নিজস্ব সংবাদদাতা: বুধবারই দ্য খড়গপুর পোষ্ট আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল কমলা সতর্কতার মধ্যে রয়েছে খড়গপুর ও মেদিনীপুর। ২৮তারিখ রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হওয়ার কথা এবং যা চলবে বৃহস্পতি, শুক্রবার এমনকি শনিবার অবধি। আবহাওয়া দপ্তরের সেই পূর্বাভাস মিলিয়েই যেন আকাশভাঙা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আর বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া একটানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত খড়গপুর ও মেদিনীপুর শহর। নামে সিটি কিন্তু দেখলে মনে হবে খড়গপুর শহর যেন এঁদো গ্রামেরও অধম। গোটা শহর জুড়ে নিকাশি ব্যবস্থার বএিপর্যয়ে রাস্তার নর্দমা উঠে এসেছে মানুষের ঘরের উঠোনে। শহরের প্রধান সড়ক গুলো কোথাও কোথাও এক হাঁটু জলের তলায়। উত্তরে ইন্দা এলাকার বিদ্যাসাগরপুর, নিউ টাউন,আনন্দনগর, রামকৃষ্ণপল্লী, সারদাপল্লী থেকে শুরু করে বামুন পাড়া অবধি জলে থইথই করছে। দক্ষিণে দীনেশনগর, রবীন্দ্রপল্লী, তালবাগিচার বিস্তীর্ণ এলাকায় বাড়ির ভেতরে জল ঢুকে পড়েছে। মানুষকে দেখা যাচ্ছে কোদাল নিয়ে বাড়ির সামনে থেকে জমা জল সরাতে ব্যস্ত।
শহরের পশ্চিম দিকে খরিদা মালঞ্চ এলাকায় অবস্থা একই রকম। বিধানপল্লী, শ্রীকৃষ্ণপুর, কুমারপাড়া থেকে দুর্গামন্দির সংলগ্ন পুরো এলাকার রাস্তাঘাট জলের তলায়। খরিদা লেভেলক্রসিং পুরোপুরি জলের তলায়। হাঁটু জল পেরিয়ে মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। নিমপুরার আরামবাটি, দেওয়ানমাড়ো এলাকা পুরোটাই যেন জলের তলায়।
এদিকে ঝুলি, ঝাপেটাপুর, ছোটট্যাংরা, বুলবুলচটি হয়ে কৌশল্যায় রাস্তায় বেরুনোই দায় হয়ে পড়েছে। ছোটট্যাংরা কালী মন্দির থেকে খড়গপুর পুরসভা যাওয়ার প্রধানসড়কেই জলের স্রোত বইছে। গোটা শহরটাকেই যেন গ্রাস করেছে মস্ত একটা পুকুর। সুভাষপল্লী, ভবানীপুর, পাঁচবেড়িয়া, মাঠপাড়ার ঘরে ঘরে জল ঢুকে বসে রয়েছে। কার ঘরের জল কোথা দিয়ে বের করা হবে মানুষ বুঝতে পারছেনা।
একই অবস্থা মেদিনীপুর পুরসভা এলাকায়। ধর্মা রামকৃষ্ণ নগর থেকে হবিবপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা কার্যত জলের তলায়। কালগাঙ এলাকার জল উপচে পড়ে বিপর্যস্ত নজরগঞ্জের নিচু এলাকা থেকে শুরু করে নরমপুর মৌজা ও অরবিন্দনগরের একাংশ। জলের প্রবল স্রোত ছাড় দেয়নি শরৎপল্লী, বিধাননগরের মত অভিজাত এলাকাকেও। দক্ষিণপাড়া থেকে শুরু করে দ্বারিবাঁধ হয়ে ভীমতলা কিংবা নিমতলা চক যাওয়ার উপায় নেই, পুরো রাস্তাই জলের তলায়। কাঁতকালি থেকে কালিতেলির চক কিংবা পালবাড়ি থেকে পাটনাবাজার জায়গায় জায়গায় জমা জলে দুর্ভোগে নগরবাসী। জলজমেছে কেরানিতলা, হাসপাতাল মোড়, এলআইসি চক,গান্ধীমোড়েও। সব মিলিয়ে চরম দুর্দশার কবলে মেদিনীপুর শহরবাসীও।
আর এই মারত্নক বিপর্যয়ের মধ্যে কোথাও দেখা মিলছেনা স্থানীয় পৌর প্রশাসনের এমনটাই অভিযোগ করেছেন মানুষ। গত কয়েকবছর ধরেই শহররের নিকাশি ব্যবস্থার কোনো সংস্কার হয়নি। নির্বাচিত পৌরবোর্ডের বদলে রাজ্যের সমস্ত পৌর এলাকায় এখন শাসকদলের লোকেরাই প্রশাসক হয়ে বসে রয়েছেন। নিয়ম মাফিক বোর্ড মিটিংয়ে পৌরসভার জন্য বরাদ্দ অর্থ কোনও রকম ভাগ বন্টনের বাইরে কোনো পরিকল্পনাই নেওয়া হচ্ছেনা। বর্ষার আগে শহরের পাকা ও মহানালা গুলি পরিষ্কার ও কাঁচানালাগুলি চওড়া করার যে উদ্যোগ পুর কাউন্সিলররা নিয়ে থাকতেন তার কোনওটাই এখন নেওয়া হয়না। সবচেয়ে বড় কথা এবার ৪৮ঘন্টা আগেই আবহাওয়া দপ্তর কমলা সতর্কতা জারি করে বলেই ছিল যে দু’দিন টানা ভারি থেকে অতি ভারী বর্ষনে ভাসবে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। দ্য খড়গপুর পোষ্ট ও প্রকাশ করেছিল যে খড়গপুর মেদিনীপুরে ব্যাপক বৃষ্টি হতে চলছে কিন্তু কোনও হেলদোল ছিলনা পৌরসভার, ছিলনা কোনও পরিকল্পনা। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।
সমস্যা হল ভারী বর্ষনের বিপদ কেটে যায়নি এখনও। আগামী শনিবার অবধি চলতে পারে এই বৃষ্টি। খবর পাওয়া গেছে উত্তরবঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হওয়া নিম্নচাপটি আরও শক্তি অর্জন করে বাংলাদেশ থেকে কলকাতা, হলদিয়ার ওপর দিয়ে ঝাড়খন্ড অভিমুখে যাচ্ছে। তার জেরে ১২ঘন্টারও বেশি বৃষ্টি হচ্ছে হলদিয়া সহ উপকূলীয় এলাকায়। সেই নিম্নচাপ খড়গপুরের ঘাড়ে এসে পড়লে অবস্থা যে আরও জটিল হবে সেকথা বলাই বাহুল্য। অসহায় মানুষের এখন নিজের হাতই ভরসা।