মহাসপ্তমীর মহা ভোজ সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ মহা সপ্তমী। শারদ উৎসব এবার করোনা প্রটোকলে বাঁধা। বাইরে প্যান্ডেলে নেই জমায়েত, নেই মেলায় বসা ফুচকা, চিকেন পকোড়া। তাতে কি,আসুন বাড়িতে সবাই সাজুগুজু করে নানান রান্না করে ভালোমন্দ খেয়ে মন খুশি রাখি। সাধারণত ষষ্ঠী থেকে অষ্টমী পর্যন্ত বাড়িতে নিরামিষ রান্না হয়.. মাকে ভোগ দেওয়ার জন্য। যদিও সবার বাড়িতে পুজো হয়না, তবুও সেইরীতি মেনে আসুন বানিয়ে ফেলি কিছু নিরামিষ পদ….
#পোলাও #
মায়ের ভোগে পোলাও না হলে চলেনা। ভোগের পোলাও দুই ধরণের হয়.. সাদা পোলাও, র বাসন্তী পোলাও। যে যেমন খুশি মা কে ভোগ দিতে পারেন, বা বাড়ির জন্য রান্না করতে পারেন।সাদা পোলাও মানে বাসমতি চালের ফ্র্যাইড রাইস নয়.. এখানে ব্যবহার করতে হবে বাদশা ভোগ চাল। এই শরৎ হেমন্তের গ্রামের রাস্তায় হাঁটলে মাঠ থেকে ভেসে আসা বাদশা ভোগ চালের অপূর্ব সুগন্ধ মম করে।
পোলাও বানানোর জন্য….
উপকরণ:
বাদশাভোগ চাল(250গ্রাম, 2জনের জন্য), কাজু, কিসমিস, ঘি, গোটা গরম মশলা, তেজপাতা, শুকনোলঙ্কা, আদা,নুন, চিনি।
চাল ভালো করে ধুয়ে,জলে ঝরিয়ে নিন। একটি শুকনো কাপড়ে, বা খবরের কাগজের ওপর 10মিনিট শুকোতে দিন, যাতে চাল ঝরঝরে থাকে। কুকারে বা কড়াই এ যে কোনো ভাবেই পোলাও বানানোর যায়।যে কোনো পাত্রে 2চামচ ঘি দিন, ঘি গলে গেলে, তাতে তেজপাতা, গোটা গরম মসলা, অর্থাৎ গোটা দারচিনি, লবঙ্গ, এলাচ 2থেকে 4টি করেদিন। শুকনো, লাল লংকা দিন।আদা বাটা বা গ্রেড করা আদা সামান্য দিলে স্বাদ ভালো আসে। কাজু, কিসমিস ঘি তে দিয়ে, সাম্যান্য লবন দিন, হালকা ভাজা হলে, চাল ছেড়ে দিন। 2/3মন্ট নাড়াচাড়া করুন। এরপর যত কাপ চাল দিয়েছেন, টার দ্বিগুন কাপ জল গরম করে(অর্থাৎ, এককাপ চাল হলে, 2কাপ জল) দিন। জল সমেত চাল ফুটে উঠলে ঢাকা চাপা দিয়ে দিন। কুকারে এ রান্না করলে, আঁচ কম করে একটা সিটি দেবেন। র কড়াই এ করলে, ঢাকা খুলে দেখুন জল টেনে নিয়েছে কিনা। চাল সেদ্ধ হয়ে জল টেনে নিলে পরিমান মতো চিনি(2কাপ চাল হলে এক কাপ চিনি)ও ঘি দিয়ে গ্যাস অফ করে, পোলাও চাপা দিয়ে দিন। মিনিট 5পর চিনি ও ঘি গলে মিশে যাবে। অপূর্ব সুগন্ধ নিয়ে বাদশা ভোগ চালের সাদা পোলাও তৈরী। বাসন্তী পোলাও বানাতে চাইলে, চাল শুকোতে দেওয়ার সময় হলুদ মাখিয়ে নিন।
#ডাব মালাই ফুলকপি #
ডাব মালাই ফুলকপি একটি অসাধারণ রান্না। বাড়ির বড়ো থেকে বাচ্ছা লুচি বা পোলাও র সাথে মায়ের ভোগ হিসেবে চেটে পুটে খাবে।
উপকরণ:
একটু বড়ো সাইজের ফুলকপি, টোম্যাটো, গন্ধরাজ লেবু,আদা, গোটাজিরে, তেজপাতা, নারকোলের দুধ, ফ্রেশ ক্রিম,পোস্তবাটা, ডাবের মালাই, মধু,নুন,রিফাইন তেল।
প্রণালী:
ফুলকপি একটু বড়ো বড়ো করে কেটে নিয়ে তেলে ভেজে তুলে রাখুন।কড়াই এ তেল দিয়ে, গরম হলে 2টি তেজপাতা, গোটা জিরে, শুকনো লংকা দিন, টোম্যাটো কুচি দিন, তারপর পরিমাণমতো আদাবাটা, লাল গুঁড়ো লংকা, দিয়ে নাড়ুন। আগের থেকে বের করে রাখা নারকোলের দুধ(একবাটি)দিন, 2চামচ পোস্ত বাটা দিন,নুন দিন স্বাদমতো। গ্রেভি ঘন হলে একটু জলে মেশান। এরপর ফুলকপি গুলো ছেড়ে দিন। 4মিনিট ঢাকা দিয়ে অল্প আঁচে রান্না করুন। ফুলকপি সেদ্ধ হয়ে গেলে একচামচ মধু দিন। ডাবের শাঁস সরু সরু করে কেটে ওপর থেকে ছড়িয়ে দিন। সব শেষে গন্ধরাজ লেবুর রস ছড়িয়ে দিন। একটি লেবু পাতা ডেকোরেশন র জন্য দিতে পারেন। স্বাদে গন্ধে অনন্য এই ডাবের মালাই ফুলকপি, ডাবের খোলে সাজিয়ে পরিবেশন করতে পারেন।
##ছানার লুচি##
সপ্তমীর থালি তে ছানার লুচি হলে ডাবফুলকপি র সঙ্গে জমে যাবে। এই লুচি বানানোর জন্য আমাদের লাগবে, ময়দা(200gram), ছানা( 100গ্রাম), ময়েন র জন্য ঘি. মায়ের ভোগের জন্য বানালে লবন দেবেন না। সমস্ত উপকরণ গুলি মেখে নিন. জল দেবেন না। মাখা হয়ে গেলে 10মিনিটে চাপা দিয়ে রাখুন। তারপর বেলে নিয়ে ঘি বা রিফাইন তেলে ভাজুন।
**পনির পকোড়া**
একটু ভাজা না হলে ভালো লাগেনা। তাই বেগুন ভাজা, কুড়কুড়ে আলু ভাজা যায় করুন না কেন, পনির পকোডার স্বাদ ই আলাদা।
পনির কে লম্বা পিস পিস করে কেটে নিন। একটা বোল এ বেসন বা ময়দা দিন, সামান্য কর্নফ্লাওয়ার, নুন, গুঁড়ো লঙ্কা দিন। কালোজিরে ও দিতে পারেন।
কড়াই এ তেল গরম হলে, পনির ব্যাটারে ডুবিয়া বাদামি করে ভেজে তুলে নিন।
আশাকরি সপ্তমীর সকালটা মায়ের ভোগের থালি জমে যাবে। বাড়ির সকলে মিলে হৈহৈ করে পরিবেশন করে পুজোর রান্নার স্বাদ নিন।