত্যনারায়ণের পরিবারের লোকজন এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। শনিবার সকাল ১০টার পর হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল চত্ত্বর । দফায় দফায় ঝাড়গ্রাম বাঁকুড়া পাঁচ নম্বর রাজ্য সড়ক অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। অবরোধে সামিল হয় সিপিএম ও বিজেপি । ঝাড়গ্রাম জেলা সিপিএমের সম্পাদক পুলিন বিহারী বাস্কে। পুলিন বাস্কে প্রশ্ন তোলেন , যদি ওই যুবক করোনা পজিটিভ হয় তাহলে তাঁর পরিবারের লোকজনকে করেন্টাইনে রাখা হল না কেন। হঠাৎই জানানো হল রোগির মৃত্যু হয়েছে। কেন তাঁর সঠিক চিকিৎসা হল না। যতক্ষণ না এর সদুত্তর আসছে ততক্ষন পর্যন্ত পথ অবরোধ চলবে। পুলিশ দীর্ঘক্ষণ বুঝিয়ে পথ অবরোধ তুলতে সমর্থ হয়।

অবরোধ উঠে যাবার পর হঠাৎ করে মৃত যুবকের পরিবারের লোকজন ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অর্নাশিস হোতা কে সামনে পেয়ে মারধর করা হয় । এই ঘটনার পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসক মহল । হাসপাতালে চিকিৎসক  নিগ্রহের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এবং এর উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়ে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বহির্বিভাগ বন্ধ করে এবং হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ছাড়া চিকিৎসক, নার্স হাসপাতালের সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা বিক্ষোভে সামিল হন। খোদ ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল সরকার হাসপাতালের বহির্বিভাগের বাইরে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন ।

প্রথমে বিক্ষোভ নিরাপত্তার দাবিতে হলেও ক্রমশ বিক্ষোভকারিরা জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের বিরুদ্ধেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা জানান, জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের গাফিলতির জন্য রোগির পরিবারের সঙ্গে চিকিৎসকদের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। জেলার পক্ষ থেকে করোনা হাসপাতাল করা হলেও তার পরিকাঠামো গত উন্নতি করা হয়নি। জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদেরই করোনা হাসপাতালে কাজ করতে হচ্ছে, অন্য হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক দেওয়া হচ্ছেনা।

সুপার দাবি করেন, ‘আমাদের কোনও পর্যাপ্ত কর্মী দেওয়া হচ্ছেনা। কারা আক্রান্ত কারা নয় সেই রিপোর্ট দেওয়া হয়না। আমরা কী করে চিকিৎসা করব? আমরা আক্রান্ত হওয়ার পর আশা করেছিলাম যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে কিন্তু কেউ আসেনি।’
ওদিকে বাইরে বিক্ষোভরত চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মীরা আওয়াজ তোলেন, “করোনা সংক্রান্ত রিপোর্ট আড়াল করা হচ্ছে, রিপোর্ট বদলে দেওয়া হচ্ছে।” এটা ঘটনা যে ঝাড়গ্রাম জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অদ্ভুদ গোপনীয়তা লক্ষ্য করা যায়। বিষয়টি নিয়ে ঝাড়গ্রামের সর্বস্তরেই ক্ষোভ ছিল কিন্তু তা চিকিৎসা মহলেও ছিল তা পরিষ্কার হয়ে যায় এদিন। শেষ মেশ ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন সংসদ ডাক্তার উমা সরেন ঘটনাস্থলে যান। বিক্ষোভরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন।তিনি আশ্বাস দেন নিজে মূখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সমাধান করবেন অথবা তিনিও সামিল হবেন বিক্ষোভে। এই আশ্বাসের পর ৬ঘন্টা পর অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নেন চিকিৎসকরা।

RELATED ARTICLES

Most Popular