অশ্লেষা চৌধুরী: ‘ভোটে দাঁড়ালে ডোমজুড় থেকেই দাঁড়াবো।‘প্রজাতন্ত্র দিবসে ডোমজুড়ে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে এই বার্তাই দিলেন রাজীব। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ভোটে দাঁড়ালে ডোমজুড় থেকেই দাঁড়াবো। আমি এখানকার ভূমিপুত্র। এখানকার প্রতিটা মানুষ আমার আত্মীয়। করে কম্মে খাওয়ার জন্য অন্য কোনও জায়গা থেকে দাঁড়াতে হবে এমন অবস্থা আমার নয়। আগামীতে ডোমজুড়ের মানুষ বুঝিয়ে দেবে কে তাদের পরিবারের সদস্য আর কে বাইরের লোক।’
সদ্য ইস্তফা দিয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রীর পদ থেকে। জিইয়ে রেখেছেন পদ্ম শিবিরে যোগদানের জল্পনা। এবার সেই জল্পনায় ইন্ধন দিয়ে এবার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করার সিদ্ধান্ত জানালেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে জানালেন ভোটে লড়লে ডোমজুড় থেকেই প্রার্থী হবেন তিনি। তবে, বিজেপিতে যোগদানের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী।
দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে বিবাদ চলছিল তাঁর। একাধিকবার দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী। কিছুদিন আগেই ফেসবুক লাইভে সুর চড়িয়েছিলেন রাজীব। দলে থেকে কাজ না করতে পারার অভিযোগ তুলেছিলেন। শুধু তাই নয়, শুভেন্দু দল ত্যাগের পর থেকেই বেসুরো বাজতে শুরু করেছিলেন রাজীব। রাজীবের মানভঞ্জনে একাধিক বার তৃণমূল নেতৃত্বরা প্রচেষ্টা চালালেও তা ব্যর্থ হয়। দলীয় বৈঠকে পাঁচ বারের মত গড়হাজির ছিলেন রাজীব। এরপর ১৬ই জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন রাজীব। তিনি বলেন, ‘এখনও ধৈর্যচ্যুতি ঘটেনি। ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছি। আপনাদের জন্য ধৈর্য ধরে রেখেছি’।
এরপরেই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে রাজীব বলেন, ‘দলনেত্রীর আদর্শকে সামনে রেখে মানুষের পাশে থাকার কাজ করছি। নিষ্ঠার সঙ্গে ভাল কাজ করতে গিয়েছি, বাধার কথা জানানোর চেষ্টা করছি। কিছু মানুষ ভুল বুঝিয়ে অন্য পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছেন।‘ সেইসাথেই তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দলের কর্মীদের সম্মানের কথা বলেন। সেই প্রসঙ্গেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যখন দেখা যায় কর্মীদের সম্মান দেওয়া হয় না তখন কিছু বললে অন্যায়?’ এদিন, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুক লাইভে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে একপ্রকার ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘আমার মনের কথা যখন নেতৃত্বকে বলছি, তখন কয়েকজন যখন এটা উল্টোভাবে ভাবার চেষ্টা করছেন, এটাকে অন্যরকম করে ঘোরানোর চেষ্টা করছেন কেউ, কই তাঁদের তো কিছু বলা হচ্ছে না? এটাই আমাকে দুঃখ দেয়। তাহলে যেটুকু বলা হবে, শুধু সেটুকুই করব? নিজের মধ্যে স্বাধীনতা থাকবে না? আমি কী করতে চাইছি, কী বলতে চাইছে, কোনও কিছু বলতে পারব না আমি?
তারপর তার দল বদলের জল্পনা আরও তুঙ্গে ওঠে। অবশেষে শুক্রবার ২২ শে জানুয়ারি বনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন রাজীব। তবে, মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিলেও বিধায়কপদ ও তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদে ইস্তফা দেননি তিনি। এরই মধ্যে রাজীবকে বোঝাতে শাসকশিবিরের এক শীর্ষনেতা তাঁকে ফোন করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন রাজীব।
আগামী ৩১ জানুয়ারি বঙ্গ সফরে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, তাঁর আগেই রাজীব আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ডোমজুড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা, তাঁর দলবদলের জল্পনা যে আরও কয়েকগুন উস্কে দিল, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই বলেই ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।