নিজস্ব সংবাদদাতা: তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে মমতা ব্যানার্জী আর শুভেন্দু অধিকারীরই ছবি। ছবি আছে শিশির কিংবা দিব্যেন্দু অধিকারীর কিন্তু অভিষেক ব্যানার্জী বা অন্য কোনও তৃনমূল নেতার ছবি মিলবেনা। পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না বিধানসভা ক্ষেত্রের চিকিৎসক বিধায়ক তরুণ তুর্কি নেতা সংগ্রামজিৎ দলুই এবার বিদ্রোহে ফেটে পড়লেন। জানিয়ে দিলেন মমতা ব্যানার্জীর পর শুভেন্দু অধিকারীই একমাত্র নেতা যিনি দলের দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্য।
তৃণমূলে শুভেন্দু অধিকারীকে কোণঠাসা করা ও যোগ্য সম্মান না দেওয়ার বিরুদ্ধে এত দিন সোসাল মিডিয়া ও দলের কর্মীদের একাংশের মধ্য ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছিল। এবার দলের তরুন মুখ সংগ্রামজিৎ জানিয়েই দিলেন, “দলে দায়িত্ব পাওয়া উচিত ছিল পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর।” দলনেত্রীর পর ‘দলে দ্বিতীয় ব্যক্তি’ যে শুভেন্দু তা জোরের সঙ্গে বলেছেন এই তৃণমূল বিধায়ক।
২০২১য়ের আগে রদবদল শুরু হয়েছে তৃণমূলে। অনেকের মতে দলের পরতে পরতে থাকা শুভেন্দু অনুগামীদের বিসর্জন দিয়ে শুরু হয়েছে অভিষেক প্রতিষ্ঠার। তেমনই এক প্রক্রিয়ায় সদ্য সরানো হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার যুব সভাপতি সংগ্রামজিৎ কেও। সংগ্রামজিৎয়ের অভিযোগ তাঁকে না বলে জেলার যুব সভাপতি পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘনিষ্ট মহলে সংগ্রামজিৎ জানিয়েছেন, ”২৩শে জুলাই মমতা ব্যানার্জী যে রদবদল ঘটিয়েছিলেন সেখানে তাঁকে সরানো হলনা! অনেক পরে তাঁকে সরানো হল। এটাতেই পরিস্কার যে, মমতা ব্যানার্জীকে এড়িয়ে কাজ চলছে দলে। পরিবর্তে যাকে সভাপতি করা হল তাকে দলের সাধারণ যুবরা চেনেইনা। অর্থাৎ দলে এখন যোগ্যতর নয় জোহুজুর চাওয়া হচ্ছে।”
এক সময় শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, মমতা ব্যানার্জী ছাড়া কারও নেতৃত্বে কাজ করবনা আর
ময়নার বিধায়ক বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীকে দেখে রাজনীতি করি। অন্য কাউকে দেখে নয়। সেই জায়গায় তৃণমূল করছি বা করব। এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ঠিক নয়। পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ জানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর দ্বিতীয় ব্যক্তি, বিশ্বস্ত সৈনিক হিসাবে পাহাড়-জঙ্গলে কাজ করে থাকেন শুভেন্দু। তাঁকে অবশ্যই যোগ্য সম্মান দেওয়া উচিত। সেই অর্থে তা পায়নি। মানুষ তাতে ক্ষুব্ধ হচ্ছে। খারপ লাগছে। এসব থেকে মনে হয়েছে, শুভেন্দুবাবুর কাজের দায়িত্ব বাড়ানো দরকার।”
তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন কমিটিতে পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি জেলার দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। একসময় দলের রাজ্য যুব সভাপতি থাকায় সারা বাংলায় তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। তাছাড়া এবারে দলের সর্বোচ্চ ৭ জনের কমিটির সদস্য সহ তিনটে কমিটিতে তিনি রয়েছেন। তবে একক কোনও দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয়নি। এমনকী ২১ জনের সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠকে তিনি হাজির হননি। হাজির না থাকার কারণ যাই হোক সেই নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে তৃণমূলে।
সংগ্রাম দলুইয়ের কথায়, “অন্যদের মতো আমারও খারাপ লেগেছে। দলে থেকেও সেভাবে পদ পায়নি। ম্যাডাম নিশ্চয় তাঁকে যোগ্য সম্মান দেবে। শুভেন্দুবাবু কী সিদ্ধান্ত নেবে সেটা তাঁর ব্যাপার”, এমন মন্তব্য করে বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন সংগ্রাম দলুই। তিনি আরও বলছেন, “আমার একার কথার কী মূল্য আছে? সবাই বলুক।” তবে এ বিষয়ে একেবারেই নীরব নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী।
যদিও নীরব থাকেননি শুভেন্দু শিষ্য চিকিৎসক সংগ্রামজিৎ। তিনি বলেন, “আমাকে বলে পরিবর্তন করতে পারত। মনে হচ্ছে যে আমাকে লাথি মেরে সরিয়ে দিল। এটা বাজে দেখায় না? লজ্জা লাগে না? পদ লাগবে না, তবে আগে থেকে দল বলতেই পারত।” বলাবাহুল্য বিদ্রোহের পদধ্বনী শোনা যাচ্ছে তাঁর গলায়। তৃণমূলের অন্দরে এমনিতেই হাওয়া উঠছে যে নভেম্বর ডিসেম্বরে আড়াআড়ি ভাঙতে চলেছে দল। তার চার পাঁচ মাস আগেই সংগ্রামজিতের গলায় যে সুর শোনা গেল তা বুঝিয়ে দিল ঝড় আসতে বোধহয় আর দেরি নেই।