ওয়েব ডেস্ক : ছেলের জন্মদিন পালন করতেই হবে! কিন্তু লকডাউনের মধ্যে তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, একথা স্পষ্ট জানিয়েছিল স্বামী। এই নিয়েই অশান্তির সূত্রপাত। এরপর কয়েকঘন্টার মধ্যেই ঘটে গেল ভয়ঙ্কর ঘটনা। স্বামী-স্ত্রীর বিবাদের জেরে আত্মহত্যা করলেন দুজনেই। পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি, ছেলের জন্মদিন পালন করতে চেয়েছিল স্ত্রী। সেই নিয়েই স্বামীর সাথে তুমুল অশান্তি বাধে দুজনের মধ্যে। মধ্যরাত পর্যন্ত অশান্তি চলার পর শেষ পর্যন্ত দুজনেই আত্মহত্যার পথ বাছেন। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গিয়েছে, মৃত দম্পতি আলিপুরদুয়ার জেলার শামুকতলা থানা এলাকার খলসেমারির বাসিন্দা। বছর ৪০ এর রাজেশ দে ও তাঁর স্ত্রী বছর ৩৫ এর বিজয়া দে এলাকায় সুখী দম্পতি হিসেবেই পরিচিত। এমনকি তাদের মধ্যে সেভাবে দাম্পত্য কলহ লক্ষ্য করেনি এলাকাবাসী। ওই দম্পতির ছেলে স্থানীয় স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। রবিবার তার জন্মদিন। ফলে প্রতি বছরের মতো এবছরও ছেলের জন্মদিন পালনের আবদার করেছিলেন স্ত্রী বিজয়া দেবী। কিন্তু লকডাউনের কারণে একে আর্থিক সমস্যা, তার ওপর এই মূহুর্তে অনুষ্ঠান করলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা প্রবল। ফলে এবছর ছেলের জন্মদিন পালন করতে চাননি রাজেশবাবু। এই নিয়েই দুজনের মধ্যে বচসা বাঁধে৷ একসময় তা চরমে ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সাধারণত তাদের মধ্যে সেভাবে কোনোদিন অশান্তি শোনা যায়নি। তবে এদিন ঝগড়া এতটাই চরম রূপ নিয়েছিল যে গভীর রাতেও ঝগড়ার আওয়াজ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু যেহেতু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার বিষয়, সেকারণে প্রতিবেশীরা বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেননি৷ এরপর একপর্যায়ে গিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন বিজয়াদেবী। সকালে প্রতিবেশীরা বিজয়া দেবীর পোড়া দেহ দেখতে পান। কিন্তু স্ত্রী গায়ে আগুন দিয়েছে কিন্তু স্বামী রাজেশবাবু কোথাও নেই, বিষয়টি দেখে একপর্যায়ে অবাক হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এরই মধ্যেই দেখা যায় বাড়ির পাশের জঙ্গলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন স্বামী রাজেশও। এরপর খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে ২টি দেহই উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে শামুকতলা থানায় পাঠানো হয়।
তবে সামান্য বিষয় নিয়ে বিবাদে জড়ানো এবং ছোট্ট ছেলেটির ভবিষ্যৎ না ভেবেই দম্পতির এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন পদক্ষেপে স্বাভাবিকভাবেই হতবাক আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা। বিজয়াদেবীর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের এতদিনের সম্পর্কে রাজেশ ও বিজয়ার মধ্যে কোনও বিবাদ ছিল না। তবে সামান্য দাম্পত্যকলহে কেন তারা এমন সিদ্ধান্ত নিলেন তাই এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না। সেই সাথে মা বাবা ছাড়া ছোট্ট ছেলেটির ভবিষ্যতই বা কি তা কিছুই ঠাহর করে উঠতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা।