ওয়েব ডেস্ক : কখনো রোগী ভর্তির সময় মোটা অঙ্কের টাকা জমা না দেওয়ায় চিকিৎসায় অস্বীকার কখনও আবা প্যাথলজি টেস্টের লাগামছাড়া বিল, সবমিলিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী চিকিৎসা করাতে এসে একেবারে নাজেহাল অবস্থা রোগী ও তার পরিবারগুলির। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের বারণ সত্ত্বেও দিনের পর দিন বেসরকারি হাসপাতালগুলির এমন বাড়বাড়ন্তের জেরে ইতিমধ্যেই শহরের বেশ কিছু নামী বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ করেছেন একাধিক রোগী পরিবার। সেই অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে গিয়ে রীতিমতো হতবাক তদন্তকারীরা। একাধিক অভিযোগে বেসরকারি হাসপাতালগুলির লাগামছাড়া বিলের পাশাপাশি প্যাথলজিক্যাল বিল একেবারে আকাশছোঁয়া। এবিষয়ে স্বাস্থ্য কমিশনের তরফে চাপ দিতেই বেসরকারি হাসপাতালের প্যাথলজিগুলির অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা কার্যত স্বীকার করে নেন খোদ চেয়ারম্যানেরই। এরপরই নড়েচড়ে বসেন কমিশন। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হন স্বাস্থ্য কমিশন।
এদিকে কমিশনের তরফে বিল সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়েই হাসপাতালগুলির একের পর এক অসঙ্গতি ধরা পড়ছে। কমিশনের চাপের মুখে পড়ে শেষমেশ অবশ্য কয়েকটি হাসপাতাল টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। এদিকে হাসপাতালগুলির প্যাথলজি টেস্টের বিলও প্রায় আকাশছোঁয়া। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য কমিশনের তরফে ডিসান, মেডিকা, বি পি পোদ্দার, বি এম বিড়লার মতো কলকাতা শহরের প্রথম সারির একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল স্বাস্থ্য কমিশনের তরফে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হয়েছিল। এদিনের বৈঠকে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা দেখতে পেয়েছি ডিসান হাসপাতালে মাত্র ১৯ ঘণ্টা ভর্তি ছিলেন এক ব্যক্তি। ১৯ ঘণ্টায় তাঁর বেড চার্জ নেওয়া হয়েছে ২৬ হাজার টাকা। কেন এত টাকা? প্রশ্ন করাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, দুপুর ১২টার পরে আরেকটি দিন হিসেব করা হয় হোটেলের মতো!” শুধু তাই নয়, তিনি আরও বলেন, ” বেসরকারি হাসপাতালগুলির প্যাথলজিক্যাল বিল দেখতে গিয়ে আমরা চমকে গিয়েছি। অনেক বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে। এক রোগীর অভিযোগের ভিত্তিতেই এটা ধরা পড়েছে ঘটনা। সেই রোগীর পরিবারকে আমরা ৬,৫,৪৬৮ টাকা তা ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছি।”
তবে শুধুমাত্র ডিসান নয় একই অভিযোগ শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য কমিশনের কাছে বি পি পোদ্দার হাসপাতালের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। সেখানে এক ব্যক্তি এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ১৫৯ টাকার একটি বিল নিয়ে অভিযোগ করেছেন। ওই ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের তরফে বিলটি খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখা যায়, করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় সরকারের তরফে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম ভেঙে দেওয়া হলেও সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনেক বেশি চার্জ নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় প্যাথলজিক্যাল বিলের ক্ষেত্রেও ওই একই অবস্থা৷ চার্জ কয়েকগুন বেশী। যদিও এক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে এদিনের বৈঠকে বসেই রোগীকে ৫০,০০০ টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
একই অবস্থা মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল ও বিএম বিড়লা হাসপাতালের। মেডিকার বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে রোগীর বিলে দেখা গিয়েছে, আসলে প্যাথলজি টেস্টের যা চার্জ, তার থেকে কয়েকগুণ বেশি নেওয়া হয়েছে। তবে এ প্রসঙ্গে মেডিকা কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানান, যেহেতু ওই ব্যক্তির বিমা করা ছিল সেহেতু বিমা কোম্পানির সাথে চূড়ান্ত রফা করেই তারা কমিশনকে জানাবেন। এদিকে বি এম বিড়লা হাসপাতালের বিরুদ্ধে গুরুত্বটা আরও মারাত্মক। একব্যক্তিকে রাতে ভর্তি করানোর পর করোনা পরীক্ষা করানোর আগে মারা যান। এদিকে করোনা পরীক্ষা না করা হলেও সেই চার্জটা নিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলির বাড়বাড়ন্ত ক্রমশ যেভাবে বেড়েই চলেছে তাকে স্বাভাবিকভাবেই নাস্তানাবুদ হচ্ছেন রোগী ও রোগী পরিবার।