নিজস্ব সংবাদদাতা: এক দশক পরে ফের মন্ত্রী সবং থেকে এবং ফের মন্ত্রী সেই মানস ভূঁইয়া। ১০ বছর আগে মন্ত্রিত্ব স্থায়ী হয়েছিল ১৬ মাস। ২০১১ সালে তৃনমূল আর কংগ্রেস জোট সরকারের সেচ দপ্তরের মন্ত্রী হয়েছিলেন মানস ভূঁইয়া কিন্তু ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইউপিএর সংগে সম্পর্ক ছেদ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে সরে আসেন ভূঁইয়া। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের মন্ত্রীত্বেই কামাল করে দিয়েছিলেন তিনি। মাথার ওপর পেয়ে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার বর্ষীয়ান সদস্য প্রণব মুখার্জীকে। ফলে কেলেঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কারের জন্য বরাদ্দ করাতে পেরেছিলেন কয়েকশ কোটি টাকা অন্যদিকে ডেবরা থেকে সবং অবধি কেন্দ্রীয় সড়ক মন্ত্রকের টাকা বরাদ্দ করাতে সক্ষম হন তিনি।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ আর যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভোল বদলে যায় সবং সহ সংলগ্ন এলাকার। যে কারনে সবংয়ের আসন পাকা করে নেন তিনি। তাই ২০১৬ সালে তৃনমূলের হৈ হৈ জয়ের মধ্যেও সিপিএমের হাত ধরে ফের কংগ্রেস থেকে বিধায়ক পদে জয়ী হন। খেলা অবশ্য শুরু হয় এই জয়ের পরেই। নির্বাচন চলাকালীনই এক তৃনমূল কর্মীর খুনের মামলায় পুলিশ মানস ভূঁইয়া সহ সবংয়ের প্রথম সারির নেতাদের নামেই এফআইআর করে। তখন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। মুখ্যমন্ত্রীর একান্ত অনুগ্রাহী, বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন ভারতী ঘোষের সেই খুনের মামলা থেকে রেহাই পেতেই মানস ভূঁইয়া সহ তাঁর অনুগামীরা চলে যান তৃণমূলে। ভারতীর উদ্দেশ্য সাধন হয়, ওই মামলা থেকে বেকসুর খালাস হন মানস এবং তাঁর অনুগামীরা। মানস পদত্যাগ করেন বিধায়ক পদ থেকে চলে যান তৃনমূলের টিকিটে রাজ্যসভায়। বিধায়ক পদে এবার নির্বাচিত হন মানস জায়া গীতা ভূঁইয়া।
২০২১ বিজেপির সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সেই ফের রাজ্যসভা থেকে সবং লড়ার জন্য নিয়ে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই লড়াই জিতে মানস দেখিয়ে দিলেন সবংয়ের মাটিতে আজও অপ্রতিহত মানস ভূঁইয়া। বিজেপির ভরা বাজারে এই লড়াইটা শুধু বিজেপিই নয় লড়তে হয়েছে সদস্য তৃনমূলত্যাগী একটা শক্তিশালী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে শক্তি যুক্ত হয়েছিল বিজেপির সঙ্গে। পাশাপাশি এই আসন ছিল শুভেন্দু অধিকারীর নিজস্ব নজরদারিতে। ফলে এই জয় মানসকে একটি অবিসংবাদিত নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা করেছে নিশ্চিতভাবে। তাঁকে জলসম্পদ উন্নয়নের মন্ত্রী করে সেই জয়কে মান্যতা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে তাঁদের মানসদা মন্ত্রী পদে শপথ নেবে বলে সকাল থেকেই দলীয় কার্যালয়ে জায়েন্ট স্ক্রিনের টিভি লাগিয়ে বসে ছিলেন সবংয়ের তৃনমূল নেতা কর্মীরা। সবং ব্লক তৃনমূল সভাপতি অমল পান্ডা, কর্মাধক্ষ্য আবু কালাম বক্স, স্বপন মাইতি সহ এক গুচ্ছ নেতা কর্মী করোনা বিধি মেনেই নির্দিষ্ট দূরত্বে বসেই সেই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান দেখেন। চলে মিষ্টি মুখও। এই নেতাদের আফসোস করোনা পরিস্থিতির জন্য তাঁরা সরাসরি রাজভবনে উপস্থিত থাকতে পারলেননা বলে। অগত্যা দুধের স্বাদ মেটাতে হয়েছে ঘোলেই।
সোমবার মানস ভূঁইয়ার সাথে আরও দুজন মন্ত্রী শপথ নিয়েছেন যাঁরা আগে অন্যকোনও দলের মন্ত্রী ছিলেন। এঁরা হয় বামফ্রন্ট সরকার অথবা তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেস জোট সরকারের। মানস ভুঁইয়া বাকি দুজন হলেন পরেশ অধিকারী এবং সাবিনা ইয়াসমিন। মালদার মোথাবাড়ি কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন এবং জিতেছেন। সোমবার মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। মানসের মতই সাবিনা ২০১১ সালে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেস জোট সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। তখন তিনি ছিলেন কংগ্রেসে। এবার তৃণমূল মন্ত্রিসভার সদস্য হলেন। তাঁকে দেওয়া হল সেচ ও জলপথ এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব।
অন্যজন হলেন পরেশচন্দ্র অধিকারী। তিনি কুচবিহারের মেখলিগঞ্জ থেকে তৃণমূলের টিকিটে ভোটে দাড়িয়েছিলেন এবং জিতেছেন। এর আগে বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। তখন তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে সেই দল ছেড়ে তিনি বছর কয়েক আগে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। তিনি হয়েছেন স্কুল শিক্ষা দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে এই রেকর্ড ছিল আবদুর রেজ্জাক মোল্লা। তিনি বামফ্রন্টের মন্ত্রী ছিলেন। তবে দলের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে পরে যোগ দেন তৃণমূলে। যদিও এবার টিকিট পাননি রেজ্জাক।