গাড়ির ভিতরে ভয়ে কুঁকড়ে রয়েছে কুকুরের দল |
নিজস্ব সংবাদদাতা: আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাস থেকে নির্বিচারে তুলে নেওয়া হচ্ছে পথ কুকুরদের তারপর ভ্যানে কোনও অদৃশ্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর হদিস মিলছেনা কুকুর গুলির। অবলা প্রানীদের প্রতি নিষ্টুরতার এই আচরনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে খড়গপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ট্যুইটও করেছেন তারা। তাঁদের আরও দাবি শীঘ্রই আইআইটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশে এফ.আই.আর করতে চলেছেন তাঁরা।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির অন্যতম কর্ণধার বরুন পাল জানিয়েছেন, ” আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষ মাস তিনেক আগে একটি পশুপ্রেমের নোটিশ জারি করে সমস্ত বিভাগকে জানিয়েছিলেন যে, ক্যাম্পাসের ভেতরে কোনও অবলা প্রানীর প্রতি দুর্ব্যবহার করা চলবেনা। যদি পথেরও কুকুর হয় সেক্ষেত্রেও তাদের মারধর, অত্যাচার করা যাবেনা। কিন্তু ওটা যে নেহাৎই একটি ভেক নোটিশ তা প্রমান হয়ে গেছে গত কয়েকদিনেই। কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ মদতে আইআইটির নিরপত্তারক্ষীরা ক্যাম্পাস থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে কুকুর তুলে হাপিশ করে দিচ্ছে।”
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসের মধ্যেই অবস্থিত হিজলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রুমা রায় জানিয়েছেন, ”মঙ্গলবার আমার বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় কয়েকটি শাবক সমেত ১০টি কুকুর। এদের আমি ছোটবেলা থেকেই খাবার দিয়েছি, অসুস্থ হলে শুশ্রুষা করেছি। খবর পেয়েই আমি ছুটে যাই আইআইটির সিকিউরিটি কন্ট্রোল রুমে। সেখানে আমাকে রীতিমত বিচ্ছিরি ব্যবহার করা হয়। আমার শিক্ষিকা পরিচয় জানার পরও রেয়াৎ করা হয়নি। আমার সঙ্গে এক প্রতিবেশিনী গেছিলেন যিনি আইআইটির অস্থায়ী কর্মী। তিনিও কুকুর গুলোকে স্নেহ করতেন। তাঁকে বলা হয় কুকুর ফেরৎ দেওয়ার আবেদন ফিরিয়ে নিতে নচেৎ তাঁর চাকরি চলে যাবে।”
এই ট্যুইট করা হয়েছে মানেকা গান্ধীকে |
রুমা আরও জানান, ‘অনেক অনুরোধ উপরোধের পর আমি চার হাজার টাকা দিয়ে চারটা কুকুর ছাড়াতে সক্ষম হই। আমি আরও টাকা দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু নিরপত্তা আধিকারিকরা বাকিদের ছাড়তে রাজি হয়নি। যে কুকুর গুলোকে ওরা নিয়ে গেছে তারমধ্যে বেশ কয়েকটি শাবক যেমন রয়েছে তেমনই রয়েছে ১৫দিন হল প্রসব করা মা কুকুরও। পড়ে থাকা শাবকগুলির কি হবে কে জানে ?”
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
আইআইটি ক্যাম্পাসের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন , দিনে রাতে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই শতাধিক কুকুর তুলে চালান করে দেওয়া হয়েছে। কুকুরগুলিকে ধরতে ব্যবহার করা হচ্ছে নির্মম পদ্ধতি। প্রথমে খাবারের লোভ দেখিয়ে তাদের ডাকা হচ্ছে তারপর ধরে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপর নারকেল দড়ি দিয়ে কষে বাঁধা হচ্ছে মুখ ও হাত পা। শিক্ষিকা রুমা বলেন, ” এত কষে তাদের বাঁধা হচ্ছে যে মুখ কেটে রক্ত ঝরছে।”
বরুন জানিয়েছেন, ” ইনজেকশন দেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে অমানবিক এবং অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। কোনও পশুকে ঘুমের ইনজেকশন দিতে গেলে তার ডোজ নির্ধারন করবেন একজন ভেটনার বা পশু চিকিৎসক। পশুর ওজন, গঠন ও সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে সেই ডোজ । এক্ষেত্রে কিভাবে ডোজ নির্ধারন হচ্ছে । এরফলেই যে অনেক কুকুর বিশেষত শাবক মারা পড়ছেনা গুলি মারা পড়ছেনা তা কে বলতে পারে ?”
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
রুমা জানিয়েছেন, ” আমাকে যে কুকুর গুলো কোনও রসিদ ছাড়াই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের ইতোমধ্যেই ইনজেকশন দেওয়া হয়ে গেছিল। গাড়িতে করেই ওরা কুকুর গুলো ফেরৎ দিয়ে যায়। প্রায় ৩০ঘন্টা পের হয়ে গেলেও ওদের নিস্তেজ ভাব কাটছেনা , মাথাই তুলতে পারছেনা।”
ডিসেম্বর ২০১৮তে এই সার্কুলার কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ঠিক উল্টো |
পরের প্রশ্ন হচ্ছে কুকুর গুলো যাচ্ছে কোথায় ? রুমাকে নিরাপত্তা আধিকারিকরা দু’রকম কথা বলছে। একদল বলছে কলাইকুণ্ডার জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে । অন্য একজন বলছে বলরামপুর সংলগ্ন সদ্য গড়ে ওঠা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। নিরপত্তা আধিকারিকদের বক্তব্য এমন জায়গায় তাদের ছেড়ে দিয়ে আসা হচ্ছে যেখানে তারা নাকি না খেয়ে মারবেনা! কিন্তু বাস্তব ঘটনা এটাই যে অপরিচিত জায়গায় অসুস্থ নিশ্চেতন কুকুর গুলো নিজেদের খাবার যোগাড় করতে পারবেনা এবং যদিও পায় ওই এলাকার কুকুররাই এদের ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবে।
আপনিও বিজ্ঞাপন দিতে পারেন |
জানা গেছে আইআইটি কর্তৃপক্ষর এই পশু নির্যাতন ও অমানবিক আচরন নিয়ে বৃহস্পতিবারই বড়সড় আন্দোলনের মুখে পশুপ্রেমীরা। পাশাপাশি আইআইটির বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামার পথে বরুন পালদের সংগঠন। যদিও গোটা বিষয়টি নিয়ে আইআইটি কর্তৃপক্ষের কোনও মতামত এখনও অবধি পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে আইআইটি রেজিস্টার বি এন সিংকে ফোন করা হলে উনি ফোন ধরেনি।