নিজস্ব সংবাদদাতা: নির্বাচনে লড়তে এসে থাকার জন্য ঘর পাননি তিনি। এমনকি জেতার প্রথম জোটেনি একটা ভাড়া বাড়ি। বাধ্য হয়ে খড়গপুর শহরের একটি ক্লাব থেকেই চলে তাঁর অফিস আর রাত্রিবাস করতে হলে ভরসা একটি আশ্রম। অনেকের মতে শাসকদলের চক্ষুশূল হওয়ার ভয়েই নিজের বিধানসভাক্ষেত্রে তাঁকে ঘর দিতে চাইছেনা কেউ
কিন্তু ঘর না দিলেও তাঁকে ভালোবাসা দিয়েছে খড়গপুর শহর। আর সেই ভালোবাসার জেরেই তিনি পরাজিত করেছেন খড়গপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ সরকারকে। তৃনমূলের তরফে এই পরাজয়ের পেছনে দলীয় অন্তর্ঘাতের অভিযোগ উঠেছে। পরাজিত সরকারকে ফের পুরসভার প্রশাসক বানিয়ে পরাজয়ের ক্ষততে মলম দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। কিন্তু দিনের শেষে জয় হয়েছে হিরনের, জয়ী করেছেন খড়গপুরবাসী। তাই আশ্রমবাসী হয়েও খড়গপুরবাসীর ভালবাসা ফিরিয়ে দিতে আপ্রাণ চেষ্টায় বিধায়ক কাম অভিনেতা হিরন।
মাত্র দেড় বছর আগে যে খড়গপুর শহর পাঁচ হাজারে জেতা দিলীপ ঘোষের আসনে পঁচিশ হাজারে জিতিয়েছিল তৃনমূলের প্রদীপ সরকারকে। আর দেড়বছর পর
নির্বাচনে জিতে বিধায়ক হয়েই খড়গপুর বাসীর সমস্যা সমাধানে নেমে পড়েছেন হিরণ চট্টোপাধ্যায়। খড়গপুর অঞ্চলেই একটি আশ্রমে থাকছেন তিনি এখন। করোনাকালে নিজের বিধানসভা ক্ষেত্রের মানুষের পাশে দাঁড়াতে একের পর এক উদ্যোগ নিয়ে চলেছেন অভিনেতা। এবার তাঁরই উদ্যোগে খড়গপুর রেল হাসপাতালের বেডের সংখ্যা বাড়াল।
নির্বাচনের সময়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে হিরণ বলেছিলেন, “আমি আমার ক্ষমতা আর সাধ্য নিয়ে খড়গপুরবাসীর পাশে দাঁড়াবো। ভোট গননার আগেও তিনি দাঁড়িয়েছিলেন খড়গপুরের পাশে। ব্যতিক্রম হলনা বিধায়ক নির্বাচনের পরেও। বলেছিলেন, রেলের হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে কথাবার্তা বলব। সেই মতো রেলের ডি আর এমের সঙ্গে বৈঠক করে রেল হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৪০ টি বাড়িয়েছেন হিরণ। পাশাপাশি নতুন দুটি অ্যাম্বুলেন্সের বন্দোবস্তও হয়েছে। সেরকমই একটি টুইট করে নিজেই জানালেন বিজেপি বিধায়ক।
ছোট্ট সেই টুইটবার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘সরকারে নেই আমরা। তবু সদিচ্ছা থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। তারই প্রথম পদক্ষেপ খড়গপুর রেলের ডি আর এম সঙ্গে বৈঠক করে,তাঁকে অনুরোধ করে রেল হাসপাতালের বেড সংখ্যা ৪০ বাড়াতে পেরেছি এবং নতুন ২ টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। খড়্গপুরের উন্নয়ন আরও এগিয়ে যেতে চাই। আশীর্বাদ করবেন।’
খড়গপুর শহরের এক বিজেপি নেতা জানালেন, “শাসকদলের বিধায়ক না হলে এ রাজ্যে কাজ করার যথেষ্ট অসুবিধা। খুব বেশি সুবিধা করে ওঠা যায়না। পুলিশ, প্রশাসনের তরফে সর্বত্রই একটি বৈরিতার ভাব লক্ষ্য করা যায়। সরকার নিয়মের বাইরে সাহায্য করেনা, স্থানীয় প্রশাসন পাত্তা দেয়না। পুলিশ কথায় কথায় আইন দেখিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। জেলা প্রশাসন উন্নয়নের বৈঠকে ডাকেইনা। সমান্তরাল প্রশাসন তৈরি করে কাজ করা হয়। তারই মধ্যে হিরন যা করে চলেছেন তা প্রশংসনীয়।” হিরন নিজে একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে কার্যত লকডাউনের মধ্যেই তাঁর পক্ষে যতটা সম্ভব তিনি করছেন বলে জানিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক। তিনি অভিযোগ করেন, খড়গপুরে অনেক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে পানীয় জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লকডাউনের মধ্যে বাইরে বেরিয়ে কাজ করার ‘পাস’ নেই। এই সব বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন হিরণ।
হিরন বলেছেন, আরও হাসপাতালের বেড বাড়ানোর ব্যাপারেও কথাবার্তা বলছেন তিনি। রেলের একটি যক্ষ্মা হাসপাতাল বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। সেখানে একটি সেফ হোম চালু করার চিন্তা ভাবনা করছেন হিরণ। সেই সঙ্গে আইআইটি খড়গপুরের হাসপাতাল আবার চালু করা যায় কিনা সেই বিষয়ে ডিরেক্টরের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন তিনি। কাজ করা কঠিন স্বীকার করে নিয়েও হিরনের বক্তব্য, খড়গপুর আমাকে ভালবাসা দিয়েছে। আমি তার ঋণ শোধ করার জন্য লড়ে যাব। সরকারে নেই ঠিকই কিন্তু খড়গপুরের দরকারে থাকাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।