নিজস্ব সংবাদদাতা: নির্বাচন এখনও কিছুটা দূরে কিন্তু রাজনৈতিক শক্তি পরীক্ষায় বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের দুই শহরে রাস্তায় নামছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে এখানে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শাসকদলের অভ্যন্তরেই, আড়াআড়ি বিভাজনে। এখানে সম্মুখ সমরে নেই বিজেপি, নেই সিপিএম! আছে তৃনমূল আর আছে তৃনমূলেরই অন্দরে থাকা শুভেন্দু অধিকারী অনুগামীরা। খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিজের গড় পূর্ব মেদিনীপুরে আজ ‘দুধ কা দুধ আর পানি কা পানি’ বুঝে নেবেন সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া মন্ত্রী শুভেন্দু। অন্যদিকে শুভেন্দুরই কাঁধে ভর করে গড়ে ওঠা পূর্ব মেদিনীপুরে গাছপালা আর ফুলেফলে ভরে ওঠা তৃনমূল কংগ্রেস শুভেন্দু বিচ্ছিন্ন হয়ে কত গাছ আর কত ফুল ধরে রাখতে পারে তারও পরীক্ষা বৃহস্পতিবারই।
বৃহস্পতিবার শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর ১৩১তম জন্মদিন। গত ২৯শে নভেম্বর পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী রনজিৎ কুমার বয়ালের স্মরণ সভায় এই দিনটিতে তমলুকে শহীদের মূর্তিতে মাল্যাদানের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন শুভেন্দু। এই কর্মসূচিকে ঘিরেই তাঁর অনুগামীদের মধ্যে উন্মাদনা প্রবল। কারন শুধুই ওই কর্মসূচি নয়, অরাজনৈতিক এই অনুষ্ঠানের কেন্দ্র করেই শুভেন্দু অনুগামীরা তাঁদের শক্তি পরীক্ষা দিতে জেলা সদর তমলুকের পাশাপাশি বেছে নিয়েছেন শিল্প শহর হলদিয়াকে। যে হলদিয়াতে গত ২৯শে নভেম্বর যুব তৃনমূলের ডাকে বিশাল পদযাত্রা ও সমাবেশ হয়েছে। সেই সমাবেশ আবার ছিল শুভেন্দুর মহিষাদলের সেই স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্মরণসভার পাল্টা, এমনটাই অভিমত রাজনীতিকদের।
বৃহস্পতিবার হলদিয়ায় শহিদ ক্ষুদিরাম স্মরণে শুভেন্দু অনুগামীরা ঠিক সেই পথেই পদযাত্রা করতে চলেছে যে পথে ২৯তারিখ যুব কংগ্রেস পদযাত্রা করেছিল অর্থাৎ কদমতলা থেকে সিটিসেন্টার। ঠিক সেখানেই সমাবেশ করতে চলেছেন যেখানে যুব কংগ্রেসের ওই দিনের সমাবেশে হাজির ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুজিত বসু। খুব স্বাভাবিক ভাবেই রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা শুভেন্দু অনুগামীদের এই কর্মসূচিকে অরাজনীতির আড়ালে রাজনৈতিক শক্তি পরীক্ষা বলেই মনে করছেন।
ঘটনা যদি এখানেই থেমে থাকত তা’হলে এটা নেহাৎই একটা শোধবোধের পাল্টা খেলার মতই হতে পারত কিন্তু ঘটনা তা হয়নি বরং যা হতে চলেছে তা যেন মধ্যযুগীয় ইউরোপের ডুয়েল লড়াইয়ের মতই। এই একইদিনে একই সময়ে একই রাস্তায় পাল্টা পদযাত্রায় নামছে তৃনমূল অবশ্য সেটাও শহিদ ক্ষুদিরামের নামেই। শুভেন্দু অনুগামীরা বেলা ২টায় যখন কদমতলা মোড় থেকে সিটিসেন্টারের পথে রওনা দেবেন তখন ওই একই সময়ে সিটি সেন্টার থেকে কদমতলার পথে হাঁটবেন তৃনমূল কর্মী সমর্থকরা। শুভেন্দু অনুগামীদের সিটি সেন্টারের পাল্টা সভা তৃনমূল করবে কদমতলায়। স্বাভাবিক ভাবেই এই ডুয়েলকে কেন্দ্র করে সাজো সাজো উভয় শিবিরে।
এখন তার থেকেও বেশি অবশ্য সাজো সাজো রব পুলিশ কর্তাদের মধ্যে। যদিও দুটি বিভাজিত লেন দিয়ে দুই বিপরীত শক্তি হাঁটবে কিন্তু বড় কাছাকাছি কিন্তু মনের মধ্যে মারাত্মক বৈরিতা বহন করবে হাঁটবে দু’দলই। পুলিশকে এই কর্মসূচি নির্ঝঞ্ঝাট করার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। পরিস্থিতি যাতে কোনোভাবেই উত্তপ্ত এবং অশান্ত, হিংসাশ্রয়ী না হয়ে পড়ে তার জন্য বিপুল প্রস্তুতি নিয়ে তৈরি হলদিয়া পুলিশ। পাশাপাশি জেলা সদর তমলুকেও শুভেন্দুর পাল্টা কর্মসূচি নিয়েছে তৃনমূল। স্বাভাবিক ভাবেই আজ সারা রাজ্যের রাজনৈতিক শক্তিগুলি আজ পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া আর তমলুকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।