নিজস্ব সংবাদদাতা: ভাগ্যে রাস্তার ধারে সিসিটিভি ছিল! নইলে কে জানতে পারত এই স্বামীর কথা? মৃত্যুর পরও মানুষের শ্রদ্ধার সাথে সৎকারের অধিকার আছে এই অমানবিক সময় তা যেন ভুলিয়ে দিয়েছে মানুষকে! সেই মানুষ যে আশা করে মৃত্যুর পর তার জন্য রাখা থাকবে যোগ্য সমাধি কিন্তু অসহ্য এই সময়ে সেই মানুষই সরে যাচ্ছে অন্য মৃতের পাশ থেকে! কিন্তু স্বামী হয়ে তা কী করে পারেন তিনি? তাই কাঁধে বয়েই তিন কিলোমিটার দুরে শশ্মানে নিয়ে গেলেন প্রিয়তমার লাশ!
রবিবার হায়দরাবাদের এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আঁতকে উঠেছেন সবাই। জানা গেছে তেলেঙ্গানার কামারেড্ডি রেল স্টেশনের পাশেই বসবাস করতেন ওই নুন আনতে পান্তা ফুরানো দম্পত্তি। মূলতঃ ভিক্ষাই ছিল তাঁদের পেশা। করোনা পরিস্থিতিতে ভিক্ষেও জুটছিলনা আজকাল। তারই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন নাগালক্ষী নামে ওই মহিলা। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য ছিলনা স্বামীর। রবিবারই মৃত্যু হয় মহিলার। স্টেশনের রেলপুলিশের জওয়ানরা আড়াই হাজার টাকা তুলে দেন তাঁর সৎকারের জন্য।
স্ত্রীর মৃত্যুতে শোকে আচ্ছন্ন স্বামী এরপর লাশ নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ান একটি গাড়ির জন্য। কিন্তু এমন সময়েও কাউকে পাশে পাননি তিনি। বারবার দৌড়ে গেছেন অটো, মিনিট্রাক, কোনও একটা গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স নিদেনপক্ষে একটি ভ্যান যোগাড় করতে। কিন্তু কেউই রাজি হয়নি ওই লাশ নিয়ে যেতে। সবাই মনে করেছে করোনায় মারা গেছে ওই মহিলা। এরপর এক সময় অসহায় ওই স্বামী একাই স্ত্রীর লাশ কাঁধে করে নিয়ে ৩ কিলোমিটার পথ হেঁটে শ্মশানে যান। সেখানেই সমাধিস্থ করেন স্ত্রীকে। তখন মনে হয় সত্যি সত্যি করোনাতেই মৃত্যু হত। অন্ততঃ তাহলে রাষ্ট্র দায়িত্ব নিত সে দেহ বইবার!
রাস্তার ধারে থাকা সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে সেই ছবি এবং নিমেষেই মানুষের নিজের ভাইরাল করা মানুষেরই সেই অমানবিক ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে নিমেষে। সেই ভিডিওর সূত্র ধরেই সাংবাদিকরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন এই ঘটনার কথা। এই ঘটনা ফের মনে করে দিয়েছে দানো মাঝির কথা। ২০১৫ সালে ওড়িশার ভবানীপাটনা হাসপাতাল থেকে ১২কিলোমিটার নিজের স্ত্রীর মৃতদেহ বয়ে এনেছিলেন দানো। কাঁধ থেকে বারবার পড়ে যাচ্ছিল দেহ, ফের কাঁধে তুলে নিয়ে রওনা দিচ্ছিলেন। সঙ্গে ১২বছরের মেয়ে! রবিবার নাগালক্ষীর ঘটনা বলে দিল ৫ বছর পরেও মানুষ মানুষ হল কই?