নিজস্ব সংবাদদাতা: দিঘায় নিজের হোটেলেই খুন হলেন এক মালিক। শুক্রবার মধ্যরাতে কিংবা শনিবার ভোর রাতে ৭০ বছর বয়সী ওই হোটেল মালিককে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলেই প্রাথমিক ভাবে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, নিউ দিঘায় অবস্থিত ‘হোটেল সুমন’ নামে ওই হোটেলের মালিকের নাম সুব্রত সরকার। তাঁর বাড়ি হাওড়া জেলার শিবপুরে। গত দশবছরেরও বেশি সময় ধরে এই হোটেল চালাচ্ছেন সুব্রত বাবু। নিজের ছেলে সুমনের নামেই হোটেলের নাম করন করেছিলেন সুব্রত বাবু। শনিবার সকালে হোটেলের কাস্টমার এসেছিল। হোটেল বয় সামনের গেট খুলে দিয়ে মালিক সুব্রতবাবুকে ডাকতে যায়। অনেক ডাকাডাকির পরেও সাড়া না পাওয়ায় আশেপাশের লোকজনকে ডাকেন হোটেল বয়। খবর যায় পুলিশে। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে সুব্রত বাবুর ঘরে প্রবেশ করে দেখে বিছানায় পড়ে রয়েছেন তিনি। তাঁর গলায় একটি দড়ি পেঁচানো রয়েছে।
এরপরই খবর যায় সুব্রত বাবুর হাওড়ার বাড়িতে। সেখান থেকে ছুটে আসেন সুব্রতবাবুর স্ত্রী, পুত্র-পুত্রবধূ সহ আত্মীয় বন্ধু বান্ধবরা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে হোটেলের রিসেপশন লাগোয়া একটি রুমে থাকতেন সুব্রতবাবু। তাঁর পরিবারের সদস্যরাও মাঝে মধ্যে এখানে এসেই থাকতেন। তবে গত ১৫দিন একাই ছিলেন সুব্রতবাবু। পুলিশ দেখতে পেয়েছে সুব্রতবাবুর রুমে একটি স্লাইডিং জানালা আছে। রড বিহীন ওই জানলা দিয়ে অনায়াসেই তাঁর রুমে প্রবেশ করা যায় এবং যেহেতু সামনের দরজা বন্ধ ছিল তাই অনুমান করা হচ্ছে ওই জানলা দিয়েই প্রবেশ করেছিল আততায়ী এবং সেখান দিয়েই বেরিয়ে যায় সে।
আরও জানা গেছে যে লকডাউনের সময় দিঘায় ট্যুরিস্ট কম থাকায় হোটেলে মাত্র ২জন কর্মচারী ছিল। এরমধ্যে ওড়িশাবাসী কর্মচারীটি কয়েকদিন আগেই বাড়ি যায়। বর্তমানে এগরার বাসিন্দা কর্মচারীটি ছিল। সেই শুক্রবার রাতে সুব্রতবাবুকে খেতে দিয়েছিল এবং শনিবার ভোরে খরিদ্দার এলে হোটেলের গেট খুলে দিয়েছিল। এছাড়া হোটেলের নিচের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে পান, সিগারেটের দোকান চালাতেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। এরাই গতকাল শেষবারের জন্য সুব্রতবাবুকে জীবিত অবস্থায় দেখেছিলেন। পুলিশ এঁদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এত্তেলা পাঠানো হয়েছে পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশাবাসী কর্মচারীটিকেও।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সুব্রতবাবুর গলায় দড়ির প্যাঁচ থাকলেও প্রথমে তাকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করা হয় পরে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া হয় অথবা বিপরীতটাও হতে পারে। ঘরের ভেতরে ধস্তাধস্তির চিহ্ন পাওয়া গেছে। আলমারি ভাঙা হয়েছে এবং লুটপাট করা হয়েছে। যা থেকে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে লুটপাটের উদ্দেশ্যেই এই খুন। আশ্চর্য জনক ভাবেই হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার সঙ্গে সংযুক্ত মূল সার্কিট খুলে নেওয়া হয়েছে। যার ফলে আততায়ী বা আততায়ীদের অবস্থান ধরা পড়েনি। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের দু-তিনদিন দিনের মধ্যেই এখানে আসার কথা ছিল এবং তাঁরা আসলে সুব্রতবাবুর বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল।সুব্রত বাবুর স্ত্রী শিখা জানিয়েছেন, ওঁর কোনও শত্রু থাকতে পারে এটা উনি বা আমরা কেউই বিশ্বাস করতে পারতাম না। অত্যন্ত অমায়িক মানুষ ছিলেন আমার স্বামী। কারও সঙ্গে ঝগড়া ঝাটি করতে পারতেননা।
পুলিশের মনে কতগুলো ধাঁধার জায়গা রয়েছে। সুব্রতবাবু হোটেলে একা আছেন এটা আততায়ী জানত। আততায়ী এটাও জানত যে স্লাইডিং জানলা খুলে তাঁর কক্ষে প্রবেশ করা যায়। হত্যাকারী এটাও ভালোভাবে জানত যে সিসিটিভির রিসিভারটি কোথায় রয়েছে যার সার্কিটের সঙ্গে সিসিটিভি ক্যামেরা গুলি সংযুক্ত। আপাতত এই সূত্র ধরেই শুরু হয়েছে তদন্ত। হোটেলের মানচিত্রের সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিচিত যে মানুষটি এরমধ্যে রয়েছে তারই সন্ধানে তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে বলেই পুলিশ মনে করছে।