মহালক্ষীর মহাভোগ অদিতি রায় বর্মন পাঠক
আজ কোজাগরী পূর্ণিমা। আজকের দিনে পূজিত হন মা লক্ষ্মী।মা লক্ষ্মী হলেন সমৃদ্ধির দেবী। হেমন্তের হাত ধরে গ্রামে গঞ্জে এখন ফসল তোলার সময়।ঘরে ঘরে নতুন, ধান, চাল দিয়ে পূজিত হন মা লক্ষ্মী। কোজাগরী অর্থাৎ কে জাগো রে…. অর্থাৎ যে রাত জেগে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করবেন, তিনি ই সমৃদ্ধ হবেন। যেহেতু এখন নানান ফসল ঘরে আসে, তাই মা লক্ষ্মী র রকমারি ভোগ দেওয়া হয়।
মা র ভোগে খিচুড়ি, লাবড়া, বেগুনি সহ পাঁচ রকম ভাজার সাথে নানান রকম ফল প্রসাদ, নারকোল নাড়ু, খৈ, মুড়কি, তিলনাডু আর নৈবেদ্য দিয়ে ই পুজো সম্পন্ন হয়। পুজো তো সেই সন্ধেয়, আসুন দুপুর বেলায় মার পুজোর সমস্ত আয়োজন সেরে ফেলি।
#খিচুড়ি ভোগ #
সবার ধারণা, খিচুড়ি সবচাইতে সহজ, আর উপাদেয়.. তাই, এটি রান্না করাও সহজ। তবে মা লক্ষ্মীর ভোগ বলে কথা, তাই স্বাদ গন্ধ আলাদা হবে, এটাই কাম্য। তাই আজ নাহয় একটু স্পেশাল করেই করলেন।সাধারণত ভোগের খিচুড়ি একপাকেই হয়। আসুন, উপকরণ গুলো আগে জোগাড় করে নিই।
উপকরণ:বাদশাভোগ চাল(500গ্রাম), সোনা মুগডাল(500),নারকোল কুচো,ঘি, সর্ষে র তেল, হলুদ,আদা গোটা জিরে,জিরে গুঁড়ো, ধোনে গুঁড়ো, গোটা গরম মশলা, গুঁড়ো গরমমশলা,তেজপাতা,লাল শুকনো লঙ্কা, নুন, চিনি। প্রণালী: চাল ও ডাল সমপরিমাণ নিয়ে আলাদা করে ধুয়ে রাখবো। সোনামুগের ডাল ধোয়ার আগে শুকনো কড়াই এ নেড়ে নেবো, তাতে ডাল তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হবে। কড়াই টে একচামচ ঘি দিন. তাতে 1টি তেজপাতা, 2টি এলাচ, একটু দারচিনি দিন।নারকোল কোরা বা নারকোলকুচো দিন। হালকা ভেজে তুলে রাখুন। খিচুড়ি সর্ষের তেলেই ভালো হয়। তাই কড়াইতে 2/3চামচ সর্ষের তেল দিন, তাতে 3/4টি তেজপাতা, গোটা জিরে, 3তে শুকনো লঙ্কা দিন। এই ফোড়ন গুলি ভাজা হলে,বড়ো চামচের একচামচ হলুদ গুঁড়ো, ছোটো চামচের 3চামচ ধোনে গুঁড়ো, 2ছোট চামচ জিরে গুঁড়ো, আন্দাজ মতো আদা বাটা দিয়ে, ভেজে নিন।
এরপর ভেজে, ধুয়ে নেওয়া সোনা মুগডাল দিয়ে দিন। ভালো করে মশলা র সাথে ভেজে নিন। তারপর ধুয়ে রাখা চাল দিন ভালোভাবে ডাল ও মশলা র সাথে মিশে যাওয়ার পর জল ঢেলে দিন। এই এক কেজি চাল ডালের খিচুড়ি তে দেড় লিটার মতো জল দিন। আন্দাজ মতো নুন দিন। 10মিনিট ফোটার পর গুঁড়ো গরম মশলা দিন। মাঝে মাঝে নেড়ে নেবেন, নাহলে তালাটা ধরে যেতে পারে। এরপর ভেজে রাখা নারকোল কুচি দিন. সবশেষে 2চামচ ঘি ও 1/2চামচ চিনিদিয়ে ঢাকা দিয়ে, গ্যাস ওভেন অফ করে দিন।দেখবেন ঘি সহযোগে বাদশা ভোগ চালের খিচুড়ি র ভোগের গন্ধ ই আলাদা। চাইলে সবুজ মটর ও কাঁচা লংকা দিতে পারেন।
খিচুড়ির সাথে লাবড়া র বন্ধন বড়োই মজবুত। একে অন্য কে ছাড়া মানায়না। তাই আসুন, সমস্ত রকম সব্জি কে সুন্দর করে কেটে নিয়ে শুরু করি আজকের লাবড়া রান্না।
***লাবড়া***
উপকরণ:
ডুমো করে কাটা আলু,কুমড়ো,বেগুন,মুখী কচু, মুলো,ঝিঙে,থোর, বাঁধা কপির পাতা,বরবটি,অল্প ঢেঁড়স, নারকেল কোরা,কাচা বাদাম,পাঁচ ফোড়ন,নুন হলুদ,চিনি,শুকনো লঙ্কা,কাচা লঙ্কা,জিরে ধনে বাটা
প্রণালী
অল্প তেলে পাঁচ ফোড়ন,শুকনো লঙ্কা,কাচা লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে,বাদাম আর নারকেল কোরা ভেজে নিতে হবে,তারপর একে একে ধুয়ে রাখা সব সবজি দিয়ে নুন হলুদ দিয়ে নেড়ে চেড়ে ধনে জিরে বাটা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।ধিমে আঁচ এ পুরো রান্না টা হবে মাঝে মাঝে দেখতে হবে যাতে লেগে না যায় মনে রাখতে হবে এই রান্না সবজির জল এই হবে কোনো বাইরে থেকে জল দিতে হবে না সেদ্ধ করতে।শেষে ভাজা মসলা দিয়ে পরিবেশন করুন।
লাবড়া রান্না হয়ে গেলে, পছন্দ মতোপাঁচ রকম ভাজা সেরে ফেলুন।
#নৈবেদ্য #
লক্ষ্মীপুজোর অন্যতম আকর্ষণ হলো নৈবেদ্য। নানান রকম ফল, নাড়ু পুজোয় দেওয়া হলেও উপোস করে অঞ্জলি দিয়ে নৈবেদ্য মুখে দেওয়ার ই রীতি এই পুজোর। নৈবেদ্য দুরকম ভাবে করা যায়।
**চালের নৈবেদ্য**
দানার গুঁড়ি চাল,(চাল ধুয়ে অল্প সময় ভিজিয়ে রাখুন),পাকা কলা, নারকোল করা, চিনি দিয়ে মেখে নিন। চাইলে কাজু, কিসমিস ও চেরি দিয়ে সাজাতে পারেন।
**সোনা মুগ ডালের নৈবেদ্য***
সোনা মুগডাল ভালো করে ধুয়ে কয়েক ঘন্টা আগে ভিজিয়ে রাখুন। ডাল নরম হলে তাতে নারকোল কোরা, চিনি দিন। কিসমিস ও চেরি দিতে পারেন
আগেই বলেছি, দেবী লক্ষ্মী হলেন সমৃদ্ধির দেবী। কাজেই ওনার প্রসাদের সমৃদ্ধি ও কম হয়না। তাই যতটা মন চাইবে, শরীর ঠিক রেখে করতে পারবেন ভালো। সন্ধ্যে বেলায় মা র সমস্ত আয়োজন সারা হলে পুজোয় বসুন। পুজো সম্পন্ন হলে সবাই কে প্রাসাদ পরিবেশন করুন।দেখবেন,সবাই তৃপ্তি করে আজকের ভোগ খেয়ে আপনার সুখ্যাতি করবেনই। সম্পাদন ও সংযোজন: সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়