নিজস্ব সংবাদদাতা: লন্ডনে যাচ্ছেন ৭৭বছরের দুখুশ্যাম চিত্রকর আর নিয়ে যাচ্ছেন ১৬০০বছরেরও আগে পিটার মাণ্ডির কাহিনী নিয়ে পটের গান নিয়ে। শোনার পর চকদ্বীপার চায়ের আড্ডায় অনেকেরই ভাঁড় থেকে চা চলকে পড়ল যেন। কারও ভাঁড়েই থমকে গেল ৬হাজার টাকা কেজির ওলং টি। সোমবার হলদিয়া টি ফেস্টিভ্যালে ওলং ‘টি’য়ে আড্ডা শুরু হলেও ক্লাশ ওয়ান অবধি পড়া দুখুশ্যাম চিত্রকর চা নিয়ে পটের গানটা শুরু করেছিলেন প্রথম দিনই অর্থাৎ রবিবার, ১৫ই ডিসেম্বর।
চতুর্থ বর্ষ হলদিয়া টি ফেস্টিভ্যালে সান্ধ্য আড্ডায় ছিল হোয়াইটি দিয়ে। প্রমান সাইজের চিত্রায়িত মাটির ভাঁড়ের ২ ভাঁড় চা সহযোগে প্রাক্তন সাংসদ লক্ষন শেঠ দুখুশ্যামের গান শুনতে শুনতেই চার খানা গরম বেগুনি খেয়ে নিয়েছেন। সারি সারি সুপারি আর পামগাছের ফাঁকে ফাঁকে নিজের দলের ছেলে মেয়েদের গুঁজে দিয়েছে ‘লক্ষ্যা পদাতিক। ‘ চায়ের টেবিল সাজিয়ে আট হাজারি হোয়াইট টি র ধুমায়িত সন্ধ্যায় আড্ডাবাজ চা প্রেমীদের মধ্যেই মিশে নাটকের কুশীলবরা পরিবেশন করলেন বিদ্যাসাগরকে তাঁদের সাম্প্রতিক প্রযোজনা।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
মানুষজন আসছেন যাচ্ছেন, মুক্তমঞ্চে চলছে চায়ের ভাঁড় হাতে শিল্প সাহিত্য বিজ্ঞান নিয়ে আড্ডা। কখনও গুরুগম্ভীর আবার কখনও স্রেফ খেয়ালি আড্ডা। কখনও কখনও নাচ গান কবিতা। লেখা না লেখার কথাও। ওদিকে কেউ কেউ চায়ের ভাঁড়ারে উঁকি দিয়ে দেখছেন গ্রীন টি , ব্ল্যাক টি , তন্দুর চা , মশালা চায়ের চালবাজি। একেক ধাপে একেক রকম চা।
১৫ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক চা দিবস কিন্তু তাকে এমন দু-দিনের নির্ভেজাল আড্ডায় পরিনত করা যায় যেখানে শুধুই চায়ের টানে তৃনমূল সিপিএম বিজেপি কংগ্রেস শাসক বিরোধি এক ঘাটে চা খায়! তেমনটা করে দেখালো বটে কমল বিষয়ী, শ্যামল সেন, আশিস মিশ্র, ত্রুপ্তিময়রা। চা চক্রের এই নির্ভেজাল আড্ডার মাঝেই রং আর তুলি নিয়ে ‘ফ্রি উইংস’য়ের সদস্যারা কচি কাঁচা সমেত আরও মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে ভাঁড়ের গায়ে এঁকে চলেছেন নানা চিত্রকল্প। চা উৎসবে আসা প্রতিটি মানু্ষের হাতে সেই চিত্রিত ভাঁড় তুলে দেওয়া হচ্ছে একটি করে। উদ্দেশ্য ভাঁড়কে জনপ্রিয় করে তোলা।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
দুখুশ্যাম সহ আরও অনেকের মতই এই উৎসবের পাওয়া ডিঘাসিপুরের সুকুমার মাজিকে পাওয়া। যন্ত্র বিহীন তাঁর উদাত্ত কণ্ঠ সবার মনে গেঁথে দিয়ে গেছে রবীন্দ্রনাথকে। গানে মাতিয়েছেন শিশিরবিন্দু মেখলারাও। উল্টোদিকেই চকদ্বীপা উচ্চমাধ্যমিক স্কুল। সোমবার মুক্তমঞ্চে হাজির দিদিমণি মাস্টারমশাইরা। মত এবং অমত বিনিময়ে চায়ের চুমুকে তুফান উঠল আরও একবার।
আবার সেই দুখুশ্যামে ফেরা। সোমবার সকাল ১০টা গড়িয়ে মঞ্চে দুখুশ্যাম চিত্রকর সঙ্গে মর্জিনা বৌদি। ইতালি অষ্ট্রেলিয়া সফরের পর সামনেই ঢাকা সফরে যাবেন পট সম্রাট। আর তারপরই লন্ডন সফর। লন্ডনে পিটার মাণ্ডির ওপর পট ও পটের গান নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর জন্য চলছে নিরন্তর গবেষনা। সেই কথা যখন বলছেন তখন ভাঁড়ের চা চলকে ওঠাই অনিবার্য।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
চা চক্র তখন খুঁজছে কে এই পিটার মাণ্ডি? সপ্তদশ শতকের এই বৃটিশ ব্যবসায়ী তথা পর্যটক এর আগে ঘুরে এসছেন বুলগেরিয়া , সারাজেভো, ভেনিস সহ একাধিক ইওরোপিয় দেশ। তারপর ২৫পাউন্ড মাস মাইনেতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হয়ে সুরাট আগ্রা হয়ে শাজাহানের দরবারে। মাঝখানে ঘুরে গেলেন সুবা বাংলার সীমান্ত পট্টনা বা পাটনা। না ইতিহাস তখনও রচনা হয়নি। ইতিহাস রচনা হল আরও পরে ১৬৩৬য়ের এপ্রিল মাসে পিটারের চীন ও জাপান যাত্রায়। ভারতে ফিরে আসার পিটার জানালেন পৃথিবীকে চমকে দেওয়া একটি বিশেষ গাছের পাতা এনেছেন তিনি যার নাম ‘চা।’
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
শ্যামল সেন আর ভাস্করব্রত পতি চকদ্বীপার বিষয়ীদের বাগানে এই চা উৎসবে দুখুশ্যামকে এনে জানিয়ে দিলেন চা চীনে তৈরি এবং বৃটিশরা তাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিল বটে কিন্ত তা দেওয়া হয়েছিল এই ভারতের বুক থেকেই। আর আরেক ভারতীয় ক্লাশ ওয়ানেই শিক্ষা শেষ করা দুখুশ্যাম লন্ডনকে সেই চায়ের গল্প শোনাতে যাচ্ছেন!
সোমবার হলদিয়া টি ফেস্টিভ্যালের মুক্তমঞ্চে তাই ইতিহাস হয়ে থাকার জন্য উঠে এল পুরো আড্ডাটাই। উপস্থিত সবাই মিলে দুখুশ্যাম চিত্রকরের সঙ্গে একটা ছবি নেওয়ার জন্য।